somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন ২০৫০--------------------১

২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ রাতে ঠাণ্ডা মনে হয় আরও বেড়েছে। সন ২০৫০, জুলাই মাস, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা প্রায় -৫ ডিগ্রি ছুয়েছে। রুম হিটার থাকায় তাও রক্ষা। মাহফুজের ঘুমটা ভাঙল অস্বস্তি নিয়ে, নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাড়াতাড়ি রুমের অক্সিজেনের মাত্রাটা দেখে নিল মাহফুজ। আশ্চর্য, কালকে রাতেইতো অক্সিজেন ঠিকঠাক ছিল। তাহলে মনে হয় অক্সিজেন টিউবটা নতুন করে রিফিল করে নিতে হবে। অস্বস্তি নিয়েই মাহফুজ অফিসের জন্য প্রস্তুত হল। সাড়ে সাতটার মধ্যে না বের হতে পারলে আজকেও দেরি হয়ে যাবে। অফিসের সময়টা তার একদম ভাল লাগে না। এত ট্রাফিক জ্যাম পার করে কি ১১টা – ৩টা অফিস করা যায় ? তাও অবশ্য ভাল, সে শুনেছে ২০১২ তে নাকি ৯টা – ৫টা অফিস করতে হতো !! কিভাবে সেটা সম্ভব হতো এখনো সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে মনে করে অক্সিজেন মাস্কটা পরে নিল। নইলে গাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতেই শ্বাস বন্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে।

মাহফুজ গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে আজ ৩ নাম্বার ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে বলল। গতকাল ৪ নাম্বারটা দিয়ে গিয়ে পুরো ধরা খেয়েছে। ঢাকায় এখন প্রতি রাস্তার উপর দিয়ে ৫টা করে ফ্লাইওভার হয়েছে। কিন্তু কোনটার জ্যামের অবস্থা কত খারাপ, আগে থেকে তা অনুমান করা অসম্ভব। মনে মনে সে ভাবল আজকে ৩ নাম্বার দিয়েই সুযোগটা না হয় নেই। কিছু দূর যেতেই, ড্রাইভার বলল,

‘স্যার, গাড়ির ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে গেছে। সামনের ষ্টেশন থেকে কি ভরে নিব?’

‘ঠিক আছে নাও।‘

ঢাকায় এখন পেট্রল, সিএনজি ষ্টেশনের মত অনেক অক্সিজেন রিফুয়েলিং ষ্টেশন আছে। যদিও অনেক লম্বা লাইন, কিন্তু না গিয়ে তো উপায় নেই! প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকে অক্সিজেন রিফুয়েল করা গেল।

৩ নাম্বার ফ্লাইওভারের অবস্থা একেবারেই যা তা আজকে। যত দূর দেখা যায়, গাড়িগুলোর কোন নড়াচড়া নেই। গাড়ির জানালা দিয়ে মাহফুজ আকাশের দিকে তাকাল। উপরের উড়ন্ত গাড়িগুলো ও দেখা যাচ্ছে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ঢাকার বড়লোকেরা এখন উড়ন্ত গাড়ি ব্যাবহার করেন। মাহফুজ মধ্য আয়ের মানুষ। তাই অনেক শখ থাকা সত্ত্বেও সে এখনো কোন উড়ন্ত গাড়ির মালিক হতে পারেনি। তবে আকাশের জ্যামের অবস্থা দেখে মাহফুজ মনে মনে একটু হেসে নিল। নিজেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার একটা চেষ্টা!

‘দবির, এসিটা বাড়িয়ে দাও’, মাহফুজ ড্রাইভারকে বলল।

‘স্যার, এসি ফুল!’

গরমটাও যা পড়েছে। বাইরে এখন প্রায় ৪০ ডিগ্রি। মনে হচ্ছে গাড়িটা বদলেই ফেলতে হচ্ছে। নতুন মডেলের একটা গাড়ি এসেছে বাজারে, গাড়ির তাপমাত্রা যে ২৫ ডিগ্রি পর্যন্ত নামাতে পারে।

গাড়িতে বসে থেকে কি করবে, চিন্তায় পড়ে গেল মাহফুজ। ভাবল, ইন্টারনেট থেকে খবরটা দেখে নেয়া যাক। ল্যাপটপ খুলেই সে দিনের আবহাওয়ার আপডেটটা দেখে নিল। সর্বোচ্চ ৫৬ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন -৭ ডিগ্রি, বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ২৬%। গ্রীন হাউস এফেক্ট মনে হয় আরও বেড়ে গেছে। অন্য খবরগুলোতে এবার সে চোখ বুলাতে শুরু করল। সারা দেশে প্রচণ্ড গরম ও ঠাণ্ডায় প্রায় ৫০০ জন মারা গেছে গতকাল। কি যে হচ্ছে এই দেশটার!! মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এইদিকে, তার ঘনিষ্ট বন্ধুর ধরা পরেছে স্কিন ক্যান্সার। পরিচিতদের মধ্যে তাকে নিয়ে এমন ছয়জনকে পাওয়া গেল। ডাক্তাররা বলেন Ozone স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় নাকি এখন স্কিন ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। এম্নিতেই অশুখ-বিশুখ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

বিদেশের পাতায় দেখা গেল একটা ইন্টারেস্টিং খবর। প্রায় পাঁচ বছর পর নাকি একটা পোলার ভাল্লুক দেখতে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরাও অবাক, এত বছর পর এইরকম একটা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাল্লুক কিভাবে পাওয়া গেল!! বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে পোলার ভাল্লুকের সাথে আরও অনেক স্থলজ আর জলজ প্রাণী আজ বিলুপ্ত। খবরটা পড়তে পড়তেই মাহফুজের বাবার কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেবেলায় বাবা গল্প করতেন, আমাদের দেশে ইলিশ নামে একটা মাছ ছিল। খেতে নাকি ছিল অসাধারণ! কিন্তু অতি মাত্রায় মাছ ধরা আর বৈশ্বিক উষ্ণতার কারনে বহু বছর আগেই তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে ! তার জেদের কারনেই বাবা তাকে একবার যাদুঘরে নিয়ে গিয়ে ইলিশ মাছের ফসিল দেখিয়ে এনেছিলেন।

সাড়ে দশটা বাজে। মাহফুজ ল্যাপটপটা বন্ধ করে আবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। অফিস, তুমি আর কত দূর!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×