এ বছর কান ফিল্ম ফেস্টিভালের (Cannes film festival) সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার পাম ডি'ওর (Palme d’Or) জিতেছে La vie d’Adèle (Blue is the Warmest Colour) মুভিটি। এই মুভিটির গল্প আবর্তিত হয়েছে দুই নারীর প্রেম নিয়ে। উঁহু, ঠিকই পড়েছেন- দুই নারীর প্রেম!
গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে, ২০১৩) এই খবরটিকে প্রথম আলোর আনন্দ পাতায় "সাহসের জয়" শিরোনামে প্রচার করা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতেই প্রতিবেদক লিখেছেন, "যাকে বলে টাসকি খাওয়া ব্যাপারস্যাপার"। তিনি 'টাসকি' (এই স্ল্যাংটি পত্রিকার জন্য কি ইনফর্মাল নয়?) খেতেই পারেন। ইউরোপিয়ান কালচার ও ফিল্ম হিস্ট্রি, কানের ইতিহাস ও রাজনীতির কথা জানা না থাকলে তিনি টাসকি খেতেই পারেন। টাসকি খেতে খেতে তিনি আরও লিখেছেন, "আদলে, ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। ষোড়শ বর্ষের দুয়ারে। এখন ষোড়শী যে প্রেমে পড়া তার শ্রেষ্ঠ সময়।" এই লুল মার্কা কথাটি- "এখন ষোড়শী যে প্রেমে পড়া তার শ্রেষ্ঠ সময়" তিনি কোথায় পেলেন জানতে খুব ইচ্ছে করছে। হেলাল হাফিজ কবিতায় লিখেছিলেন, "এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"। কিন্তু এই প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে ১৬ বছর বয়সী পাঠিকাদেরকে ম্যাসেজ দিচ্ছে- 'এখনই প্রেম করার শ্রেষ্ঠ সময়! গো! হারি আপ!' কি লুল রে বাবা! ব্লগে হলে একটা কথা ছিল, তাই বলে পত্রিকায়!
তিনি এর পর লিখলেন- "খুবই স্বাভাবিক, আদেলে ছেলেদের সঙ্গে অভিসারে মত্ত হবে।" আবার লুল! তারপর লিখলেন, "কিন্তু তার জীবনের ছক পাল্টে দিলেন এমা নামের এক নীল কেশী তরুণী। একজন 'নারী' হিসেবে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের যে পথে আদেলে হাঁটতে শুরু করল, এমা সামনে থেকে সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন। পরিচালক আবদেললতিফ কেশিশ যে সাহসী সন্দেহ নেই। তবে তাঁর চেয়েও বেশি সাহসী নিঃসন্দেহে দুই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা দুই নারী।" লেসবিয়ান মুভি বানানো ও লেসবিয়ান চরিত্রে অভিনয় করার মধ্যে প্রতিবেদক সাহসের কি দেখলেন? আবারও সেই গভীরতার অভাব। [Blue is the Warmest Colour নিয়ে এখন কিছু বলছি না, পরে লিখবো।]
আসলে প্রতিবেদকে খুব বেশি দোষারোপ করে লাভ নেই। তারা তো আর মুভি দেখে রিপোর্ট লিখেন না- ইন্টারনেটে কোন এক ওয়েবসাইটে যা পান তাই জল্পনা-কল্পনা ও ভাষার খেলা মিশিয়ে প্রকাশ করেন। আমাদের দৈনিকগুলোর শোবিজ পাতা এভাবেই চলে। এখানে রিপোর্টার কোন দায়িত্ববোধ করেন না। স্টোরিটাকে যেনতেন ভাবে আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করতে পারলেই হলো। আমাদের পাঠকদেরকে আল্ট্রা মডার্ন বানাতে গিয়ে কোন নিউজ কিভাবে ট্রিট করতে হবে সেই খেই হারিয়ে ফেলে। আমাদের সংস্কৃতির মূল বুনিয়াদকে ভাঙার জন্য মিডিয়াতে যে একটা অপশক্তি কাজ করছে- এতে বুঝে-না বুঝে মসলা যোগাচ্ছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শোবিজ বিটের কর্মীরা। তাই তো 'R' রেটিং পাওয়া হলিউড মুভি ট্রেলারও দেখানো হয় বাংলা চ্যানেলে।
এবার পাঠক আসুন আরেকটি নিউজের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। দেখুন তো উপরে বর্ণিত কোন কিছুর সাথে মিল খুঁজে পান কিনা।
গতকালের (৪ জুন, ২০১৩) প্রথম আলোর বিনোদন পাতার নিউজ এটি। শিরোনাম: "ফারুকীর দুই ছবিতে তিন নায়িকা"। লিভ টুগেদার মুভি বলে খ্যাত 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ও লিটনের ফ্ল্যাটের জন্য বিখ্যাত 'ব্যাচেলর' ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নতুন দুটি ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। মুভি দুটি প্রডিউস করবে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম/ফরিদুর রেজা সাগর। ঘোষণা করা মুভি দুটির একটির নাম 'পিঁপড়াবিদ্যা' অন্যটি 'ডুবোশহর'। দ্বিতীয়টি সম্পর্কে ফারুকী বলেন, "...ডুবোশহর চলচ্চিত্রে দেখা যাবে দুই উঠতি তরুণীর বন্ধুত্ব, প্রেম, প্রেমের নানা অলিগলি, বাঁক ও বাঁক থেকে সামনের দিগন্তে যাত্রার বিষয়টি।" প্রিয় পাঠক, নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন 'দুই উঠতি তরুণীর বন্ধুত্ব, প্রেম'! কি? মাথায় কি বাজছে আপনার? হ্যাঁ হ্যাঁ 'দুই ... তরুণী' পড়েছেন! এবার বলে ফেলুন না শব্দটি! লেসবিয়ান? ফারুকীর নেক্সট প্রজেক্ট লেসবিয়ান মুভি!?
