somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করবেন কি ভাবে?

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিবারের কোন সদস্য করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন - আগে সেইটি নির্ধারণ করুন। যে কোন কারণে যদি কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে - ইমিউনোকম্প্রমাইজড - তাহলে তাঁদের মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

কারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ?

১। জন্মগত ভাবে ইমিউন সিস্টেমের কোন ত্রুটি আছে।
২। রোগাক্রান্ত অবস্থা - ক) অটোইউমিউন ডিজিজ
খ) ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট-লাং-লিভার-কিডনি ডিজিজ
গ) ক্যান্সার, এইচ আই ভি পজিটিভ

৩। জীবনযাপন- ক) অতিরিক্ত ওজন
খ) বদভ্যাস - ধূমপান , মদপান, মাদকাসক্তি
গ) শুয়ে বসে থাকা

৪। ইমিউন সিস্টেম সাপ্রেস করে এমন ওষুধ খান - ট্রান্সপ্লান্ট , এলার্জি
৫। গর্ভবতী

পরিবারে এমন কেউ থাকলে কি করবেন ?

১। বাইরের মানুষের সাথে , স্পর্শিত জিনিস পত্রের সাথে (মাছ, মাংস, কাচা সবজি ইত্যাদি) সংযোগ বিহীন থাকা - টোটাল আইসোলেশন
২। নিজেরা বাইরে যাবে না । পরিবারের অন্যরা বাজার কিংবা হাসপাতাল , উপাসনালয় এড়িয়ে চলবে যতটা সম্ভব। মানুষের ভিড়ে যাবেন
না ।
৩। যদি যেতেই হয় - তাহলে -
ক) শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে থাকে এমন পোশাক পরবেন - ছেলে মেয়ে উভয়েই । গরম ঠান্ডা না ভেবে জান বাঁচানো ফরয । ফুলহাতা, ফুল প্যান্ট, পায়ে মোজা, হাতে গ্লাভস (সুতি কাপড়ের , বার বার ধুয়ে পরা যায়) , মুখের ওপরে মাস্ক (সুতি কাপড়ের , বার বার ধুয়ে পরা যায়) , মুখমন্ডলের উপরে ফেস প্রটেক্টর ( ট্রান্সপারেন্ট ফাইল এর সাথে ফোম আর ফিতা লাগিয়ে ঘরেই বানাতে পারেন) , চুলের উপরে গামছা, চাদর, কিংবা সৌদি আরবের মতো হেড গিয়ার দিয়ে ঢাকতে পারেন। মেয়েদের জন্য একই নিয়ম , শুধু পোশাক ভিন্ন ভিন্ন।

৪। রক্ত বা বডি ফ্লুইড লেগে থাকে এমন কোন জিনিস ( মাছ, মাংস, জীবীত প্রাণী ) প্লাস্টিকের গ্লাভস ছাড়া ধরবেন না।

৫। গ্লাভস পরা অবস্থাতেও মুখ মন্ডল স্পর্শ করবেন না, নিজের কিংবা অন্যের।

৬। বাইরে থেকে এসে -
ক) বাহিরের জুতা বাহিরেই খুলবেন। মুজা পরে ঘরে ঢুকবেন। বা ঘরের স্যান্ডেল এ পা গলিয়ে ঢুকবেন । পরে এই স্যান্ডেলসহ
গোসল করতে হবে যাতে স্যান্ডেলও সাবান পানিতে ধোয়া হয়ে যায়।
খ) দরজাতেই ফেলে দেওয়ার জিনিস একটা প্লাস্টিক ব্যাগে আলাদা করে ফেলবেন ডাস্টবিন এ ফেলার জন্য।
গ) আবার ব্যবহারের জিনিস ও পোশাক খুলে প্লাস্টিক ব্যাগে করে অথবা সরাসরি ওয়াশিং মেশিন বা সাবান পানির বালতিতে ডুবিয়ে
দিবেন ।
ঘ) দরজা থেকে গোসলখানা যেতে অন্য কেউ বা অন্য কিছু স্পর্শ করবেন না। যে সব জায়গায় হাটলেন , যা যা স্পর্শ করলেন - সব
কিছু সাবান পানি ও ডিসইনফেক্ট্যান্ট দিয়ে মুছে ফেলতে হবে প্রতিবার।
ঙ) নিজে শরীরের আনাচে কানাচে সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে ডলে ডলে গোসল করবেন । নাকের ভেতর, মুখের ভেতর, চোখের ভেতর
ভালো করে পরিষ্কার করবেন। মাউথ ওয়াশ দিয়ে সঠিক নিয়মে কুলি করবেন ।

