নাহ, সরকার দেখি সত্যিই বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।
অবাক হচ্ছেন? শাহবাগ আন্দোলনের একজন সক্রিয় সমর্থক হিসেবে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে রাজপথের আন্দোলনকারী হিসেবে, জয় বাংলা শ্লোগানধারী একজন প্রতিবাদী হয়ে আমি তো আমার বিবেকটা আওয়ামী লীগের কাছে বন্ধক দিই নাই! শাহবাগে সরকারের সমর্থন আছে দেখে গত চার বছরের কুকীর্তির কথা তো ভুলি নাই। চামড়া বাঁচাতে চুপ থাকবো কেন? ভণ্ডামি অন্যরা করুক, আমি তো করতে পারি না। রেকর্ড চেক করে দেখেন আমার- দুধকে দুধ আর মদকে মদই বলেছি।
ধরে নিলাম ককটেল বিএনপি নিজেই ফুটিয়েছে। এটা অসম্ভব কিছু না। একই রেকর্ড আওয়ামী লীগেরও আছে। আওয়ামী লীগ জানে- না ফুটানো ককটেলগুলো কার্যালয়ের বাথরুমে লুকিয়ে রাখা হয়। পুলিশ সেই তথ্য অনুযায়ী ককটেল উদ্ধার করলো। কিন্তু এই কাজটা সরকারে থেকে বিএনপি আগে করে নাই। এবার আওয়ামী লীগ করলো। অর্থাৎ আগ্রাসী রাজনীতিতে তারা একধাপ এগিয়ে গেল। লীগ অবশ্য বরাবরই কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে।
ধরে নিলাম ককটেল বিএনপি নিজেই ফুটিয়েছে। হরতাল ডাকার অজুহাত বানানোর জন্য এই কাজ। একই খেলা আগে আওয়ামী লীগও খেলেছে। দিন বদলের আওয়ামী লীগ যদি সত্যি বদলে গিয়ে থাকতো তবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এভাবে নির্বিচারে শীর্ষ নেতা-কর্মী গ্রেফতার করতো না। এখানেও লীগ এগিয়ে, বিএনপি আগে যা করেনি তা আওয়ামী লীগ এবার করে দেখিয়ে দিল। হাজার হোক রাজনৈতিক নোংরা খেলায় আওয়ামী লীগ বিএনপির আব্বা।
ধরে নিলাম ককটেল বিএনপি নিজেই ফুটিয়েছে। কিংবা জামাত-শিবিরও ফুটাতে পারে। অথবা সরকার নিজেই পারে স্যাবোট্যাজ করতে। অন্যদিকে, কার্যালয়ের ককটেলগুলো বিএনপিরই ধরে নিলাম। অথবা জামাত-শিবিরের কোন কর্মী ককটেল নিয়ে ঢুকতে পারে। কিংবা পুলিশ নিজেই ককটেল রেখে উদ্ধারকর্তা হতে পারে। দেখুন, কোন কিছুই অসম্ভব না। তাই আসল ঘটনা কি সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে কোন লাভ নেই। পরিস্থিতি কে কিভাবে চালাতে চায় সেটাই বিবেচ্য।
ধরে নিলাম হরতাল ডাকার উদ্দেশ্যেই বিএনপির এই সভা। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বিএনপি যেন হরতাল ডাকার অজুহাত না পাই। তো বিএনপি ককটেল ফুটাক, নিজেরা নিজেরা ধস্তাধস্তি করুক, পুলিশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পরও আবার কেন গেল? হরতাল ডাকাটাই যদি উদ্দেশ্য হয় সেটা বিএনপি যে কোন ভাবে ডাকতে পারে। পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই অজুহাত তো শক্ত হাতে পরিণত হবে। এটা কি সরকার জানে না? লীগ সরকার কি ইচ্ছে করেই তাদেরকে আরও উস্কে দিল?
ধরে নিলাম পুলিশ 'আত্মরক্ষার্থে' কিংবা জনগণের জান-মাল বাঁচাতে সমাবেশে 'পাল্টা হামলা' দিল। কিন্তু কার্যালয়ে প্রবেশ করে বেধড়ক ধরপাকড় কেন? হরতাল ডাকার অজুহাতকে এভাবে বৈধতা দেয়া হলো কেন? কেন সরকার পরিস্থিতিকে আরও ঘোলা করছে? কেন আরও অরাজক অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে দেশকে? যারা সরকারের এমন পদক্ষেপকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন দিচ্ছে কেন তারা জনগণের শান্তির কথা চিন্তা করছে না? বিএনপি-আওয়ামী লীগকে যুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে কেন লাইভ অ্যাকশন সিনেমা উপভোগ করার বিকৃত মানসিকতা লালন করছে? শান্তির কথা না বলে কেন ধ্বংসের কথা বলছে? আরে ভাই, মরলে তো আমরা মরবো! হাসিনা-খালেদার কিছু হবে?
ধরে নিলাম বিএনপি অসাধু পলিটিক্স খেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফর গড'স সেক, এটা মেনে নিন যে আওয়ামী লীগ জঘন্য নোংরা পলিটিক্স খেলছে।
ঐ কথাটা মনে পড়ছে, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