somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞাপনের নীতিমালা প্রসঙ্গে...

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞাপনের নীতিমালা নিয়া দেখলাম লোকজন বেশ উৎকন্ঠিত...বিজ্ঞাপন দেইখা আমাগো বাঙালী অশিক্ষিত সমাজ অনৈতিকতা-মর্ষকাম-ধর্ষকাম এইসব শিখতাছে...তরুন সমাজ মানসিক ভাবে অসুস্থ হইয়া পরতেছে এইরম আশঙ্কার অতলে আছেন এই সব জ্ঞানীগুণী জন। একটা বিজ্ঞাপনি সংস্থায় প্রায় ৮ বছর টানা কাজ করনের অভিজ্ঞতা থেইকা আমি একটু আশ্চর্যান্বিত হই এইরম ভাবনায়। বিজ্ঞাপন আদৌ মানুষরে প্রভাবিত করে কি না, সেইটা নিয়া বিজ্ঞাপনিমহলে কোন সংশয় নাই...বিজ্ঞাপন জগতের মহামতি অগিলভি সাহেব নিজে তার প্রাথমিক পাঠে যেই কারনে ক'ন What really decides consumers to buy or not to buy is the content of your advertising, not its form. তারপরেও বিজ্ঞাপনের কাঠামো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠতেছে। বিজ্ঞাপনের সংস্কৃতিতে এমন কিছু বিষয় চইলা আসতেছে, যার সাথে আমাগো আর্কেটাইপ সোসাইটির সংঘর্ষ অনিবার্য...এই যে আর্কেটাইপের সমাজ সেইটা আসলে কি? সেই সমাজের বাস্তবতা আমরা কেমনে উপলব্ধ করি সেইটা খুবই জরুরী বিষয়।

পণ্যের বিপননে বিজ্ঞাপন বিষয়টার কোন মাহাত্ম আছে কি না, সেইটা নিয়া বিজ্ঞাপনি সমাজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে বহু অমীমাংসিত বিতর্ক রইয়া গেছে। তয় বিজ্ঞাপনের একটা প্রভাব কেউ অস্বীকার করতে পারে নাই, আর তা হইলো জনমনে নাড়া দেওয়া। যেইটারে আধুনিক বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ জর্জ অরওয়েল অভিহিত করেন disruption হিসাবে। ভোক্তার আগ্রহ উদ্দীপ্ত করনের লেইগা তার চিন্তার জগতে একটা দ্রব্যরে পণ্য হিসাবে প্রবেশ করানোটাই সহজ কথায় বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য। এখন এই পণ্য কেমনে register করে সেইটার বিবেচনা আসলে সেকেন্ডারী হইয়া উঠে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আর তার লেইগাই মুক্তবাজারে আমরা দেখি উদ্ভট সব গল্পরে বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার হইতে...যারে আমরা প্রায়শঃই ক্রিয়েটিভিটি কই।

যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমি ক্রিয়েটিভিটি শব্দটা ব্যবহার করতে নারাজ। অনেক বেশী মানানসই হয় আইডিয়া শব্দটার প্রয়োগ। কিন্তু এই আইডিয়াগুলি শিক্ষামূলকতা নিয়া বাঁচলে আধুনিক জমানায় ভোক্তার মন আর মনন পাওয়া খুব সহজ ব্যাপার না। কারন ভোক্তা বিজ্ঞাপনে চটক দেখতে চায়...আবার একই সাথে চায় জীবনঘনিষ্টতা দেখতে। আমার আগের লেখা ছিলো decadence নিয়া সেইখানে আমি একটা শূণ্যসময় নিয়া কিছু কইতে চাইছিলাম আর যাতে আমি পরিপূর্ণ মাত্রায় ব্যর্থ হইছি। অধিকাংশ পাঠকের ক্ষেত্রেই আমার লেখা অবোধ্য হইছে বইলা মন্তব্যরাজী থেইকা স্পষ্ট বুঝন যায়। কিন্তু পুঁজিতান্ত্রিকতা আসলেই একটা অসহায় সময় তৈরী করছে। প্রতিযোগিতার মাহাত্ম এখন জীবনের সবখানে। আমরা এখন দেখি পণ্যের ফাংশনাল ব্যবহারবিধি'র চাইতে পণ্যের চিত্তাকর্ষক ডিজাইনের প্রতি কর্পোরেট উৎপাদকরা বেশি নিমগ্ন। ব্যবহার্য্য দ্রব্যে মানবিকতার চাইতে যান্ত্রিকতার উৎকর্ষের হার অনেক বেশী। প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের গুণাগুণ বিবৃত করনের চাইতে তার কাঠামোগত সৌকর্য্য বাড়ানের ধান্দাটাই বেশি থাকে, যাতে মাধ্যমে প্রচারিত অন্য বিজ্ঞাপনি প্রচারের থেইকা আলাদা হওন যায়। যারে বিজ্ঞাপনি ভাষায় কওয়া হয় clutter break করা।

