প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক আজ পুরো আধ পাতা জুড়ে নাকি কান্না কাঁদলেন ভারতে কেন বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে দেয়া হয় না সেই অভিযোগ করে। ভাবখানা এমন, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে দিলেই তারা বাজিমাত করে ফেলবেন, ভারতীয় বিনোদন বানিজ্যে বিশাল ভাগ বসিয়ে ফেলবেন! অথচ, বাংলাদেশের পাব্লিকই এদেশীয় চ্যানেল না দেখে ভারতীয় চ্যানেলে বুদ হয়ে থাকে। নিজের মাঠেই যারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়তে পারে না, তারা কীভাবে পরের মাঠে গোল করবে বোধগম্য নয়।
আমাদের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তাদের ধারণা, এই দেশের বিনোদনবাজার তাদের বাবার সম্পত্তি। তারা দর্শকদের ছাইপাশ যা গেলাবে, দর্শক তাই গিলতে বাধ্য থাকবে। তাদের কোন অপশন থাকবে না। অন্য আর দশটা উৎপাদক গোষ্ঠীর মত তারাও ভোক্তা স্বার্থের থোড়াই পরোয়া করে।
বিনোদন এমন একটি সেবা, যা মানুষের চিন্তাজগতকে সরাসরি প্রভাবিত করে। গণমাধ্যমে বিনোদনের আনুসংগিক বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞাপন, যা মানুষের ক্রয়-আচরণেও বিশাল প্রভাব রাখে। এসকল কারণে আর দশজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের মত আমিও চাই আমাদের বিনোদন বাজার এদেশীয়দের দখলেই থাকুক। কিন্তু সেটা কোনভাবেই মনোপলি তৈরী করে নয়।
আরেকটি বিষয়, আমার বাড়িতে ডিভিডি প্লেয়ার আছে, আনিসুল হকের বাড়িওতেও আছে। আমি বা তিনি চাইলেই একটি ভাল ভারতীয়/ পাকিস্তানী/ কোরিয়ান/ রাশিয়ান/ ফ্রেঞ্চ/ আমেরিকান মুভি দেখে ফেলতে পারব। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মুভি দেখার একটাই অপশন, এফডিসির বস্তাপঁচা বাংলা সিনেমা দেখা। ভারতীয় বাংলা/হিন্দি মুভি যদি আমাদের সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে এফডিসির বাংলা মুভি সংস্কৃতির জন্য সাক্ষাৎ যমদুত। আমাদের মুভি ইন্ডাস্ট্রির দুর্দশার কারণ দীর্ঘকাল ধরে কার্যত মনোপলি ভোগ করে যাওয়া। উন্নতির জন্য প্রতিযোগীতা আবশ্যক, যেটা এখানে অনুপস্থিত। ভারতীয় মুভি যে তেমন উন্নতমানের কিছু তা অবশ্যই নয়। ভারতীয় মুভির সাথে পাল্লা দিয়ে যদি এইসব আগাছা সিনেমা নির্মাতা টিকে থাকতে না পারে, তবে তাদের আর কতকাল অক্সিজেন দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে? বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষার দায় কি গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একার, যে তাদের সুস্থ বিনোদন বঞ্চিত করে সেই সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে হবে?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৬