প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের দোয়ায়।পর সংবাদ আমি আজকে আগের মতন ব্যাবসা সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে আসি নাই। আজকে আমি এসেছি একটি রাজনৈতিক পোস্ট নিয়ে। মনের ভিতর কিছু ক্ষোভ আর কিছু অভিমান নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। এই পোস্টের লিখা গুলো আমার নিজের দেখা এবং নিজের জানা এবং নিজ সিদ্ধান্তে লিখা।
ব্লগার বন্ধুরা গত কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন এই ব্লগে রাজনৈতিক ক্যাচাল। অপ্রয়োজনীয় পোস্ট যা পাঠকের কল্যান আনবে না, দিয়ে দিয়ে ফ্লাডিং হচ্ছে, যার জন্য ভালো লিখা গুলো দ্রুত পিছনের দিকে চলে যায়। আর এই পোস্ট গুলো বেশীর ভাগ দেয়া আওয়ামী সমর্থকদের পক্ষ থেকে। জামাত সমর্থক দের পক্ষ থেকেও পালটা পোস্ট দেয়া হয়। যাই হোক আমি ওনাদের একে অপরকে আক্রমনাত্নক ভুমিকায় খুবই বিরক্ত।আমার বিগত কয়েক পোস্ট আগে আওয়ামিলীগের কার্মকান্ড সম্পর্কে বলেছিলাম।পোস্ট ব্যাপক হিট হয়ে যায়, অথচ আমি হিট হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে পোস্ট নিয়ে দেই নাই।শুধু আওয়ামী অন্ধ সমর্থকদের একটু চোক খোলার জন্য পোস্ট দিয়েছিলাম। যাই হোক কিছু দিন বিরতির পর আবার আওয়ামী উম্মাদনা বৃদ্ধি পেয়েছে। উনাদের বেশীর ভাগ পোস্ট ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে। আসুন এবার মুল লিখায় যাই।
১) ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বলতে আমাদের মানুষ বোঝে জামাতের রাজনীতি। অথচ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করার মধ্যে অনেক গভীর অর্থ লুকিয়ে আছে। যা নিরীহ বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আওয়ামীলীগ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলছে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে মাঠ গড়ম করে বিরোধী দল গুলোকে কোনঠাসা করছে ।আমার প্রশ্ন এই কাজ গুলোও কি লীগের এক ধরনের ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যে পড়ে না?
২)আওয়ামিলীগ নিজেদের সেকুলারিস্ট বা ধর্ম নিরপেক্ষ মনে করে অথচ আওয়ামীলিগ ধর্মীয় ভন্ডামিতে সবার সেরা। জামাতের চাইতেও সেরা-কারনঃ ?????
মনে আছে?? ফতোয়া বাজদের সাথে আব্দুল জলিলের চুক্তি।বেশী দিন আগের কথা না, ২০০৬ সালের ঘটনা। কাওমি মাদ্রাসার আলেম ওলামা যারা নিজেদের চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী, সেই সকল গোড়া আলেমদের সাথে আওয়ামি সাধারন সম্পাদক জলিল চুক্তি করেছেন এইটা মিডিয়ার সামনে প্রকাশ হয়। আমি এটা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রগতিশীল আওয়ামিলীগের এই ধরনের পশ্চাদ পর চিন্তা কেন? একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে বুঝবেন এইটাও আওয়ামী হায়েনাদের ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির অংশ। আর এই জলিল সাহেব যা করেছেন তা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমেই হয়েছে। হাসিনার পারমিশন ছাড়া এই জলিলের সাধ্য নাই এই ধরনের চুক্তি করা।
৩) ওই চুক্তিতে সেই সকল গোড়া কাওমী আলেমদের ফতোয়া দেয়ার রাস্ট্রিয় ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো। তার মানে ফতোয়া কার্যকর করার জন্য পুলিশ, আনসার,RAB সবাই বাধ্য থাকতো। যেই ফতোয়া বাজদের জন্য আমাদের গ্রামের মানুষের ভীষন দুর্দশা সেই ফতোয়া বাজদের রাস্ট্রিয় পোষকতা করার নিশ্চয়তা এই আওয়ামিলীগের দল দিয়েছিলো কেন জানেন? এই ফতোয়া বাজদের সমগ্র বাংলাদেশ রয়েছে কমপক্ষে ৪০ লক্ষাধিক ভোট। ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ কতোটা ঘৃন্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলো তা বুঝতে আমার মতন স্বাভাবিক মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না।
৪) আওয়ামিলীগের নির্বাচনি প্রচারনা শুরু হয় সিলেটের শাহজালাল মাজারের থেকে।লীগের বড় বড় নেতারা মাজারে যেয়ে হাত তুলে দোয়া চান, ব্যাপক দান খয়রাত করেন। তারা যদি ধর্ম নিরপেক্ষ হয়েই থাকেন তাহলে মাজারে যাবে কেন। তাহলে তারাতো ইসলামপন্থি দল হয়ে গেল। শেখ হাসিনা হজ্বে গিয়ে মাথায় স্কার্ফ লাগিয়ে মিডিয়ার সামনে আসেন। বঙ্গবন্ধুর মাজারে বিশাল দলবল নিয়ে জিয়ারত করতেযান। আওয়ামি-ওলামা লীগ নামে একটি আলেমদের দল আছে। ওনারা বিভিন্ন সময়ে চরমোনাই, জামাত,ও যাকের পার্টিকে কাফের বলতে ব্যাস্ত।
লিগের এই কার্যকলাপ তালেবান যুগের কথাকেও হার মানায়। তার পরো ভাবি এই দলটি সেকুলারিস্ট হয় কি ভাবে?
