somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন ২০৫০-----------২

২৯ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেব্রুয়ারী ১২, ২০৫০। শাহেদের আজ চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার দিন। শেষ হয়ে যাবে তার ঊনচল্লিশ বছরের কর্মজীবন। জীবনের এই প্রান্তে এসে নিজেকে তার অনেক পরিপূর্ণ মনে হল। পিছনের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, যা পেয়েছি এই ষাট বছরের জীবনে তা এক দমই মন্দ নয়। ভোরে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়া তার অনেক পুরনো একটা অভ্যাস। দেরি না করে তাই সে রাস্তায় নেমে এল। আজকের সকালটা অনেক সুন্দর। গত ত্রিশ বছরে ঢাকা শহর অনেক বদলেছে। হাটা হাটি করার জন্য এখন আর পার্কে না গেলেও চলে। ফুটপাতগুলো অনেক বড় করা হয়েছে, আর পুরো শহেরেই অনেক গাছপালাও আছে। কয়েকদিন আগেই ঢাকা শহরের একটা স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে তার মনটা ভরে গিয়েছিল। পুরো শহর মনে হয় সবুজে ঢাকা। আহা, কি অসাধারণ!!

শেষ বারের মত অফিস করার জন্য শাহেদ প্রস্তুত হয়ে নিল। আর তারপর তাকাল তার সাইকেলটার দিকে। এই বেচারা গত ষোল বছর হল তাকে বহন করছে। আজকের এই বিশেষ দিনের জন্যই শাহেদ সাইকেল ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রেখেছে গতকাল। এখনো দেখতে পুরো নতুনের মতই লাগছে। সাড়ে আটটার দিকে শাহেদ অফিসের দিকে রউনা হল। সাত কিলোমিটার রাস্তা যেতে বড়োজোর ২৫ মিনিট লাগার কথা। ঢাকার সাইকেল লেনগুলো এককথায় চমৎকার। এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে এখন সাইকেল লেন পাওয়া যাবে না। দুই লেন দিয়ে শয়ে শয়ে সাইকেল চলে যাচ্ছে। সেই তুলনায় মোটর গাড়ির সংখ্যা একান্তই নগণ্য।

অথচ আজ থেকে ঊনচল্লিশ বছর আগে এমনটা ছিল না। ঢাকাতে ট্রাফিক জ্যাম তখন ছিল অসহনীয়। চাকরি জীবনের শুরুতে শাহেদ অফিস থেকেই গাড়ি পেতো। কিন্তু ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে অফিস করা ছিল রীতিমত এক বিভীষিকা। শখের বশেই কয়েক বন্ধু মিলে তারা ঠিক করেছিল যে সাইকেল নিয়েই অফিস করবে। প্রথম দিকে অনেক সমস্যার ভেতর দিয়েও যেতে হয়েছে। সবাই টিটকারি মারত। আর তাছাড়া, অন্য যানবাহন গুলোও কোন অজানা কারনে সাইকেল দু’চোখে দেখতে পারত না। কিন্তু যত দিন যেতে থাকলো, শাহেদরা ততই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। একে একে আরও অনেকে এসে যোগ দিল তাদের সাথে। ধীরে ধীরে বিরাট একটা সাইকেল আন্দোলন গড়ে উঠল। সরকারও এই আন্দোলনের সাথে একসময় একাত্ততা প্রকাশ করল। বিদেশী গাড়ির উপর ট্যাক্স বাড়ানো, সাইক্লিং এর প্রতি জনসচেতনতা তৈরি, দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাইকেল উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা, সাইকেল পারকিং এর ব্যবস্থা করা, আলাদা সাইকেল লেন থেকে শুরু করে দরকারি সব কিছুই সরকার নিশ্চিত করল। ২০৩০ এর মধ্যে ঢাকা হয়ে গেল সাইকেলের নগরী!

এগোতে এগোতে শাহেদ কয়েকটা বৃক্ষ ভবন পার করল। বৃক্ষ ভবনের আইডিয়াটা তার দারুন লাগে। ৫০ তলা ভবনের পুরোটুকুতেই হচ্ছে নানা রকমের গাছের চাষ। শাক শব্জি, ফলমূল থেকে শুরু করে সম্ভব সবকিছুই। আর এ থেকেই শহরের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। আর তাছাড়া সব ভবনেই দেখতে পাওয়া যায় বড় বড় সোলার প্যানেল। ঢাকা এখন আর বিদ্যুতের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। তাই জীবাশ্ম থেকে উৎপন্ন পেট্রোল, ডিজেলের গাড়ি দেখতে পাওয়াটাই মুশকিল, মোটামুটি বেশিরভাগই এখন বিদ্দুৎ চালিত গাড়ি। তারপরও সাইকেলের তুলনায় অন্য সব যানবাহনের ব্যাবহার খুবই কম। আর দূরে কথাও যাওয়ার জন্য যেহেতু মোটর গাড়ির বিকল্প নেই, সেখানেও বেশিরভাগই ব্যাবহার করা হচ্ছে বায়োডিজেল, যা সাধারণত উৎপন্ন হয় সয়াবিনের মত বিভিন্ন রকমের ডাল জাতীয় ফসল থেকে। এমনকি উড়োজাহাজও এখন নিয়মিত বায়োডিজেল দিয়ে চলছে।

গাছপালার সংখ্যা বাড়ার কারনে ঢাকায় বাতাসও পাওয়া যায় এখন প্রচুর, বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। আর তাই আজকাল অনেকে দেখি Windmill বানাচ্ছে। সাইকেলে প্যাডল মারতে মারতে শাহেদ ভাবল, জীবদ্দশায় এমনটা দেখতে পাবে, আজ থেকে ঊনচল্লিশ বছর আগে সে কখনো কল্পনাও করতে পারত না!!

শাহেদ তার অফিসে পৌঁছে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পৌছতে মাত্র ২০ মিনিট লেগেছে। শাহেদ আবারো একবার মনে মনে বলল, জীবনটা কি এর চেয়ে ভাল হতে পারত!!!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানবিক করিডোর দেওয়ার অর্থ দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিকিয়ে দেয়া।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৪


জানি না তিনি কোন প্রেক্ষিতে কথাটা বলেছেন, কিন্তু রাখাইনে মানবিক করিডোর দিলে সেখানে বাইরের সেনা মানবিক সহায়তা ও শান্তরক্ষার্থে প্রবেশ করবে, যা ধীরে ধীরে সামরিক ঘাঁটিতেও পরিণত হতে পারে। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×