ইসলাম ধর্মে মৃত সাগর অঞ্চলকে হযরত লূত (আঃ) এর অনুসারীদের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । সমকামের দরুণ এই জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন । আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতারা ভূমি উল্টে এ জাতিটিকে মাটি চাপা দেন । আল-ক্বুরআনে সূরা রুম এ ঘটনা উল্লেখ করা আছে । এর দরুন এ এলাকা কে বিশ্বের সবচেয়ে নিচু এলাকা বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
সমকামিতার রঙধনু পতাকা
গতকাল বিবিসিতে খবর শুনালাম আমেরিকা নাকি সমকামীদের অধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে। সামনে ভয়াবহ বিপদ ধেয়ে আসছে কোনো সন্দেহ নাই।
সমকামিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রিক ‘হোমো’ এবং ল্যাটিন ‘সেক্সাস’ শব্দের সমন্বয়ে। গ্রিক ভাষায় ‘হোমো’ বলতে বোঝায় ‘সমধর্মী’ বা ‘একই ধরণের’। আর সেক্সাস শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা। কাজেই একই ধরনের অর্থাৎ, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার (যৌন)প্রবৃত্তিকে বলে হোমোসেক্সুয়ালিটি। বাংলায় ‘সমকামিতা’ শব্দটি এসেছে বিশেষণ পদ –‘সমকামী’ থেকে। আবার সমকামী শব্দের উৎস নিহিত রয়েছে সংস্কৃত ‘সমকামিন’ শব্দটির মধ্যে। যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে তাকে ‘সমকামিন’ বলা হত। সম এবং কাম শব্দের সাথে ইন প্রত্যয় যোগ করে ‘সমকামিন’ (সম + কাম + ইন্) শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে।
‘হোমোসেক্সুয়াল’ শব্দটি ইংরেজিতে প্রথম ব্যবহার করেন কার্ল মারিয়া কার্টবেরি ১৮৬৯ সালে। পরে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং ১৮৮০’র দশকে শব্দটিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে শিক্ষায় এবং সাধারণদের মধ্যে পরিচিত করেন।
বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি একাডেমিয়ায় কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও সাড়া বিশ্ব জুড়ে সমকামীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গে’এবং লেসবিয়ান’শব্দদুটি অধিক হারে মিডিয়ায় ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমে ‘গে’শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিলো। প্রিন্টেড মিডিয়ায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারী ‘Vice Versa: America’s Gayest Magazine’নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গে’শব্দটি ব্যবহার করেন, যদিও সে সময় ‘গে’শব্দটি ‘হাসি খুশি’অর্থেই ব্যবহৃত হত। আর ‘লেসবিয়ান’শব্দটি এসেছে গ্রিস দেশের ‘লেসবো’নামের দ্বীপমালা থেকে। কথিত আছে, খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতকে স্যাপো নামে সেখানকার এক শিক্ষিকা মেয়েদের মধ্যকার প্রেমময় জীবন নিয়ে কাব্য রচনা করে ‘কবিতা উৎসব’পালন করেছিলেন। প্রথম দিকে লেসবিয়ান বলতে ‘লেসবো দ্বীপের অধিবাসী’বোঝালেও, পরবর্তীতে নারীর সমপ্রেমের সাথে এটি যুক্ত হয়ে যায়।
