সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে বসে আছি।আমি আর ও।আমরা দুজন।বেশ কিছুক্ষন হল এসেছি।আমি আগে।ও পরে।সেই থেকে চুপচাপ।কারো মুখে কোন কথা নেই।কিংবা শেষ বারের মত কথা না বলা নীরবতা উপভোগ করার চেষ্টা করছি দুজনই।
প্রথম মুখ খুললো ও।
-আসতে সমস্যা হয়নি তো?
-নাহ।
টঙ্গীতে এক ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকার কথা বেমালুম এড়িয়ে গেলাম।
-বের হবার আগে কিছু খেয়ে এসেছিলে?
-হুঁ
-মিথ্যে কথা।তুমি কিছু খেয়ে আসোনি।
আমি কিছু বলিনা।ও কিভাবে যেন সব বুঝে যায়।
ওর মুখে রাগের আভাস।
আমি জানি আসলে ও রাগেনি।আমার উপরে একদম রাগ করতে পারেনা ও।শুধু ছেলেমানুষী ঠোঁট ফোলানো।বাবার ভাষায় আমি হচ্ছি দুনিয়ার মস্ত গাধা।কিচ্ছু বুঝিনা।কিন্তু এটা বুঝি।ও আমার ওপর একটুও রাগেনি।
- এখান থেকে গিয়েই রাতে খাওয়ার জন্য কিছু কিনে রাখবে,ঠিক আছে?
আমি বাধ্য ছেলের মত ঘাড় নাড়ি।
-আর সেবারের মত খালি পেটে আর কখনো কোক খাবেনা।খবরদার।
এবারো কিছু বলিনা।একটানে সেই দিনটাতে চলে যাই।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কোক খেয়েছিলাম।এরপর সারাটা দিন বমি বমি ভাব।কি বিশ্রি অনুভূতি।ওকে বলতেই পারলে ফোনেই আমাকে জুতোপেটা করে।
হঠাৎ মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়।ও পাশে থাকলে কখনো এমন খারাপ লাগেনা।আজ লাগছে।আর কোনদিন ও আমার একপাশ আলো করে এভাবে বসে থাকবেনা।সেদিনের মত করে আর কোনদিন বকবেনা।আমি ভাল থাকি কিভাবে?
চোখ দুটো জ্বলছে।নির্লিপ্ত মুখ করে তাও বসে থাকি।ওর চোখে তাকাইনি আসার পর একবারো।কিন্তু জানি দুপুরের রোদ ভুলে চোখ দুটোতে কেমন আঁধার জমে আছে।
দুজনেই কিছুক্ষন ধরে আবারো চুপচাপ বসে আছি।যেভাবে চুপ করেছিলাম কথাটা প্রথম শোনার পর।ফোনের ওপাশে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার ঢেউ আছড়ে পড়ছে।আমার বুকের ভেতরটা টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল-এই মেয়ে,একটুও কাঁদবেনা।একটুও না।আমি তোমাকে শেখাবো কিভাবে চারপাশ আলো করে হাসতে হয়।হাতে হাত চেপে ঘন্টার পর ঘন্টা অর্থহীনভাবে হাঁটতে হয়।কিংবা রাতের অন্ধকারে গা ডুবিয়ে দু চোখে কিভাবে তারার আলো মাখতে হয়।শেখাবো আরো অনেক কিছু...সব শেখানোর আগে আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবনা... কত কিছু আরো বলার ছিল।কিছুই বলা হয়নি।বলতে পারিনি।তখনো চুপ করে ছিলাম।এখন যেমন আছি।
খেয়াল করিনি ওর হাতটা কখন আমার হাতের উপর উঠে এসেছে।
-আমার দিকে তাকাও।
আমি তাকালাম।গাঢ় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ও।
-বল,তুমি আমাকে ভুলে যাবে।
ঐ চোখে অনুরোধ,আকুতি নাকি অসহায়ত্ব? চিরকালের দ্বিধান্বিত আমি আবারো দ্বিধান্বিত হলাম।
আমি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারিনা।
মাথা নিচু করে আস্তে করে বললাম- হুঁ।