কমলের জন্মঃ
১৯ জানুয়ারী ১৯৩৬ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজিলার বাগবাড়ী গ্রামে মানসুর রহমান এবং জাহানারা খাতুনের ঘর আলো করে জন্ম নিলো পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান জিয়াউর রহমান, যিনি জিয়া নামেই বেশি পরিচিত। শহীদ জিয়ার ডাক নাম ছিলো কমল। ছোটবেলা থেকে নম্র এবং মৃদুভাষী কমলের কিছু অংশ কেটেছে বগুড়ায় এবং কিছু অংশ কেটেছে কলকাতায়।
মানসুর রহমান ছিলেন একজন কেমিস্ট এবং সরকারী চাকুরে, সেই সুত্রে কলকাতাতেই থাকতেন তিনি সপরিবারে, কিন্তু ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানিজ এয়ারফোর্সের আক্রমনে তিনি তার পরিবারকে পাঠিয়ে দেন বগুড়ায়। এরপর জার্মান বাহিনীর পরাজয়ের পর এবং জাপানিজদের আক্রমণ শেষ হবার পরেই তিনি তার পরিবারকে ডেকে পাঠান কলকাতায়। সেখানেই কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে ভর্তি করে দেন জিয়াউর রহমানকে এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগ পর্যন্ত সেখানেই পড়াশুনা করে কমল।
এখানে উল্লেখ্য যে এই হেয়ার স্কুলে পড়ার সময়েই ভারতবর্ষের দুইজন ক্যারিশ্ম্যাটিক নেতার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় কমলের আচরনে। হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা কমল কে ভাবিয়ে তোলে এবং তিনি হয়ে পড়েন একজন অন্তর্ঘাতী চরিত্রের মানুষ।
দেশ বিভাগের পরে মানসুর রহমান পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান তৎকালীন পাকিস্তানের রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। সেখানেই জিয়াউর রহমান একাডেমী স্কুল থেকে সেকেন্ডারী কোর্স সম্পন্ন করেন ১৯৫২ সালে এবং ১৯৫৩ সালে তিনি করাচি ডি. জে. কলেজে ভর্তি হন এবং ঐ একই বছর কাকুল সামরিক একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন।
কমলের সেনাবাহিনীতে যোগদান এবং পরাশুনাঃ
কাকুল সামরিক একাডেমীতে যোগ দেয়ার পরেই তিনি বুঝতে পারেন পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য। সেই সাথে কি কারনে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা পিছিয়ে পড়েছিলো। ১৯৫৫ সালে কাকুল মিলিটারী একাডেমী থেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন তিনি। এই সময় তিনি তার ক্লাসের সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন করেন।
এরপরেই জিয়া এক সংক্ষিপ্ত সফরে পূর্ব পাকিস্তানে এসে বুঝতে পারেন মধ্যবিত্ত বাঙালীদের সেনাবাহিনীর প্রতি বিতৃষ্ণ অনুভূতি, যা এই মধ্যবিত্ত সমাজের তরুণদের মিলিটারীতে চাকুরীর ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে রেখেছিলো। অথচ সমগ্র দেশের সম্পদ চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। আর এটা নিয়ন্ত্রণ করতো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানী এবং পাঞ্জাবীদের প্রভাব ছিলো সব থেকে বেশি, সেনাবাহিনীতে তাদের প্রভাব কমানোর জন্যে জিয়া চেষ্টা করতেন বাঙ্গালী তরুণদের মিলিটারী জবের প্রতি আরো উৎসাহিত করতে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সফরে এই ধরনের কাজে সফলতা আসেনি।
করাচিতে আরো দুই বছর সার্ভিস দেয়ার পর তাঁকে বদলী করা হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তিনি তখন পশ্চিম জার্মানী এবং গ্রেট ব্রিটেন থেকে আলাদাভাবে সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান মিলিটারী ইন্টিলিজেন্সে কাজ করেন।
কমলের বিয়েঃ
আগস্ট ১৯৬০ সালে দিনাজপুরের বিখ্যাত মজুমদার বাড়ীর সিকান্দার মজুমদার এবং তৈয়বা মজুমদারের সন্তান খালেদা মজুমদারকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। ২৪ বছরের তরুন জিয়া তার থেকে নয় বছরের ছোট ১৫ বছরের তরুণী খালেদাকে নিজের ব্যাক্তিত্ত্ব, সৌন্দর্য এবং আদ্র মানসিকতা দিয়ে আকর্ষণ করেন। সেখানেই অতি সাধারনভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের বিয়েতে জিয়াউর রহমানের বাবা অংশগ্রহন করতে পারেন নি এবং জিয়াউর রহমানের মা তার আগেই মৃত্যুবরন করেন।
এরপর খালেদা মজুমদারের পড়াশুনা সম্পন্ন করার পর তিনি স্বপরিবারে ১৯৬৩ সালে চলে আসেন করাচিতে।একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়েই শেষ করছি। জিয়াউর রহমান একমাত্র সৈন্য যিনি দুইটি দেশের জীবিত সেনা অফিসারদের সর্বোচ্চ সামরিক পদক একই সাথে অর্জন করেন। একটি ১৯৬৫ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধে হিলাল ই জুরাত এবং অন্যটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম পদক।
ফেবু নোট হতে সংগ্রহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০০