মানবজাতির সামগ্রিক ইতিহাসে সবসময়ই সমকামিতার অস্তিত্ব ছিলো। সমকামীদের সন্ধান মিলবে পৃথিবীর সর্বত্র, প্রতিটি যুগে প্রতিটি সময়ে কিংবা প্রতিটি স্থানেই। কোন কোন জায়গায় সমকামিতা রীতিমত উদযাপন করা হত সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই। প্রাচীন গ্রীসে পাইদেরাস্ত্রিয়া, কিংবা এরাস্তেস এবং এরোমেনোস -এর সম্পর্ক গুলো উল্লেখযোগ্য। সমকামিতার প্রছন্ন উল্লেখ আছে প্রাচীন বহু সাহিত্যে। হোমারে বর্ণিত আকিলিস এবং পেট্রোক্লুসের সম্পর্ক, প্লেটোর দার্শনিক গ্রন্থ সিম্পোজিয়ামে ফায়াডেরাস, পসানিয়াস, এগাথন, অ্যারিস্টোফেনেস, এরিক্সিমাচুসের নানা বক্তব্য এবং সক্রেটিসের সাথে আলকিবিয়াডসের প্লেটোনিক সম্পর্ককে বহু বিশেষজ্ঞ সমকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে হাজির করেন। খ্রীস্টপূর্ব ছয় শতকের গ্রিসের লেসবো দ্বীপের উল্লেখযোগ্য বাসিন্দা স্যাপো নারীদের নিয়ে, তাদের সৌন্দর্য নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। এই লেসবো থেকেই লেসবিয়ান (নারী সমকামিতা) শব্দটি এসেছে। বহু রোমান সম্রাট - যেমন জুলিয়াস সিজার, হাড্রিয়ান, কমোডাস, এলাগাবালাস, ফিলিপ দ্য এরাবিয়ান সহ অনেক সম্রাটেরই সমকামের প্রতি আসক্তি ছিলো বলে ইতিহাসে উল্লিখিত আছে। রেনেসাঁর সময় বহু খ্যাতনামা ইউরোপীয় শিল্পী যেমন, দোনাতেল্লো, বত্তিচেল্লী, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলোর সমকাম প্রীতির উল্লেখ আছে। চৈনিক সভ্যতা এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতেও সমকামিতার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন বিষ্ণুর মোহিনী অবতাররূপে ধরাধামে এসে শিবকে আকর্ষিত করার কাহিনী এর একটি দৃষ্টান্ত। বিষ্ণু (হরি) এবং শিবের (হর) মিলনের ফসল অয়াপ্পানকে হরিহরপুত্র নামেও সম্বোধন করা হয়। এ ছাড়া অষ্টাবক্র, শিখন্ডী এবং বৃহন্নলার উদাহরণগুলো সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে উঠে এসেছে।
এক সময় সমকাম সকল দেশের আইনে অবৈধ ছিল ; কিন্তু ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি দেশে সমকাম একটি আইনসিদ্ধ যৌনক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে হযরত লুত(আ) এর কওমের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
যেমন- মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা হুদে বলেছেনঃ “এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হল তখন আমি তাদের দেশটির উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে ওঠালাম এবং তার উপর পাকা পাথর( যা আগুনে পুড়ে ইটের মত হয়ে গেল) অবিরাম ধারায় নিক্ষেপ করলাম। পাথরগুলো ছিল সুচিহ্নিত। এগুলো তোমার প্রভূর ভাণ্ডারে ছিল।” (অর্থাৎ তাঁর সে কোষাগারে হাত দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত আর কারো ছিল না।)
যা(অপরাধী ব্যক্তিদের নাম-ধামসহ) তোমার মালিকের কাছে চিহ্নিত ছিলো, আর (গযবের) এ স্থান তো এ যালেমদের কাছ থেকে দূরেও নয়! [সূরা হুদঃ ৮২-৮৩]
অর্থাৎ এ উম্মতের লোকেরাও যদি অনুরূপ ঘৃণ্য কাজ করে তাহলে তাদের যে শোচনীয় পরিণতি হয়েছিল তা তাদেরও হবে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ওপর যে বস্তুটির সবচেয়ে বেশি আশংকা করি, তা হচ্ছে লুত এর জাতির জঘন্য কাজ। অতঃপর তিনি এ কাজে লিপ্তদেরকে তিনবার নিম্নরূপ অভিশাপ দেনঃ “লুতের জাতির কাজ যে করবে তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত।”
সূত্রঃ
Wikipedia