সম্মানিত ব্লগার গন, কেমন আছেন আপনারা সবাই? সব ভালো তো? আমিও আছি একপ্রকার। পর সংবাদ আমার লিখা দুইটি ব্লগ “ শেয়ার বাজারে জুয়া থেকে দূরে থাকুন” এবং “শেয়ার বাজারে পতন” আপনাদের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আপনাদের উৎসাহে আবারো শেয়ার নিয়ে লিখছি। আপনাদের অনেকেই শেয়ার ব্যাবসা করে থাকেন এবং চাকরি ,ব্যাবসা বা পড়ালিখার পাশাপাশি শেয়ার ব্যাবসা আপনাদের বাড়তি আয়ের পথ। এই দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতির বাজারে বিকল্প বাড়তি আয় হিসেবে শেয়ার বাজারকে বেছে নিয়েছেন।আমি এটাকে স্বাগতম জানাই। অনেকে আই পি ও বা প্রাইমারি করে থাকেন, কিন্তু এখন সেকেন্ডারিতে নামতে চাচ্ছেন। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন কস্টের জমানো পুজি হারিয়ে যাবেনাতো? আমি আপনাদের পুজি বাচিয়ে টিকে বাজারে থাকার কৌশল আমার আগের লিখাগুলোতে বলেছি। আমার আজকের ব্লগ হলো , যারা শেয়ারে সেকেন্ডারি ব্যাবসায় নামতে যাচ্ছে কিন্তু কি ভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তাদের জন্য।
** আপনাদের আমি প্রথমেই ভালো ক্যাটাগরির শেয়ার কিনার পরামর্শ দিব।কিভাবে বুঝবেন ভালো ক্যাটাগরির শেয়ার?
আপনি নিচে আমার দেয়া চার্ট লক্ষ্য করুনঃ
মার্কেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শেয়ার আছে যেমনঃ এ, বি, জি,এন, জেড।
এবার বলি কোনটা কিঃ
এ ক্যাটাগরি ঃ যেই সব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারন সভাকরে এবং ১০% বা তার চাইতেও বেশী লভ্যাংশ দেয়।
বি ক্যাটাগরি ঃ যেই সব কোম্পানি নিয়মিত সাধারন সভা করে কিন্তু ১০% কম লাভ দেয়।
জি ক্যাটাগরি ঃ যে সকল কোম্পানি এখনো বানিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেনি তারা জি ক্যাটাগরিতে পরে।
জেড ক্যাটাগরিঃ যে সকল কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারন সভা করতে ব্যার্থ। লভ্যাংশ প্রদান করতে ব্যার্থ। পুঞ্জিভুত লোকসান পরিশোধিত মুলধনকেও ছাড়িয়ে যায়। ছয় মাস বা ততোধিক কাল সময় উতপাদন বন্ধ থাকে।
এন ক্যাটাগরিঃ স্টক এক্সচেঞ্জ এ সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি সমুহকে এই শ্রেনীতে রাখা হয়। এবং বার্ষিক সাধারনসভা ও লভ্যাংশ প্রদানের উপর ভিত্তি করে তাকে অন্য ক্যাটাগরিতে নেয়া হয়। এখন আপনারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন কেন আপনাদের ভালো ক্যাটাগরির শেয়ার কিনতে বলছি? তাই শেয়ার কিনার আগে সব সময় “এ “ ক্যাটাগরির শেয়ার কিনার চেস্টা করুন।
** কোনটা কোন ক্যাটাগরির শেয়ার তা জানার জন্য ভিজিট করুন। http://www.dsebd.org । বিস্তারিত তথ্য এই সাইটে পাবেন।
** শেয়ার কিনার আগে আপনাদের আরো কিছু ধারনা দিতে চাই। যেগুলো খুবই গুরুত্বপুর্নঃ যেমন শেয়ার প্রতি আয়(earnings per share: EPS), প্রতি শেয়ারে মুনাফা প্রদান(dividend per share: DPS),মুল্য-আয় অনুপাত(price earning ratio: P/E), মুনাফা অর্জনের হার(Dividend yield) ইত্যাদি।
এখন আমি এই জিনিস গুলা একটু আপনাদের নিকট গানিতিক ভাবে বর্ননা করি।
প্রথমেই আমি আলোচনা করি শেয়ার প্রতি আয়(earning per share:eps) নিয়ে,
Eps= কর-বাদ নিট মুনাফা/মোট ইক্যুইটি শেয়ারের সংখ্যা।
এটি অতি গুরুত্ত্বপুর্ন অনুপাত যা শেয়ার হোল্ডারদের বলে দেয় তার শেয়ার প্রতি কতো লাভ হয়েছে।শেয়ার প্রতি আয় বেশী হলে ভালো ডিভিডেন্ট পাবার আশা থাকে, আর কম হলে ডিভিডেন্ড ছাড়াই শেয়ার হোল্ডারদের সন্তুস্ট থাকতে হয়।
