আজ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি,বিডিআর বিদ্রোহ ও পিলখানার নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ৫ বছর পূর্ণ
হবে।২০০৯ সালের এইদিনে আকস্মিকভাবে বুলেট আর গ্রেনেডের গর্জনে কেঁপে ওঠে
পিলখানা। স্তম্ভিত হয়ে যায় বাংলাদেশ,বাকরুদ্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিবেক।
ঝরে যায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী ৫৭ জন সেনা
অফিসার সহ সর্বমোট ৭৫ টি তরতাজা প্রাণ।এই ঘটনায় মাত্র দুইদিনে বাংলাদেশের
যতজন সেনা অফিসার মৃত্যুবরণ করেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো নয় মাসেও এত
জন সেনা অফিসার মারা যায়নি।শুধু বাংলাদেশ নয়,গোটা পৃথিবীর ইতিহাসেই এটি
একটি বিরল ঘটনা।
প্রাথমিকভাবে টিভি স্ক্রিনে বিদ্রোহীদের মুখে বিদ্রোহের কারন হিসেবে
বিডিআরের কমাণ্ডিং অফিসার হিসেবে আর্মি অফিসার নিয়োগদান,বিডিআরের সাধারণ
সিপাহীদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা,"অপারেশন ডালভাত কর্মসূচি",রেশন
বৈষম্য,বেতন ও পদোন্নতি বৈষম্য সহ বিভিন্ন বঞ্চনার কথা শোনার পরে আমাদের
প্রায় সকলেরই প্রাথমিক সমর্থনটা বিডিআর জোয়ানদের পক্ষে চলে
গিয়েছিলো।কিন্তুপরবর্তীতে ঘটনার ভয়াবহতা,নারকীয়তা,নৃশংসতা এবং ক্ষয়ক্ষতির
পরিমাণ যখন প্রকাশ পেল তখন বোঝা গেল নিশ্চয়ই এই হত্যাযজ্ঞের পিছনে ভিন্ন
কোন কারন ও রহস্য বিদ্যমান।যে কারন ও রহস্যের সাথে জড়িয়ে আছে কোন
নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লাভক্ষতির হিসাব-নিকাষ।
আমি আপনাদের সামনে এরকমই কিছু রহস্যজনক প্রশ্ন তুলে ধরলাম।যার উত্তর গুলো
কেউ খুঁজে পেয়েছে,কেউ আজো খুঁজে পায়নি; আবার কাউকে হয়তো প্রশ্নগুলো আজকে
নতুন করে ভাবতে শেখাবে —
# সম্মেলন শুরুর তিনদিন আগে বিডিআর অস্ত্রাগার থেকে পাঁচটি অস্ত্র খোয়া
যায়।ভিভিআইপি প্রোটোকল অনুযায়ী অস্ত্র খোয়া যাওয়া স্থানে কোন ভিভিআইপিকে
যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে না।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে
সেখানে গেলেন?
# ঘটনার দিন কি কারনে প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম বাতিল
করে পিলখানায় গেলেন না?
# মেজর জেনারেল শাকিল ও কর্ণেল গুলজার ফোন করে তৎকালীন সেনাপ্রধান ও
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্রোহীদের অসংগঠিত উল্লেখ করে তাদের দমনের জন্য এক
প্লাটুন সেনা পাঠানোর অনুরোধ করলেও,তারা কেন সেনাবাহিনীকে উদ্ধারকার্যে
পাঠালেন না এবং পরবর্তীতে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ও
সেনাপ্রধান একে অপরকে দোষারোপ করেছিলেন?
# সামরিক সমাধানে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের এক উদ্ভট ফর্মুলা
অনুসরণের মাধ্যমে কালবিলম্ব করে বিদ্রোহী ও উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানদের
হত্যাযজ্ঞের সময় করে দেয়া হয়েছিলো কেন?
# সেদিন দুপুরবেলা প্রধানমন্ত্রী ডিএডি তৌহিদ সহ আরো কয়েকজনকে ডেকে
সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে তাদের সাথে মিটিং করলেও,সেই মিটিংয়ে কেন
বিডিআরের ডিজি শাকিলকে ডাকলেন না বা তার কোন খোঁজ জানতে চাইলেন না?
প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করা ১৪ জনের মধ্যে ডিএডি তৌহিদ ছাড়া পরবর্তীতে
বাকিদের কোন হদিস কেন পাওয়া গেল না এবং তাদের নাম কেন এজাহার ভুক্ত হল
না??
# এই ঘটনায় নিহত কর্ণেল গুলজার সহ বেশ কয়েকজন অফিসারকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ
আগে সেনাবাহিনী ও র্যাব থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে বিডিআরে আনা হয়েছিলো কি
উদ্দেশ্যে?
# বিদ্রোহীদের হাতে বিডিআরের ডিজি শাকিল সহ অর্ধশতাধিক সেনা অফিসার মারা
গেছে।এই খবর আমরা পরের দিন নিশ্চিত হলেও,ভারতের NDTV সেদিন সকাল ১০:৪৫
মিনিটে কিভাবে প্রচার করলো?
# টিভিস্ক্রিনে দেখা গেছে,বিদ্রোহী জওয়ানদের মুখে কমলা গেরুয়া রঙের কাপড়
বাধা ছিল।এই কমলা গেরুয়া রঙ ভারতের একটি কট্টরপন্থী সংগঠন "বাজরং দল" এর
প্রতীক।কি কারনে বিদ্রোহী জওয়ানরা এই কমলা রঙের কাপড় ব্যবহার করলো?
# টিভি স্ক্রিনে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনের সামনে ,এক বিদ্রোহী জওয়ানকে
"জয়বাংলা" বলে শ্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিলো কেন?
# কাদের পালিয়ে যাবার জন্য পিলখানার ৫ নং গেট অরক্ষিত রাখা হয়েছিল
এবং
পরেরদিন বিকেলবেলা পিলখানার চারপাশে অবস্থানরত সেনাবাহিনী ও সাধারণ
মানুষদেরকে মাইকিং করে দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো?
# এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে
যান।সেখানে পিলখানার ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের
সামনেই ক্ষোভে ফেটে পরেন বেশ কয়েকজন সেনা অফিসার।প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও,পরবর্তীতেউল্টো সেই অফিসারদেরকে
চাকুরীচ্যুত করা হয়েছিলো কেন?
# পিলখানার ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি
প্রধানমন্ত্রীকেজিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তিনি কেন ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং
পরবর্তীতে কি কারনে সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ধামাচাপা দেয়া হয়েছিলো?
-তাজুল ইসলাম সুজন