বর্তমানের সাবমেরিন গুলো সাধারণত চুরুট আকৃতির হয়! প্রথম দিকে সাব-মেরিনে যে ডিসাইন দেখা যেতো-তা হলো "teardrop hull"(হাল হলো জাহাজের সাধারন কন্সট্রাকসন ডিসাইন)! এই ধরনের হালের জন্য পানির নিচে পানির টান টা অনেক কম অনুভূতো হয়! চালোনাশক্তির সীমাবদ্ধতার কারোণে প্রথম দিকের সাবমেরিন গুলো পানির নিচের চেয়ে উপরেই বেশি চলতো এবং এর স্পিড অনেক কম ছিলো!
বর্তমানে হাল ডিসাইন অনেক উন্নতমানের এবং সাবমেরিনের চারপাশে এক ধরণের লেয়ার থাকে যা শব্দ শোষণ করে নেয় ফলে এর অবস্থান অত সহজে নির্ণয় করা যায়না! কেনোনা পানির নিচে শব্দ তৈরী করেই কিন্তু পানির নিচের যেকোনো বস্তুর অবস্থা নির্ণয় করা যায়! শব্দটা যখন পানির নিচে কোনো বস্তু পেয়ে তাতে বাধা পেয়ে ফিরে আসে তখনি বোঝা যায় কোনো বস্তুর উপস্থিতি! কাজেই এই শব্দ যদি ফিরে না যায় তাহোলে তো আর কেঊ বুঝবেইনা যে সামনে কিছুর উপস্থিতি বিদ্যমান!
সাবমেরিনের প্রপেলার যতটা সম্ভব পাতলা করা হয় যাতে করে তা অনেক কম শব্দ উতপন্ন করে এবং অনেক বেশি বেগ পেতে পারে! এ কারোনে প্রপেলার তৈরীতে সাধারনত বেরিলিয়াম ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হয়! এর বৈশিস্ট হলো-এর গলনাঙ্ক অনেক বেশি,অনেক বেশি তাপ আর ধাক্কা সহ্য করতে পারে!
সাবমেরিনের উপরে যে টাওয়ার থাকে ওটাই কিন্তু কন্ট্রোল রুম! আপনার নিশ্চয় লঞ্চে দেখেছেন-লঞ্চের উপরে একটা দন্ড অনেক উচু পর্যন্ত বিস্তৃতো থাকে-একে বলে মাস্ট! সাবমেরিনে কন্ট্রোল টাওয়ারের উপরে এরকম মাস্ট আছে যাতে রেডিও,রাডার ও ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা আছে! এরি মাধ্যমে সাবমেরিন বন্দর বা অন্য কোনো জাহাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে! রাডার এর মাধ্যমে সাবমেরিন বিমান বা জাহাজের অবস্থান সনাক্ত করতে পারে!
প্রথম দিকে সাবমেরিন গুলো স্টীম ইঞ্জিন চালিতো ছিলো! পরে এতে ডিসেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়! বর্তমানে সাবমেরিন গুলো নিউক্লিয়ার শক্তিতে চলে! কিন্তু এটা অনেক বেশি ব্য্যবহুল! তাই ছোটো সাবমেরিন গুলো এখোনো ডিসেল-ইলেক্ট্রিক পাওয়ারে চলে!
সাবমেরিনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ হলো –আধুনিক সমরাস্ত্র টর্পেডো যা সয়ংক্রীয়ো ভাবে শত্রু সেনার জাহাজে আঘাত হানে! একটি সাবমেরিনে ২০-২৫টি টর্পেডো থাকে! এছাড়া বর্তমানের সাবমেরিন গুলোতে থাকে ক্রুস-মিসাইল! আর মিসাইলের ক্ষমতা তো আপনারা জানেন ই! আগে এই মিসাইল উতক্ষেপনের জিন্য সাবমেরিনের পানির উপরে থাকতে হতো! কিন্তু বর্তমানের সাবমেরিন পানিতে নিমজ্জিতো অবস্থায় ই মিসাইল উতক্ষেপন করতে পারে! এছাড়া ব্যালাস্টিক মিসাইল ও সাবমেরিনে থাকে! বর্তমানে জার্মানী এক ধরনের সাবমেরিন তৈরী করছে যা মিসাইল দিয়ে ASW helicopters কে আঘাত হানতে সক্ষম!
একটি বড় ধরনের সাবমেরিনে ৮০ জন এর মত ক্রু থাকতে পারে! যদিও অধিকাংশ নেভী সাবমেরিনে মেয়ে ক্রু নিয়োগ দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে! তবে ১৯৮৫ সালে রয়াল নরোয়েন নেভী সাবমেরিনে নারী ক্রু নিয়োগ দেয়! এর পরে অনেক ক্রু ই নারী ছিলেন! তার মানে,নারীদের বিচরণ এখানেও!
সাবমেরিন নিয়ে তো অনেক কথা হলো-এবার একটা বিস্ময়কর তথ্য দিইঃ বাংলাদেশে বাসের মত সাবমেরিনে কিন্তু মুখোমুখি সংঘর্ষ ও হয়! ২০০৯ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে দুটি সাবমেরিন-HMS Vanguard এবং Le Triomphant এর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিলো পানিতে নিমোজ্জিতো অবস্থায়! দুটো সাবমেরিন ই ছিলো-nuclear-powered ballistic missile submarines! এ দুটো ছিলো স্কটল্যান্ড ও ফ্রাঞ্চের! অবশ্য তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি!
প্রথম পর্বঃ
সাবমেরিন-পানির নিচের দৈত্য!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:২৫