পিপ পিপ পিপ...........।
অনবরত প্রাইভেট কারটি হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদিকে মেয়েটির যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
অগত্যা প্রাইভেট কারের যাত্রী নিজেই নেমে এলেন মেয়েটিকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে।
-এই মেয়ে রাত বাজে ১০ টা। মরার জন্য গুলশান বাস স্ট্যান্ডটাই তোমার পছন্দ হল।
জ্বি কিছু বলছেন আমাকে?
- হ্যাঁ । ডান দিকে মোড় নিব, রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও।
ঠিক আছে
মেয়েটি বাস স্টান্ডে গিয়ে দাড়াতেই পিঠে মানুষের হাতের অস্তিত্ব পেল। ঘুরে দাড়াতেই আসমার মুখোমুখি।
- কি রে সীমা তুই এখনও এখানে?
হ অনেক্ষন ধরে দাড়াইয়া আছি। সুবিধামত একটা ও পাই নাই। তুই এখনও এখানে কেন? কাস্টমার পাস না?
- নারে আইজ মনে হয় মিলব না। বুইড়া একটা আইছিল। কয় ফুল টাইম ৫০০ টাকা। না কইরা দিছি। বাজারে সব মালের দাম বাড়ছে। আমাগ দাম কমব কেন।
হুম্ম। আমিও সেই সন্ধ্যা থেকে আছি। দুই পোলা আইছিল। দেইখা হিরোইঞ্ছি মনে হইছিল। ২০০০ টাকা কইছিল , না কইরা দিছি।
- প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে বেটারা আমগোরে লইয়া টানাটানি করে। কিন্তু আইজকা কি হইল?
আসমা আইজ যেমনেই হোক আমার ৩৫০০ টাকা রুজি করতে হইব।
শনিবারে সোহেলরে হাতে দিতে হইব।
- কোন সোহেল? তোর ছোট ভাইটা।
হুম্ম।
- কেন ওরে এত টাকা দিতে হইব?
শনিবারে ওর এইচ এস সি ফরম ফিলাপের লাস্ট ডেট। ৯০০০ টাকা লাগব। ৫৫০০ টাকা ম্যনেজ করছি। এখন ৩৫০০ টাকার ঘাটতি আছে।
- ওওওওওওওও। দাড়া আরো কিছুক্ষন মালদার একটা ঠিক পেয়ে যাবি।
খাইছস কিছু?
- খাইছি একটা রুটি আর একটা কলা।
মাসের ১০ তারিখ হইছে এখন অফিসে এখনও বেতন দেয় না। প্রতি মাসে এই রকম করে। ভাবতাছি ফ্রন্ট ডেস্ক এর চাকরিটা ছেড়ে দিব।
- তোর বসটা একটা লুচ্ছা না। সেই দিন তোর অফিসে গেলাম যে আমার দিকে এমন কইরা তাকাইয়া ছিল যেন একলা পাইলে খাইয়া ফালাইব।
ওই বেটা অনেক বদ। প্রতি মাসে ২-৩ দিন বেটার লগে আমার রাত কাটান লাগে। নাইলে বেতন দিতে দেরী করে।
মনে হয় আবার বেটার লগে থাকার সময় হইছে তাই বেতন দিতাছে না।
পিপ পিপ.......।আবারো গাড়ীর হর্ন ।
দুজনে সামনে তাকতেই দেখল গাড়ীর ড্রাইইভারের সিটে বসা লোকটি তাদের ডাকছে।
- সীমা তুই যা। আমার আইজ না হইলেও চলব। সোহেলরে পরিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হইব। তুই যা।
সামনে এগিয়ে গেল সীমা।
-নাম কিরে তোর?
জ্বি মোহনা। (সীমার প্রফেশনাল নাম)
-আজ রাত আর কাল সারা দিন, সারা রাত। সাথে ডিনার আর লাঞ্ছের ব্যবস্থা আছে।
কত নিবি?
জ্বি আমারে কোথায় নিয়ে যাইবেন?
-মতিঝিলে হোটেল পুর্বানীতে।
জ্বি যামু। আমি কোন ট্যাবলেট খাইতে পারমু না। মাল চলব। ৬০০০ টাকা দিয়েন।
- নাহ আমি ৫০০০ টাকা দিমু।
ঠিক আছে যামু । এডভান্স আমারে ৪০০০টাকা দেন। দিলে আমার খুব উপকার হয়।
- এই নে ৪০০০ টাকা।
টাকা হাতে পেয়ে সীমার চোখ আর বাধ মানল না। দুই ফোটা বেরিয়ে এল।
কিন্তু কাস্টমারকে তা বুঝতে দেওয়া যাবে তাই তা তাড়াতাড়ি মুছে ফেলল।
আসমা এই ধর ৪০০০ টাকা। ৩৫০০ টাকা সোহেলরে দিবি বলবি ফরম ফিলাপ যাতে করে নেয়। আর ৫০০ টাকা মারে দিয়া বলবি বাজার আর ওষুধ কিনতে।
আমার কথা জানতে চাইলে বলবি অফিসিয়াল ট্যুরে আমি সিলেট গেছি। পরশু দিন ফিরব।
পরক্ষনেই গাড়ীতে করে হাসিমুখে সীমার পস্থান।
ভাইয়ের পরিক্ষার ফরম ফিলাপের সমস্যা সমধান করে আজ যেন তার ক্ষতবিক্ষত হওয়ার যন্ত্রনা একটু কমেই গেল।
সারকথাঃ
নিশিকন্যারা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ। কিন্তু তাদের এই পথে আসার ইতিহাসটা অনেক বিচিত্র। কেউ আসে জীবিকার তাগিদে আবার কেউ আসে শুধুই জৈবিক চাহিদা পুরনের তাগিদে।
বড়ই অদ্ভুত সে সব কাহিনী।
যতদিন রাষ্ট্র এই দেশের সকল নাগরিকের জীবিকার পুর্ন ব্যাবস্থা করতে না পারবে তত দিন প্রথম কারনে আসা নিশিকন্যাদের ঠেকানো যাবে না। বরং দিন দিন তা বাড়বে।
আর জৈবিক তাড়নার আসা কারনটা আমার কাছে বড়ই হাস্যকর।


আমার আগের পোস্টটিঃ পড়েছেন গ্যাড়াকলে।সামনে এগুতে পারছেন না। গভীরতায় যাওয়ার গুরুত্বপুর্ন ছবকসমুহ। No 18+
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