পত্রিকা মারফত জানলাম আইসিসি টি-
টোয়িন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয়
সেমিফাইনালের সংবাদ সংগ্রহের
উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে প্রায় ২৬ ঘণ্টা
ট্রেন ভ্রমণ শেষে মুম্বাই গেছে দশ
বাংলাদেশি গণমাধ্যম কর্মী। ক্লান্ত
শরীরে হোটেল খুঁজতে বেরিয়ে মহা
বিপাকে পড়ে। যেই হোটেলেই যায়,
বাংলাদেশ থেকে এসেছে শুনেই চোখ উঁচু
করে, ভ্রু কুচকে, মুখ বাঁকা করে মুখ ফিরিয়ে
নেয় হোটেলের ম্যানেজারেরা।
জিটিভি ও চ্যানেল আই’র স্পোর্টস
করেসপন্ডেন্ট গিয়েছিলেন হোটেল
সিলভার মুনসহ আরও দুই হোটেলে। দুজনকেই
প্রথমে রুম দিলেও পরে যখন জানতে পারে
দুজনই বাংলাদেশ থেকে এসছে তখন হোটেল
ম্যানেজার এক রকম রেগে গিয়ে তাদের
বলেন, ‘সরি আপকো রুম নেহি মিল সাকতা।
কিউ কি আপ বাংলাদেশকা সিটিজেন
হ্যায়।’
হোটেল ‘সি গ্রিন’ ও ‘সি গ্রিন সাউথ’র
ম্যানেজাররাও বলেছেন, 'ওহ! ইউ ফ্রম
বাংলাদেশ? সরি! নো বাংলাদেশি
পাসপোর্ট ইজ অ্যালাউড ইন আওয়ার হোটেল।
গভর্নমেন্ট পারমিশন নেহি হ্যায়।’
খুবই দু:খজনক। তবে বিষয়টা নতুন কিছুনা।
এমনিতেই...
ইন্ডিয়ার ভিসা পাওয়া আমাদের জন্য
স্বর্গের টিকেট পাওয়ার মত হয়ে গেছে।
ইন্ডিয়ায় আমাদের কোন চ্যানেল চলেনা।
ইন্ডিয়ায় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স সময়ে
অসময়ে আমাদের ঠুসঠাস গুলি করে মারে।
মমতা আপা আমাদের পানিতে মারে।
ইন্ডিয়ায় চিকিৎসা নিতে গেলে
ঝামেলার শেষ নাই।
ক্রিকেটের কথা নাইবা বললাম।
অথচ...
আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান পণ্যে সয়লাব।
চাল, ডাল, পেয়াজ থেকে শুরু করে আপনার
পরনের পাখি ড্রেসটাও ইন্ডিয়ান। এমনকি
ইন্ডিয়ান পণ্য ম্যাগীতে মনোসোডিয়াম
গ্লুটামেটের মত ক্ষতিকারক থাকার পরও
সেটা ইন্ডিয়ায় বাতিল হয় কিন্তু আমাদের
দেশে ক্ষতিকারক কিছু চোখেই পড়েনা।
আমরা পাখি ড্রেসের জন্য আত্মহত্যা করি।
আমরা ইন্ডিয়ান চ্যানেল ছাড়া অচল। সাহস
থাকলে নিজের বাসার কেবল সংযোগ
থেকে ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলো সরিয়ে
দেখুন কী ঘটে!
ইন্ডিয়ান চ্যানেলে আমাদের বিজ্ঞাপণ
চলে সমানে।
ইন্ডিয়া থেকে কোন সেলিব্রেটি এলে
আমরা সর্বোচ্চ খাতির যত্ন। শুধু তাই নয়
আহ্লাদে গদগদ হয়ে যাই।
আমাদের মেইনস্ট্রিম পত্রিকাগুলোর
বিনোদন পাতায় ৭০ ভাগই ইন্ডিয়ান
শোবিজের খবরে ভরপুর থাকে।
আমরা নিজেরা বিদ্যুৎ পাই না পাই কিন্তু
ভারতে ট্রানজিট দিই ঠিকই।
নিজেরা কচ্ছপ গতির নেট ব্যবহার করি আর
ভারতকে দেই ব্যান্ডউথ।
ভারতের জন্য সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল
বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ি।
ভারতের উপর আমার কোন রাগ নেই। সব রাগ
নিজেদের উপর। তাদের নিজস্বতা আছে।
আমাদের কোন নিজস্বতা নাই। আমরা
নির্লজ্জ, বেহায়া।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে কয়েকটা দিন
অপেক্ষা করেন। কদিন পড়ে যখন অরিজিৎ
সিং, জ্যাকলিন ফার্ন্দান্দেজ, দীপিকা
পাডুকোনরা এদেশে আসবেন তখন আমাদের
যে সাংবাদিকরা মুম্বাইয়ে হেনস্থার
শিকার হল তারাই প্রথম নিউজ কাভার করতে
দৌড় দিবেন।
(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২৪