ব্লগ চলবে ব্লগের আইনে, এইখানে সরকার ক্যান?
সরকারের যদি চরম কোন পরিস্থিতিতে কোন ব্যবস্থা নিতেই হয় সেটা হইবো ব্লগ কর্তৃপক্ষের লগে মোকাবিলা, ব্লগারের গলা চিইপা ধরবো ক্যান?
কোন ব্লগারের বিরুদ্ধে অথেনটিক কোন অভিযোগ থাকলে সেটা তুইলা ধরবে ব্লগাররা ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে। ব্লগ কর্তৃপক্ষ যদি সেই অভিযোগ সত্য হওয়া সত্ত্বেও আমলে না নেয় ঐ ব্লগারের দোষটা গিয়া পড়বে ব্লগ কর্তৃপক্ষের ঘাড়েই। এ জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষকে ধরা উচিত। এইখানে ধরা মানে এই না যে ব্লগই ব্যান কইরা দিতে হবে। এক জনের দোষে তো দশ জনরে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। ব্লগ কর্তৃপক্ষ নিজেরা লম্বা লম্বা নীতিমালা বানায়, এই নীতিমালা রক্ষায় কেন তারা আপোষ করে ও ক্ষেত্রবিশেষে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে সেই সব কিছুর জবাবদিহির দায়িত্ব ব্লগ কর্তৃপক্ষেরই। সাধারণ ব্লগারদেরকে কোন ভাবেই কোরবানি বানানো যাবে না।
এবার আসি আসিফ মহিউদ্দীনের কথায়- ফর দ্যা রেকর্ড এই প্রথম আমি এই লোকের নাম টাইপ করলাম- আসিফরে আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না। কখনও দুপয়সা গুরুত্ব দিই নাই তারে। যাইতামও না তার ব্লগে। কারণ ধর্ম নিয়া বিদ্বেষ যারা করে আমি তাদের পছন্দ করি না। কিন্তু আমি একা কোন ছার! লোকজন তারে গুরুত্ব দিয়া মাথায় তুইলা ফেলল! এইটা ব্লগে একটা কালচার হইয়া দাঁড়াইছে, যাগোরে একঘরে করা দরকার, তাগোরে তোলে মাথায়। আবার যাগোরে সত্যিই মাথায় তোলা দরকার, তাগো কোন ভাত নাই। এই জিনিসটা লোকজন কেন বুঝতে চাই না, আপনি যারে পছন্দ করেন না তারে নিয়া তর্কাতর্কি করলেও মাথায় উঠানো হইয়া যায়। এবং আসিফ এটা লাইক করে। সে এটাই চাই যে, ভালো হোক, মন্দ হোক সবাই তারে নিয়া আলোচনা করুক। আসিফ যখন আহত হবার পর আবার সুস্থ হইয়া ফেরত আসল, দেখলাম সে বড়ই অকৃজ্ঞ! তার ভার্চুয়াল শত্রুরাও যে তার বিপদের দিনে তার জন্য কথা কইছিল সে জন্য তার কোন শুকরিয়া দেখলাম না! সারমেয়র লেজ বরাবরই বাঁকা। আসিফ ধীরে ধীরে সেই আগের রূপই হয়তো ধারণ করতো/করতেছিল। (আমার কোন ভুল হইলে ক্ষমাপ্রার্থী)
কিন্তু আসিফের যে ব্যান করা হইছে, এই বিষয়ে তাকে কি আগাম কোন নোটিশ দেয়া হইছে? তারে কি কারেকশনের একটা সুযোগ দেয়া হইছে? তাকে কি বলা হইছে ব্যান থেইকা বাঁচতে হইলে এই এই লেখাগুলো ডিলিট কর বা এখানে এখানে সংশোধন কর? কোন লাস্ট চান্স তারে দেয়া হইছিল কিনা জানি না। একটা লাস্ট চান্স তো যে কেউ পাইতেই পারে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হইলো, এদ্দিন পর কেন এই ব্যান? এই ব্যানের আসল উদ্দেশ্য কি?
প্রশ্ন হইলো, এতো কিছুর পরও আসিফ সরকার নির্দেশিত ব্যান হইলে আমি কেন অখুশি হব? ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং, প্রত্যেকটা মানুষেরই মনে আলোকিত ও অন্ধকার দুইটা দিক থাকে। আমার অন্ধকার দিকটা হয়তো মনে মনে বলছে, 'ভালো হইছে, আপদ বিদায় হইলো।' কিন্তু আমার আলোকিত দিকটা কি বললো? বলা বাহুল্য, আমার আলোকিত দিকটা আমার অন্ধকার দিকের তুলনায় হাজার গুণ শক্তিশালী। সে অন্ধকারকে দাঁড়াতেই দেয় নাই। সো, আমার আলোকিত দিকটার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, 'আমার নিজের ব্লগটা অক্ষত আছে তো?'