৫) চট্রগ্রাম এবং সিলেট সহ দেশের আনাচে কানাচে অনেক বড় বড় ওলি আওলিয়াদের
মাজার আছে। আর বেশীর ভাগ মাজারের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আওয়ামী নেতারা।
চট্রগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে সহ অনেক মাজারে হিন্দুদের ও যেতে দেখেছি। এই খানেও
পলিসি। হাজার হাজার ভক্ত এবং হাজার হাজার ভোট। মাজারের টাকার ভাগ তো
আছেই।এমন কি পাড়া মহল্লার মসজিদ কমিটির সভাপতি পদেও আওয়ামী নেতারা রয়েছেন।
বায়তুল মোকারমের মসজিদের খতিব ও আওয়ামি সমর্থিত। সুবিধা অনেক লাখ লাখ
মুসুল্লিদের ব্রেইন ওয়াশ। আর দলীয় ভিত্তি পাকা পোক্ত করা। অন্য দিকে জামাত কোন ঠাসা শুধু মাত্র কিছু মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
৬) শুধু ইসলাম ধর্মীয় গোড়ামি নিয়েও সেকুলারিস্ট আওয়ামিলীগ সন্তুস্ট হতে পারেনি। তাদের
আরো ভোট দরকার তারা নিশ্চিত হতে চাইছিলো ক্ষমতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার। তাই সংখ্যা
লঘুদের ভোট টানার কৌশল আরম্ভ করলো। তাই তারা এবার ধর্ম নিরপেক্ষতার ভান করলো। এবং হিন্দু বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সহানুভুতি আদায় করা শুরু করলো।
যাতে বিরোধীদল কোন ভাবেই সুযোগ না পায়। আমার ধারনা বেশীর ভাগ হিন্দুরা চায়না ইসলাম পন্থি সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসুক। এইটা তাদের একটা ভয়ের কারন তাই তারা চায় সেকুলারিস্ট দল ক্ষমতায় আসুক। যেমন টি, ভারতের মুসললান রা চায় না শিব সেনা বা বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসুক।ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ুক, তাই তারা কংগ্রেস কে ভোট দেয়। বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় উদারতা এই দক্ষিন এশিয়ার মডেল। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-নেপাল সব দেশে হিন্দু-মুসলিম, হিন্দু-খ্রীস্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ দাঙ্গা হয়েছে। একে অপরকে হিংস্র ভাবে খুন করেছে। বাংলাদেশে কখনোই জাতিগত/ ধর্মীয় দাঙ্গা হয়নি, কখনো হবে না। তাই বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু এই আওয়ামিলীগকেই দেখলাম সংখ্যা লঘু ভোটার টানার অপপ্রয়াস চালায়। আমরা সবাই বাংলাদেশী, সংখ্যা লঘু কথাটি আসবে কেন? নিজেদের সেকুলারিস্ট দাবি করে এই সংখ্যা লঘুদের সহানুভুতি আদায় করে ভোট ব্যাঙ্ক ভারি করে। অনেক হিন্দুই শরিয়া আইন কে বাস্তবায়নের ভয়, সেকুলারিস্টদের সমর্থন করে। আমার ধারনা, এই জন্যই আওয়ামিলীগকে মালাউন দের দল বলা হয়।
প্রশ্ন হলো আওয়ামিলীগ তাদের সেকুলারিস্ট দাবি করে কেন? সংখ্যা লঘুদের সাথে এই প্রতারনা কেন?
আওয়ামিলীগ সময়ে সময়ে সেকুলারিস্ট, আবার সময়ে সময়ে গোড়া ধর্মীয় দল। এই গুলা তাদের রাজনৈতিক পলিসি। এই দেশের ৮৫% মানুষ মুসলিম। বেশির ভাগ মুস্লিম, সেকুলারিস্ট দের পছন্দ করে না। তাই মুসলিমদের ভোট টানার জন্য ও তাদের ধর্মীয় গোড়ামি দেখাতে হয়। হায় রে আওয়ামিলীগ!!!! এই দলটির আসলেই কোন আদর্শিক প্রিন্সিপাল খুজে পেলাম না। বহুরুপী ভন্ডের দল, যখন যেই রুপ ধারন করা দরকার তারা তাই কর।
আওয়ামিলীগ ধর্মভিত্তিক রাজনিতি বন্ধ করতে চায়। কিন্তু তারাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে বেশী। আওয়ামিলীগ কেই তাই সবার আগে নিষিদ্ধ করা উচিৎ।