চারপাশে চারটা দেয়াল,একপাশে একটা দরজা,দেয়ালের উপরের দিকে কর্ণারে ছোট্ট একটা ভেন্টিলেটর।এটা আমার অন্ধকার প্রকোষ্টের বর্ণনা।
আমি এই ঘরে বন্দী গত পঁচিশ বছর।
পঁচিশ বছর ধরে আমি শুধু এক রেখা সূর্যালোককে চিনি আর এক পরিচ্ছন্ন অন্ধকার চিনি।এখানে আমি একটা জগৎ তৈরি করেছি,যেখানে আমার সাথে আরো কয়েকজন আছে তবে তারা আমার কল্পনায়।পরিচিত জগতের মানুষগুলোর সাথে তাদের কোন সাদৃশ্য নেই।
তাদের হাতগুলো ডানার মতো।তারা চাইলেই অদৃশ্য হতে পারে।তাদের ব্রতই হলো আমাকে আনন্দ দেয়া।
তারা কেউ ছবি আকেঁ, কেউ গল্প লেখে,কেউ গান করে।আমি ওদের একটা করে নাম দিয়েছি।যে ছবি আকেঁ তার নাম নূর,যে গল্প লেখে তার নাম রণ,যে গান করে তার নাম তঁরঙ্গ,কারো নাম ঢেউ,এমন আরো নাম।
ওদের ডানায় ভর করে আমি বিশ্ব ঘুরে আসি।
যখন আমার সমুদ্র দেখতে ইচ্ছে করে,আমি নূরকে বলি।
তূলির আচঁড়ে নূর আমার জন্য সমুদ্র এঁকে দেয়,সেই সমুদ্র জীবন্ত।
প্রতিটি ঢেউ আছড়ে পরে সৈকতে,আমি জলে পা ভেজাই,সৈকতের তীর ধরে হেটে যাই বহুদূর।আবার আমার যখন অরণ্যে হারাতে ইচ্ছে করে,
আমি রণ কে বলি। পৃথিবীর তাবৎ অরণ্য,ওর গল্পে আছে।লাল পাহাড় আছে, নীল বন আছে, বনের মাঝে খোলা এক চিলতে আকাশ আছে।
ওর আকাশের রং সবুজ।আমি সেই নীল বনের মাঝে সবুজ আকাশের নীচে নেচে বেড়াই।আমার নাচ দেখে রণ হাসে।ও বলে আমি নাকি পাগল।
আমি বলি না।ও বলে,হু ভুল বলেছি: তুমি পাগলী।
মাঝে মাঝে আদর করে সোনা বলে ডাকে,আর আমি হাসি।
প্রতিটি মূহুর্তে ও আমার একটা করে নাম দেয়।
ইদানিং মনে হয় আমি ভুল বলেছি-
আমার ঘরের নাম অন্ধকার প্রকোষ্ট না।
আমার ঘরের নাম আলোর সাম্রাজ্য।
অন্ধকার এই ঘরের প্রতি কোণে ওরা আমার জন্য আলো ছড়িয়ে দেয়।
এই আমার আলোর সাম্রাজ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৪৪