somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ কি ফিরিয়ে দেবে সেই শিউলিফুল ?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সক্কাল বেলা ইস্কুলে যেতে হতো । একদম সেই কাক ডাকা ভোরে আব্বু এসে মাথার কাছে দাঁড়াতেন । আব্বুর ঘুম থেকে উঠানোর স্পর্শটা ভীষন প্রিয় ছিলো । আব্বু খুব আস্তে হেঁটে পাশে দাঁড়াতো । তারপর একটু বোঝার চেষ্টা করতো , আমি জেগেছি না এখনো ঘুমিয়ে কাদা । আন্দাজে বোঝা হলে , বা , না হলেও একটু ঝুঁকে পড়তো মুখের উপর । যেমন মৃদু বাতাসে ডাল নুয়ে দেয় বৃক্ষ তার ক্লান্ত পথিকের মুখশ্রীর উপর । খুব ধীরে ডান হাতটা কপালে রাখতো আর আলতো কিন্তু চটুল একটা ডাক ফিস ফিস করে ভেসে আসতো ,

" এই যে ! আমার লম্বা মেয়েটা ! ঘুম কি ভাঙলো ?"

আমার খুব সুন্দর একটা নয় , মোট তিনটা নাম আছে । একেবারে আকিকা দিয়ে আড়ম্বরে প্রতিষ্ঠিত নাম । তারপর ও এই দুষ্টু নামটায় , এই আলতো ডাকটায় এমন আদর ছিলো , আমি অনেক আগে ঘুম ভেঙে গেলেও মটকা মেরে পড়ে থাকতাম , শুধু আব্বুর অপেক্ষায় ।
আব্বু আর ডাকে না অমন করে ।

কেউ কি ডাকবে এতটা আদর নিয়ে ?

---------------------------------------------

আমার খুব জ্বর হতো ।আব্বুকে একদিন না দেখলেই জ্বর । ডাক্তার সিরিঞ্জ সিরিঞ্জ রক্ত নিয়েও বের করতে না পেরে , শত শত ওরাসিন কে খাইয়েও জ্বর বন্ধ করতে না পেরে বলে দিলো ," আপনার মেয়ে আপনাকে না দেখে থাকতে পারে না । এইটা মানসিক শক এর প্রতিক্রিয়া।"
আব্বু হতভম্ব তাকিয়ে ছিলো । এই এত্তটুকুন মেয়েটা কি এমন ভালোবাসলো যে না দেখলেই জ্বর! আব্বুকে এখনো তেমন করেই ভালোবাসি । এখনো একদিন না দেখতে পেলে , কোথাও গেলে , কেমন যেন সব কিছু অসহ্য লাগতে শুরু করে । হয়ত সারাদিন কথাই হলো না ।হয়ত অফিস নিয়েই পড়ে আছি । তবু আব্বু বাসায় থাকা মানে মনের ভিতর একটা কথা প্রজাপতির মত উড়তে থাকা , "আছে তো ! এই তো আশে পাশেই আছে । "

এমন তুমুল জ্বরে একবার আমি যশোরে , আব্বু ঢাকায় । আব্বু ছুটি চাইলো , বস দেবে না । সোজা চাকরী ছাড়ার দরখাস্ত বসের পিয়নের হাতে ফেলে দিয়ে যশোর চলে এলো , অফিসে পিয়ন তখন পাগলের মত খুঁজছে - স্যার , আপনার ছুটি মঞ্জুর হয়েছে , কাগজটা নিয়ে যান দয়া করে । কে শোনে কার কথা ! সন্ধ্যা নাগাদ আব্বু যশোরে । বাড়িতে ঢুকে কারো সাথে কোন কথা নাই , এমন কি মামণির সাথেও না । আমাকে বুকের ভিতর জাপটে ধরে জানালার পাশে , গাল ভিজে যায় ফোটায় ফোটায় । কালা পাহাড়ের মতন দশাসই লোকটাকে ৩০ বছরে আর একবার মাত্র কাঁদতে দেখেছি , দাদী যেদিন মারা গেলো ।

কেউ কি এমন করে কাঁদবে আমার জন্য ?