উপরে বলেছিলাম মিল খোঁজার কথা। মিল পেয়েছেন কিছু? 'ডুবোশহর' হবে 'ব্লু ইজ দি ওয়ার্মেস্ট কালার'? মাইরালা আমারে মাইরালা!
ফারুকী অনেকদিন ধরে বিদেশী ফেস্টিভালগুলোতে তাঁর মুভি নিয়ে হন্য হয়ে ঘুরছেন। আশা নিশ্চয় পুরষ্কার জেতা। লিভ টুগেদার ফর্মুলা ট্রাই করেছিলেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। এবার কি তিনি 'লেসবিয়ান' ফর্মুলা ট্রাই করে দেখবেন? তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে নারীর সমকামিতা নিয়ে মুভি নির্মিত হলে বিদেশী ফেস্টিভালগুলো নিশ্চয় লুফে নিবে! পুরষ্কার দিয়ে ভরিয়ে দিবে! ব্রাভো ব্রাদার ফারুকী, ভাই-বেরাদর নিয়ে এগিয়ে যান! লিভ টুগেদার মুভি দিয়ে যে নাম কামিয়েছিলেন লেসবিয়ান মুভি দিয়ে সেটা শান করুন! সঙ্গে ম্যাডাম টিশা (বিদেশীরা নাকি এভাবেই উচ্চারণ করেছিল) তো আছেনই!
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি! টিশা মানে আমাদের তিশা ডুবোশহর চলচ্চিত্রের নায়িকা, দুই প্রধান চরিত্রের একটি। অন্য প্রধান চরিত্রটি মানে নায়িকাটি হচ্ছেন হালের হট সেনসেশন মিস মেহজাবিন। প্রথম আলোর সূত্রে জেনেছি; তিশা বলেন, "ডুবোশহর আমার চতুর্থ ছবি। ছবির গল্পটি পড়ার পর আমার খুব পছন্দ হয়েছে।" ওয়াও! হতেই পারে! লিভ টুগেদারের পর লেসবিয়ান চরিত্র কয়জন পাই? যদিও আমরা জানি, পছন্দ না হলেও ফারুকীর ছবিতে উনি নায়িকা হিসেবে থাকবেনই! চরিত্র তাকে ডিমান্ড করুক আর না করুক। অন্যদিকে মেহজাবিন বলেন, "কয়েক মাস আগে আমি পরবাসিনী নামে একটি ছবির শুটিং করেছিলাম। কয়েক দিন শুটিংয়ের পর ওই ছবির আর কোন খবর নেই। ডুবোশহরই আমার প্রথম ছবি" ভালো ভালো, আপনার প্রথম ছবি হোক মার মার কাট কাট, হট অ্যান্ড স্পাইসি!
আশা করি, তিশা ও মেহজাবিনের অনস্ক্রিন 'বন্ধুত্ব, প্রেম, প্রেমের নানা অলিগলি, বাঁক ও বাঁক থেকে সামনের দিগন্তে যাত্রা' আমাদেরকে 'এখন ষোড়শী যে প্রেমে পড়া তার শ্রেষ্ঠ সময়' এই মহান বাণী-দাতার মতো লুলে লুলায়িত করবে। আশা করি ছবিটি যেন খুব সহজে সেন্সর ছাড়পত্র পাই সেটি যেভাবেই হোক 'ম্যানেজ' করবেন ফরিদুর রেজা সাগর সাহেব। ছবিটি যেন বাংলাদেশ থেকে অস্কারে পাঠানোর জন্যও নির্বাচিত হয় সেজন্যে তিনি পায়ের ঘাম মাথায় তুলবেন। শুনেছি এই সব লাইনে তিনি নাকি পারদর্শী। আর ফাটাফাটি প্রচারের জন্য চ্যানেল ৪২০: হৃদয়ে কলকাতা তো আছেই! ব্যস, হয়ে গেল সেটিং!
বাংলা নাটকে গালিগালাজের প্রবক্তা ও আধুনিকতার নামে মানহানিকারী, লিটনের ফ্ল্যাট-লিভ টুগেদার তথা মি. সেক্স অ্যাক্টিভিস্টের ফেস্টিভাল যাত্রা অব্যাহত থাকুন। জয় বাবা ফারুকী!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৭