somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ছবি যায় দাগ কেটে মনে

২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাধারনত যেই বয়সটাতে নানা রকম মোহনীয় মুগ্ধতায় অভিনেতা অভিনেত্রীদের ছবিতে কিশোর কিশোরীদের ঘর ভরে যায় সেই সময়টাতেও আমার দেয়াল ছিলো লজ্জাজনক রকমের ফাঁকা । অনেকের অভিনয়ই ভালো লাগতো । কিন্তু কারো ছবি ঝুলিয়ে , পকেটে নিয়ে ঘুরে আহা উহু করতে হবে বা কোন রোমান্টিক স্বপ্নে বিভোর হইতে হবে , এইটা কেন জানি কখনোই মনে হয় নাই । খুব স্বাভাবিক কারনেই প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের অনেক অভিনেতা ভীষণ সুন্দর দেখতে । আমার কেন যেন সুন্দর চেহারার পুরুষ দেখেও অভিনয় ভালো না হলে ভালো লাগত না । এইটা মহান হইবার কোন খায়েশ না । বরং বান্ধবীদের নানা কথায় নিজের মস্তিষ্ক নিয়ে সামান্য সন্দেহ দেখা দেওয়ায় বড়দের সাথে আলাপ ও করেছিলাম । এই কচি বয়সে ভারিক্কী মনভাবের কারনে রওশন জামিল উপাধি প্রাপ্ত হইলাম । আম্মিজান দেখি আমারে শ্বাশুড়ি আম্মা ডাকে ! কি বিপদ!

যা হোক, তখন মেয়ে মহলে টম ক্রুজ হিট। খাতার পাতায়, জ্যামিতি বাক্সের ফাঁকে দিল মে চাক্কু ! ছেলেরা চেঁচায় , “ আয়া হায় মওসম পেয়ার কা , গায়া জামানা ইন্তেজার কা” আর মেয়েরা চুপি চুপি গুনগুনায় “ টেক মাই ব্রেদ এওয়ে” । সিরিকাস অবস্থা । তা একদিন বলে বসলাম টমরে দেখলে মনে হয় ওরে কেউ চিমটা দিয়ে টেনে লম্বা করে ফেলেছে । আর যাবা কোথায় , রাম ধোলাই খাই আর কি ! পরবর্তী দশটা দিন আমার টিফিন চুরি গেল নিয়মিতই । টম অভিনয় ভালো করে না , তা তো অবশ্যই না কিন্তু তার ছবি বুখে চেপে বালিশ ভিজানোটা বড্ড বাড়াবাড়ি লেগেছিলো । এর অনেক পরে টমের ১৮ বছর বয়সের লিজেন্ড ছবিটা দেখে কিডনীর ভিতরে হার্ট এটাক খেয়ে গেলাম। মানুষ এত্ত সুন্দর হয় কি করে ? ওইদিন বান্ধবীদের মাফ করে দিলাম।