লক্ষ্য করুণ, আমি একজন ধর্ম বিশ্বাসী ব্লগার। শুধু বিশ্বাসী না, প্র্যাকটিসিং আস্তিক। প্রশ্ন হইলো, আমার ব্লগ নিয়া আমার কোন প্রকার শঙ্কিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না, তবে আমি কেন শঙ্কিত হইলাম? কারণটা খুব সিম্পল, আমি সম্প্রতি সরকারের কিছু কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করছি এবং স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাক স্বাধীনতার শক্তিতেই বঙ্গবন্ধুকে যে পছন্দ করি কিন্তু জনাবা হাসিনাকে যে আমার পছন্দ না সেই ব্যক্তিগত মতামতও প্রকাশ করছি। তাই আমি নিজের ব্লগটারে নিয়া একটু চিন্তিত হইলাম।
এবার আরেকটু ভালো কইরা লক্ষ করুন, আমার মাথায় প্রথমে এইটা আসে নাই যে, আসিফরে ধর্ম বিদ্বেষী লেখালেখির অপরাধে সরকারি হস্তক্ষেপে ব্যান করা হইলো। কারণ এইটা যদি লোক দেখানো উদ্দেশ্যও হয়ে থাকে, সরকারের মহা উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। মনে আছে আপনাদের কিছুদিন আগে সরকারের কি এক বিজ্ঞপ্তি না ছাই কিসে যেন বলা হইলো, ইন্টারনেটে সরকার বিরোধী কোন কিছু লেখা যাবে না। মনে আছে তার প্রতিবাদে আপনারই সাহসী হয়ে এই বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করছিলেন? মনে আছে, সরকার আর ঐ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা করতে পারে নাই? মনে আছে না ভুইলা গেছেন? কদিন আগেরই তো কথা।
আপনি কি ভাবছেন আপনাদের সমালোচনা দেইখা সরকার পিছু হটছে? জি না ভাইজানেরা। এই সরকার এতো সহজে ছাড় দেবার পাত্র না। প্রথমে সুঁই হইয়া ঢুইকা অতঃপর ফোঁড় হইয়া বের হইবো। তখন নিজের পাছা নিজের কামড়াইতে ইচ্ছা করবো আপনার।
হঠাৎ শুরু হওয়া সরকারের এই ব্লগার ব্যানিং কার্যক্রমে ব্লগ প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে সরকারী কর্তৃপক্ষের চিঠি যাচ্ছে। এটা কি উগ্র ধর্মান্ধদের খায়েশ পূরণের জন্য উগ্র নাস্তিকদের শায়েস্তা প্রকল্প, নাকি অন্য কিছু? সরকার ব্লগার ব্যানিংয়ের নিদর্শন স্থাপন করে কি ব্লগারদের মাঝে একটা ত্রাস সঞ্চার করতে চায়? সরকার বিরোধী কোন কণ্ঠকে রাষ্ট্র বিরোধী প্রচার করে কি এই প্রকল্পের আওতায় যে কোন ব্লগার ও ফেসবুকারকে যে কোন ছুতোয় ব্যান করা হতে পারে? সেই সম্ভাবনায় তো দেখা যাচ্ছে।
তাই বলি, আসিফের ব্যান দেইখা যারা খুশিতে লাফাইতেছেন অতো লাফানির কিছু নাই। যারা আপাতত চুপচাপ থাইকা নিরাপদ আছেন মনে করতাছেন আপনারাও নিরাপদ নাই। সরকার যদি সরকার কর্তৃক এই ব্লগার ব্যান করাটা একবার জায়েজ কইরা নিতে পারে, খোদার কসম বলতাছি আপনি আমি কারও নিস্তার নাই।
মনীষী বলছেন, অল্প কথায় কাজ হইলে বেশি কথার প্রয়োজন কি? আমি অল্প কথায় বুঝাইতে চেষ্টা করছি। বুঝাইতে না পারলে ব্যর্থতা বইলা মাইনা নিলাম।
এই ঘটনার পর আমি আমার গলায় একটা ফাঁস অনুভব করতাছি... আপনি করতাছেন না?
ব্লগার, ব্লগ কর্তৃপক্ষ, ফেসবুকার, এক্টিভিস্টদের বলছি: শেষ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে উপলব্ধি করার, শেষ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে একত্রিত হওয়ার, শেষ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ঘুরে দাঁড়াবার। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আপনাদের কোন দল নেই, না সরকারি দল, না বিরোধী দল। আপনাদেরকে প্রয়োজনে ব্যবহার করা হতে পারে, প্রয়োজনে ছুঁড়ে ফেলা হতে পারে। আপনাদেরকে নিজেদের কথা নিজেদেরকেই বলতে হবে, নিজেদের স্বার্থ নিজেদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এই যাত্রায় দেরি মানে সমাপ্তি।
সরকারকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে আসবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:২২