ডিভিডেন্ড আয় উতসারন অনুপাত(dividend yield ratio)
Dyr=(শেয়ার প্রতি ডিভিডেন্ট প্রদান/বাজার মুল্য প্রতি শেয়ার)*১০০
এটা একজন বিনিয়োগ কারী বাজার মুল্যে শেয়ার কিনে যে মুনাফা পায় তার শতকরা হার।দ্বিতীয় স্তরের বাজার থেকে শেয়ার কিনলে অনেক সময় ইস্যু মুল্যের উপরে মুল্য প্রদান করে কিনতে হয়। আবার কখনো কখনো ইস্যু মুল্যের কমেও পাওয়া যায়।
মুল্য-আয় অনুপাত(price earning ratio: P/E)
PE=প্রতি ইক্যুইটি শেয়ারের বাজার মুল্য/শেয়ার প্রতি আয়।
এটাও খুব গুরুত্ত্বপুর্ন সমীকরন।যখন বাজার চাঙ্গা থাকে তখন পিই উচুতে থাকে আর মন্দা হলে এটা কম থাকে। অস্বাভাবিক অবস্থা ছাড়া পিই সাধারনত এর বিগত কয়েক বছরের গড় মানের কাছা কাছি থাকে।
এখন আমি জানিয়ে দেই কয়েক টি ভালো শেয়ারের পিইঃ ১) গ্রামীন ফোন পিইঃ ৪৩.৫৮ ২) এবি ব্যাংক পিইঃ ১১.৬৮ ৩) বেক্সটেক্স ঃ ১৬.৮৯ ৪)গোল্ডেন সনঃ ২৯.৬৬ ৫) বি এস আর এম ঃ ২৮.৩৬
বিঃদ্রঃ আপনি http://www.dsebd.org এই ওয়েবসাইটের উপর সবসময় চোখ রাখুন তাহলে আপনার বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে ভালো ধারোনা থাকবে। তা ছাড়া এই খানে ডি এস ই নিউজে কেন বিশেষ কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে বা কমছে তার কারন ও দেখতে পাবেন। এ জি এম নিউজ ও পাবেন।
** আপনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবে সব গুলা শেয়ারের পিই পাবেন। যেই শেয়ারের পিই যতো বেশী সেই শেয়ার কিনা ততো বেশী ঝুকি পুর্ন। আপনি সাধারন ভাবে ১৫-২০ পিই এর এ ক্যাটাগরির শেয়ার কিনে নিতে পারেন নির্দিধায়। ২০-২৫ পিই এর শেয়ার কিনার আগে একটু চিন্তা করুন, যদি ওই কম্পানির সুনাম ভালো এবং নামকরা কম্পানি হয়ে থাকে তাহলে কিনে নিন। আর যদি ৩০ এর বেশী হয়ে যায় তাহলে আপনার বিনিয়োগ ঝুকি পুর্ন হয়ে যাবে। এর পর থেকে পিই যতো বাড়তে থাকবে আপনার বিনিয়োগ ততই ঝুকি পুর্ন হতে থাকবে। যেমন গ্রামীনের পিই ৪৩.৫৮, এটা বেশ ঝুকিপুর্ন অবস্থা যদিও কোম্পানির অনেক সুনাম আছে।
** শেয়ার কিনার সময় প্রথমে প্রায়োরিটি দিন “এ” তারপর “বি”। তারপরে এন ক্যাটাগরি। কিন্তু এন ক্যাটাগরির কিনার ক্ষেত্রে কোম্পানির সুনামের কথাটি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
** বিভিন্ন যৌক্তিক কারনেও জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। যেমন বিগত বছর গুলোয় এ জি এম না করলেও, ইত্যবছরে ভালো লাভ করার কারনে এ জি এম ঘোষনা করলে বা কোম্পানির গুনগত পরিবর্তন আসলে। অনেক সময় বাজে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার পরিবর্তিত হয়ে ভালো ভাবে পরিচালনা ও লাভ দেয়ার কারনে এ ক্যাটাগরিতে প্রমোশন পায়। আবার ঠিক উলটা কারনেও এ ক্যাটাগরির শেয়ার জেট ক্যাটাগরি তে চলে যায়। তাই সুনামের ব্যাপারটি মাথায় রাখুন।
** প্রিয় ব্লগার গন আমি আপনাদের পথ দেখিয়ে দিলাম, এবার আপনারা গানিতিক হিসাব নিকাশ করে আপনাদের পছন্দের শেয়ার কিনুন। আপনি, উপরে উল্লেখিত গানিতিক লজিক মেনে শেয়ার কিনলে বিপদে পরবেন না। আশাকরি আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।
আমার এই ব্লগটি আপনার কাজে লেগে থাকলে নিজেকে ধন্য মনে করবো এবং আপনাদের পরামর্শ পেলে পরবর্তীতে লিখার অপেক্ষায় থাকলোঃ
১)শেয়ারে ক্ষতি কি? ২) ক্ষতি কতো প্রকার? ৩) কিভাবে ক্ষতি পুরন করবেন? ৪) কিভাবে দক্ষতার সাথে পুজিকে নিরাপদ রাখবেন?
আপনাদের জবাবের অপেক্ষায় থাকলাম। ভালো থাকবেন আশাকরি। আল্লাহ হাফেজ।