এর মধ্যে বান্ধবী আলু ( মঈনের আলু না , কবিগুরুর আলু) প্রেমে পড়লো ওয়াসিম আকরামের । সারাক্ষণ তার ভিউকার্ড নিয়া ঘুরে আর কেউ ওয়াসিম আকরামের বিরুদ্ধে কিছু বললেই ভ্যাঁ। পাকিস্তানী বলে আমি নিতান্তই তারে সান্তনা দেওয়া দেখে বিরত ছিলাম । ক্রিকেট পছন্দ করলেও সেই আমলেও একই কারনে মাততে পারিনি ইমরান নিয়ে ।পাকিস্তানী সেজান জুস ছিলো চোখের বিষ, দেশী কাপড় ছাড়া পরতাম না। বড় বোনদের মহলে এক সময় দেখলাম মেল গিবসনের অনেক বেইল। কি এক লিথাল ঊইপন দিয়ে সবার হৃদয় আমচুর করে দিয়েছেন এই ভদ্রলোক। ছবিটা দেখলাম। পছন্দ হলো না । ছবির কারনে মেলরেও ফিমেল হার্টে স্থান দিলাম না । এর বহু বছর পরে কি এক কুক্ষণে দেখলাম ব্রেভ হার্ট। ছবির যেই দৃশ্যে যুদ্ধের ময়দানে মেল শত্রুর মুখোশ উন্মোচন করে দেখে এইটা তার জিগরী দোস্ত আর তারপর দশাশই কালা পাহাড়ের মত লোকটার চোখে পানি, আমি ঐ ময়দানেই হারাইলাম হুশ, মেরা দিল খুশ! কিন্তু , তারপরেও পাগল হই নাই। উলটা আমার ফেবারেট অভিনেতা হয়ে গেলো ( এখনো আছে ) রবিন উইলিয়ামস । আমি তারে দেখে হাসি আর সবাই আমারে নিয়া হাসাহাসি করে । এই রকম বিকট চেহারার অভিনেতার জন্য আমার এত জান পেহচান কেন । কেউ যদি তার প্যাচ এডামস ছবিটা দেখে তাহলেই বুঝবে কেন। ঐ ছবির একটা কথা আমার পেশা জীবনের মূল মন্ত্র হয়ে আছে। You treat a disease, you win, you loose. You treat a person, I guarantee you, you'll win, no matter what the outcome.

এইভাবেই একান্ত কুঠুরীর শুন্য দেওয়ালে মনের খেয়ালে কেটে যাচ্ছিল দিন। হঠাৎ এক ঘন ঘোর রাত্তিরে দেখা পাইলাম এক যুবকের । চেহারায় কঠিন আর কোমলের আশ্চর্য মিশেল। কি যেন মাদকতা মাখা । প্রথম ছবি কোনটা দেখেছিলাম এখন আর মনে নাই । তবে মনে আছে যে ছবির কারনে তার নাম সবার মুখে মুখে ফিরতো । দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের হলোকাস্টের ছবি শিন্ডলার্স লিস্ট । বহুবার বহুভাবে পড়া হলো ছবিটা সম্পর্কে কিন্তু দেখবো দেখবো করে দেখাই হলো না । আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সে ছবি আজও দেখিনি , ঘটা করে দেখবো বলে । দেখিনি হয়ত ভালোই হয়েছিলো কারণ ছবিতে ফাইন্সের চরিত্র ভিলেইনের। আর সত্যি কথা বলতে আমার আগ্রহের মূল কারন তখন লিয়াম নেসন।

ডে লুইস এর দা ক্রুসিবল তখন আমার দেখা অন্যতম সেরা ছবি । মেল এর মতই লিয়ামও আমার প্রিয় অভিনেতার তালিকায় অনেক উপরে । লিয়ামই আমাকে র‌্যালফের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো। তা হলো না । বরং আমি লিয়াম ডে লুইস, নেসন, জনি ডেপ এর ভালো ভালো ছবি নিয়ে মাতলাম। মাঝে বেশ কয়টা বছর পড়ালেখা, মুভি কেনার ঝামেলার কারনে তেমন করে ছবি দেখা হয়নি। যদিও দা ইংলিশ পেশেন্ট নিয়ে বহুত মাতামাতি হয়ে গেছে । ট্রেইলার দেখেছি, ছবি দেখিনি। ছেলেটাকে দেখে কেমন জানি লাগে । তাই দেখা দেখি বাদ দিয়ে পড়ালেখা করি। মেডিকেলের ঝুট ঝামেলা শেষ হলো। বাসার কেবলে নিয়মিত রাত জেগে ছবি দেখা শুরু করলাম। বোনের বাসায় হোম থিয়েটার এলে সেই উপভোগ বাড়লো। জনি ডেপ আপুর ও পছন্দ। তুমুল ছবি দেখা চলছে। এর মধ্যে ঘুরে ফিরেই র‌্যালফকে দেখি আর কেমন জানি লাগে । ওর মুভি দেখি না কিন্তু মাঝে মাঝেই ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে ওর ছবি দেখি। নাহ, দেওয়ালে পোস্টার পড়ে না কিন্তু পিকচার ফোল্ডারের একটা নির্দিষ্ট ফোল্ডার র‌্যালফের ছবি দিয়ে ভরে উঠতে থাকে। সাইলেন্স অফ দা ল্যাম্বস , গথিকা ইত্যাদির ধারাবাহিকতায় দেখা হলো ফাইন্সের রেড ড্রাগন। একটু ধাক্কা খাইলাম। এমন কিছু আহা মরি ছবি না কিন্তু তারপরেও কয়েক বার দেখলাম। কিশোরীদের মত উচাটন মন নিয়েই দেখলাম।