৭। যা কিছু ধোয়া যায় না ( হ্যান্ড ব্যাগ, টাকা পয়সার ব্যাগ, চামড়ার জিনিস ইত্যাদি ) জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে (৯৯% এল্কোহল স্প্রে) পরিষ্কার করে কড়া রোদে, খোলা বাতাসে দিয়ে দিবেন। শুকানোর আগে ধরবেন না।

৮। দরজার হাতল, নব, কলিং বেল , লিফটের বাটন ইত্যাদি জিনিস টিস্যু পেপার দিয়ে ধরা অভ্যাস করুন। টাচ করার পরে টিস্যু ফেলে দিন। গ্লাভস দিয়ে ধরলে খেয়াল রাখবেন এরপর যেন মুখমন্ডল , চশমা ইত্যাদি না ধরা হয়।

৯। টাকার কয়েন সাবান পানি আর টাকার নোট কড়া গরম ইস্ত্রি দিয়ে জীবানুমুক্ত করবেন। খবরের কাগজ নেওয়া বাদ দেন। অনলাইনে পড়ুন। আর না হলে ইস্ত্রি করতে হবে।

১০। বাহিরের কেউ ঘরে ঢুকাবেন না । আর ঢুকলে একই নিয়মে গোসল না করে পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যের সাথে একই রুমে বা করিডোরে আসতে দিবেন না। এবং ঘরের ভেতরেও মাস্ক ছাড়া কথা বলবেন না। সাধারণ কথা বলার সময়েও মুখ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থুতুর কনা বাতাসে ভেসে যায় আর ঐ থুতুর কনা ( মাইক্রো ড্রপ্লেট) এর সাথে করোনার ভাইরাস পুরো রুমের বাতাসে ছড়িয়ে যায়। এই থুতুর কনা হাঁচি কাশির কনার মত ভারি না । এরা বাতাসে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। এবং আপনার আপনজনকে আক্রান্ত করতে পারে। বাড়ির ড্রাইভার, কাজের লোক, দারোয়ানকে মাস্ক ছাড়া কাছে আসতে দিবেন না।

১১। মাস্ক ছাড়া কথা বললেন মানে বাতাসে বিষ মেশালেন।

১২। বারে বারে সাবান দিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুবেন। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এলকোহল স্প্রের চেয়েও সাধারণ সাবানের পানি অনেক বেশি কার্যকরী যদি সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধুতে পারেন।

১৩। পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যকে স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়ে নিবেন, পরিষ্কার থাকলেও ।

১৪। নিজে আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহ হোক বা না হোক - টেস্ট করবেন যদি সুযোগ থাকে। পিসিয়ার অথবা এন্টিজেন টেস্ট । মনে রাখবেন - ৩৩% ভাইরাস বহনকারী এবং বেশির ভাগ শিশু কিশোরের কোন উপসর্গ থাকে না কিন্তু অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। এবং সেইটা নিজের অজান্তেই।

এই এত কিছু এক বার দুই বার করলে হবে না। করোনা দুনিয়া থেকে একেবারে যাবে না। যদি নিজের বাবা-মা, বাচ্চা কিংবা জীবন সঙ্গীকে বাঁচাতে হয়- তাহলে এই কাজ গুলো প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মনে রাখবেন - আপনার পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যের জীবন উনারা নিজে বাঁচাতে অক্ষম আর উনারা যদি মারা যান , তাহলে নিজের কারণে মরবেন না- মরবেন অন্যদের বেপরোয়া অবহেলার কারণে। ওটা আসলে মৃত্যু নয়- নিজের পরিবারের হাতে খুন হওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×