---------------------------------------------------

ইস্কুলে একটা শিউলি গাছ ছিলো । ক্লাস রুমের পাশেই । তখন পড়ি ক্লাস টু কি থ্রিতে । গাছটা ক্লাস থ্রি আর ফোরের মাঝামাঝি মাঠে । বড় ক্লাসের মেয়েরা চলে এলে ছোটরা আর ফুল কুড়াতে পারে না ।তাই সোয়া সাতটার ভিতর ইস্কুলে যেতাম । গায়ে সোনা রোদ । পরনে নীল জামা । পিঠের উপর ডাকাতের মত মোটা এক ব্যাগ । পায়ে কালো জুতো । সাদা ধবধবে মোজা । টুক টুক করে হেঁটে চলেছি ।পকেটে সুঁই আর সুতো । গুন গুন করে গাইছি , " ও আমার বাংলা মা তোর ।" অথবা "রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়ালো "। মন খুব ফুরফুরে থাকলে , " সোম বারে পাখিটির ডিম ছিলো দুটি " কিংবা " ফিঙে নাচে ঝিঙ্গে পাতায়" । দুষ্টু মুডে থাকলে ," তোমরা বলো সন্ধ্যে হতেই যদি ভোঁ ভোঁ করে মশা " ।

কোন মতে ক্লাসে ব্যাগটা রেখেই ছুট ছুট । উর্মিকে খুব হিংসে কারন ওর বাড়িটা ইস্কুলের মাঠের ঠিক পিছনে ! রেহনুমার মা ওকে ঠিক সাতটায় ইস্কুলে দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করতে যায় । নীতুর বাবা অনেক দূরে চাকরী করে । কখনো সাতটা দশের পরে আসাও হয় না তাই ! আমি কিছুতেই ওদের আগে পৌঁছাতে পারি না । সাদা কমলায় স্বপ্নের মতো মাটিতে লুটায় আমার ফুল । আমি ওদের মালায় গাঁথবো বলে সুঁই সুতো নিয়ে হেঁটে যাই শরতের মেঘ ভরন্ত সকালে । সাদা মেঘ , ছাই রঙা মেঘ , গোলাপি , লালচে আর কতকটা শিউলি বোটার মত কমলা ।

খুব ইচ্ছে করে । এক এক করে ফেলে দেব কমলা বাহুল্য । আমার সাদা খুব প্রিয় । শুধু সাদা পাপড়ি গুলো নিয়ে এক এক করে গাঁথবো সুতোয় । মুহুর্তের পর মুহুর্ত পার হয়ে একটা অকল্পনীয় সুন্দর , নিখাঁদ , পবিত্র মালা হবে । একটা নয়, দুটো । নীতু, রেহনুমা আর উর্মিরা অনেক আগেই মালা নিয়ে ঢুকে পড়ে জগতের ক্লাস রুমে । আমার কেবলই দেরী হয়ে যায়!

আমি আঙ্গুলে সুঁই ফুটিয়ে রক্তাক্ত বসে থাকি। এখনো । কেউ কি ফিরিয়ে দেবে সেই শিউলি ফুল ?


দেহলিতে কপট কিঙ্কর
দেবসভায় দেবারি দরাশে
রই অন্তরীন অন্তরে একা
দেহী গ্রাসে তমসা তরাশে !

ছায়া নীরে মুকুলিত মৃদুল জটা
স্বপনে দহিত দুহিতা নিবিলো ছটা

আরশে আশা দলে উত্তর
সওয়ালে সিঁদুর প্রকাশে
গৃহী ভস্মে সুলুক বিস্তর
দহিতা মগন সকাশে !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩১
৬০টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×