এর কিছুদিন পর দেখলাম সেই ভয়াবহ ছবি। দি কন্সট্যান্ট গার্ডেনার । আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো । র‌্যালফের প্রতি যত ভালো লাগা আর টান চুপে চাপে পাথর চাপা ছিলো হঠাৎ যেন অগ্ন্যুৎপাত ঘটে গেলো। ছবিটার প্রতিটা দৃশ্য, গল্প, ভালোবাসা সব কিছু মিলিয়েই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলাম। মাত্রই জনস্বাস্থ্য নিয়ে, আন্তর্জাতিক সংস্থা আর তাদের বিভিন্ন পলিসি, সেবার নামে ব্যবসা, সাহায্যের নামে ব্যবসা নিয়ে পড়া শেষ করেছি। কেনিয়ার স্লাম গুলোতে এন জি ওর নামে , সেবার নামে , যক্ষার ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল আর তাই নিয়ে ব্যবসা, রাজনীতি, খুন – প্লটটা বুকের খুব কাছে নাড়া দিলো। সবারই এই ছবি দেখা উচিত খালি এর গল্পের কারনে। তবে ঐ সিরিয়াস অংশটুকুর বাইরে র‌্যালফের আর তার বউ টেসার ( মামি খ্যাত র‌্যাচেল ওয়াইজ) ভালোবাসার দৃশ্যগুলো মনের ভিতর গেঁথে গেলো। এই একটা ছবি দেখতে গিয়ে আমি তিন বার বন্ধ করে উঠে গেছি কান্না থামাতে না পেরে। এফোড় ওফোড় করা একটা ছবি দেখতে দেখতে এই প্রথম মনে হলো আমি এই রকম ভালোবাসাই চাই। ঠিক এই রকম। এবং এর সাথে সাথে স্বীকার করে নিলাম যে হ্যাঁ, হাত পা ভেঙে কারো জন্য যদি অযৌক্তিক অস্বাভাবিক ভালোবাসা গড়ে ওঠে যার সাথে বাস্তব জীবনের কোন সম্পর্কই নেই , থাকতে পারে না সে হলো র‌্যালফ ফাইন্স। সেই বছরই মেইড ইন ম্যান হাটানে জেনিফার লোপেজকে চুমু খেতে দেখে যখন বুকে রীতিমত ব্যথা অনুভব করলাম তখন বুঝলাম, “ওয়াক্ত কে সাথ সাথ খেয়ালত ভি বদল জাতি হায়” ।

এর পর আর কি ? খুঁজে খুঁজে তার সমস্ত ছবি দেখা । উইদারিং হাইটস, ওনেগন, দা এন্ড অফ দা এফেয়ার। চলছে চলবে । এখন উচাটন হয়ে খুঁজছি “দা বেবি অফ ম্যাকন”। আমাদের লাল সালুর সাথে মিল আছে মনে হলো। কিন্তু সে ছবি নাকি এতই বিতর্কিত যে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ দেবেন নাকি খুঁজে আমার র‌্যালফ কে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৬:৩৮
৩০টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×