পণ্য বিপননের মূল উদ্দেশ্যটা এখন আর সামাজিক অগ্রগতি না...এখন লভ্যাংশই হইলো একটা ব্যবসার একমাত্র নীতি। যেইসব কর্পোরেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিছু সামাজিক দায়িত্ব(?) পালনের ধুয়া তুলে তাগো খুব কাছ থেইকা দেখনের অভিজ্ঞতা থেইকা জানি ভোক্তার সন্তুষ্টি আদায় অথবা বাজারে যাতে কোন বিরূপতা না তৈরী হয় তার লেইগাই তারা সামাজিক দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়। যেমন সবগুলি মোবাইল ফোন কোম্পানীর বিরুদ্ধে সামাজিক বিরূপতা তৈরী হওনের সম্ভাবনা থাকে সারাক্ষণ...যেইকারনে তারা CSR (corporate social responsibility) ইস্যূ নিয়া ভাবিত থাকে। আমাগো যেই আর্কেটাইপ সামাজিক রূপরেখা তার সাথে বিজ্ঞাপনের সংঘর্ষ হইলেও যাতে ভোক্তা বিদ্রোহী অবস্থানে না চইলা যায় তার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করনের তাগীদেই এই আচরন। শহুইরা মধ্যবিত্ত বাঙালী সমাজের রুচীবোধের সাথে সাংস্কৃতিক বিরোধটারে বিজ্ঞাপন এক্কেরে শেষ সীমা পর্যন্ত পরখ করতে চায় বইলাই এই আচরন।

গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা কথা'র ব্যবহার দেখানের কারনে মিথ্যা কথা কওনরে উৎসাহিত করা হয়, বিষয়টারে এমনে আসলেই ভোক্তারা ভাবেন কি না সেইটা হইলো প্রশ্ন...ভোক্তা বরং তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতার লগে মিল পায়...আর যেই কারনে ঐ পণ্যের ব্যবসায় সমৃদ্ধি ঘটে। নীতিমালা কইরা আমরা যদি এই ধরণের মিথ্যার ব্যবহার নিষিদ্ধ করি তাইলে কি সমাজে সত্যবাদীতার প্রসার ঘটবো? মনে হয় না...সমাজের নিয়মগুলি দাঁড়াইছে সুদীর্ঘ সময়ের প্রবহমানতায়। বিজ্ঞাপন সেই সময়রে কেবল প্রতিফলিত করে মাত্র...কেবল বিজ্ঞাপনের বিরোধীতা কইরা আসলে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক এইসব আচাররে পরিবর্তনের কোন সুযোগ নাই। বরং বিজ্ঞাপনে জাতীয়তাবাদের ব্যবহার আমার কাছে অধিক problematic মনে হয়, বরং জাতীয়তাবাদের কান্ধে ভর দিয়া তখন কর্পোরেটের দুষ্কর্ম সিদ্ধি পায়।

নীতিমালা দিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশন বহুত বিদেশী পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধ করছে। যেইসব বিজ্ঞাপনে ফ্যান্টাসী জগতের ছবি দেখানো হইছে। কিন্তু এইসব ফ্যান্টাসী কি রোধ করা গেছে!? পুঁজিতান্ত্রিকতার এই অসহায় ডেকাডেন্সের কালে মানুষ এমনেই অর্থহীনতার শিল্প চর্চা করে। humane বিষয়গুলি শিল্পের প্রধান বিবেচ্য না হইলেও কোন সমস্যা নাই। সমাজে একরম আচরন তৈরী হইবো তার চর্চা হইবো হরেদরে আর আমরা অনেক প্রান্তিক সমস্যা বিজ্ঞাপনে তার ব্যবহারের বিরুদ্ধে উচ্চকিত থাকুম, সেইটা আসলে খুব ভালো সমাধান না। বিজ্ঞাপনে আর যাই থাকুক না থাকুক...পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে ভোক্তার মনোযোগ আকর্ষণই থাকে তার মূল উদ্দেশ্য। পণ্যের বার্তা ভোক্তার কাছে পৌছাইয়া দেওনটাই বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য...পণ্য যেই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরী করে পুঁজিতান্ত্রিকতার মসনদরে সমুন্নত রাখতে, সেইটা হইলো মূল সমস্যা।

আমি যেইটা কইতে চাই সেইটার লাগাম খুব বেশি ছাড়নের আগেই বলি...বিজ্ঞাপন নিয়া হা-হুতাশ আসলে খুব জরুরী মনে হয় না আমার কাছে, কারন বিজ্ঞাপন সমাজের টিকা থাকা সব অসঙ্গতি আর নোংরামীর প্রতিফলন মাত্র। ডেকাডেন্সের এই যুগে প্রতিযোগিতা এইরমই হয়, এইটাই স্বাভাবিক। যদি সমাজকাঠামোরে জবাবদিহীতার মুখামুখি না করা হয় তাইলে এইটাই পণ্যসভ্যতার ধারাবাহিক প্রকাশ হইতে থাকবো...একটা নোংরা অসম-অসঙ্গতির সামাজিক সংগঠনের কাছে তার একটা আচরন পরিশুদ্ধি'র দাবীটা বরং অনেক হাস্যোদ্দীপক।



সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২৫
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×