এই কবিতাটার লাইন মাথায় এসেছিলো শনিবার সন্ধ্যায় । প্রচন্ড আবেগ নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কি কুক্ষণে যেন ব্লগের প্রথম পাতায় ঢুকলাম । রাজাকারদের দৌরাত্ম্য দেখে সব ওলট পালট হয়ে গেলো । রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে রাজাকারী পোস্ট আর রাজাকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে পোস্ট লিখলাম । অথচ পরের দিন অফিস । অথচ শরীরে ক্লান্তি । অথচ রক্তে বিষ । দুই বার মাথা ঘুরে উঠলো । তবু নেশা গ্রস্থের মত লিখেই চলেছি । না লিখে পারিনি । না লিখে ঘুমাতে যেতে পারতাম না । ঘুম আসতো না। মাতৃভূমি নিয়ে ঘাতকের উল্লাস আর কত দেখতে হবে ?
সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে?
বাংলাদেশ নিয়ে জামায়াত শিবির রাজাকারদের নোংরামি দেখতে দেখতে সহ্যের সীমা সত্যি ছাড়িয়ে যাচ্ছে । ব্লগের ভিতরের শুধু নয় । সকালে দেখলাম পেপারে বিভিন্ন পরিবর্তন । দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে । আর রাজনীতি শিয়াল, শকুন আর বরাহদের হাতে । দেশটা কি নিশ্চিত সিভিল ওয়ারের দিকে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে ? সেই চেষ্টা হয়ত হচ্ছে না । দরকার একটা সম্পূর্ণ পদানত ইয়েস বস সরকার । কিন্তু যোগ্য উত্তরসূরি পাওয়া যাচ্ছে না । সুশীল জারজ থেকে শুরু করে কল্যানপুর - সব ফুর ফুরা । জামায়াত শিবির কোন দিনই সরাসরি ক্ষমতায় আসতেই পারবে না । আসলে নির্ঘাত দেশে যুদ্ধ লাগবে ।তবে আনমার্কড , জামায়াত এর আদর্শে বিশ্বাসী , মুখোশধারী রাজাকারদের হাতে দেশটা অলরেডি চলে গেছে । বিশ্বাস হচ্ছে না ? খোঁজ নিয়ে দেখুন । রাষ্ট্র যন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে গোঁড়া , সাম্প্রদায়িক আর প্রতিক্রিয়াশীল রাম ছাগলের সংখ্যা কত !
বুকের ভিতর তীব্র রক্তক্ষরণ । আমি আমার ব্লগের মাটি রক্ষায় সময় বিলাচ্ছি , শক্তি খরচ করছি অকাতরে । আমি আমার মাতৃভূমির মাটি বাঁচাতে পারছি কই?
অতন্দ্র অনির্বান থাকে আত্মজ দহন
আব্বুর সাথে কথা বললাম অনেক্ষণ । দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলাম । কোন পথই কি খোলা আছে ? রাজশাহী থেকে সাংবাদিক বন্ধু আজকে সম্ভাব্য নির্বাচনী ( অবশ্যই ইঞ্জিয়ার্ড ) ফলাফল বলে দিলো । সেই ষড়যন্ত্র এর টের আমিও পেয়েছি আগেই । আব্বুর পলিটিকাল এনালাইসিস "২ বছরের ভিতর কোন নির্বাচন হবে না" - এর বাস্তবায়ন তো দেখতেই পাচ্ছি । বাকি এনালাইসিস গুলাও কি সত্যি হতে যাচ্ছে ?
আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ।লোকটার বয়স ৬৫। ১৯৭১ এর টগবগে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা । পাকিস্তান থেকে জান হাতে করে পালিয়ে আসা যুবক । দেশের জন্য নারীসঙ্গ প্রত্যাখানকারী দেশপ্রেমিক । সব কিছু ফেলে , খেয়ে না খেয়ে , শুধু বাংলাদেশ আর দেশের মানুষ নিয়ে পড়ে থাকা এক কলেজ তরুণ ! ফ্ল্যাশ ব্যাকের পরে ফ্ল্যাশ ব্যাক।
আমার চোখে পানি আসে । মুক্তিযুদ্ধ করার কারনে আব্বুকে না পেয়ে মেজ চাচাকে রাজাকার বাহিনী আর পাকি আর্মি মেরে ফেলেছিলো । তার শোধ মুক্তি বাহিনী নেয় পুরো রাজাকার বাহিনীকে সেক্টর ছাড়া করে । সারা জীবন নিজের দেশকে রক্ষার জন্য নিজেকে উতসর্গ করার পর আব্বুর কেমন লাগে যখন তাকে ৩৬ বছর পরে আবার অস্ত্র ধরার কথা চিন্তা করতে হয় ? কেমন লাগে যখন নিজামীর গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে ! ঘাড় নিচু করে আব্বু লিখে চলেছেন "বাংলার মুক্তি"।
যোদ্ধারা কি কখনো যুদ্ধ থামায় ?
"লেখা হয়ে গেলে বোলো । প্রিন্ট আউট সকালে বের করে দেব"
আমি ভারি পায়ে বের হয়ে আসি । বড় ভারি লাগে । সব কিছু বড় ভারি লাগে । বুকের ভিতর খুব জ্বলে কোথাও । নিজের অজান্তেই ঠোঁট বিস্ফারিত করে বেরিয়ে আসে অকথ্য অশ্রাব্য গালি । হাতের চেটোয় অশ্রু মুছে নেই । ব্লগের কোন চেতনাধারী কিংবা অচেতন *****রের বাচ্চা বুঝবে না এই যন্ত্রনা। দরকার নেই বোঝার । আমার আগুন আমার থাক ।
আমার বালিকার কাছে একটি বার্তা
এখন আর লিখতে পারি না । ব্লগের পাতায় ঢুকলে কবিতা হারায় । পালাতে চাইলেও পালানো যায় না । দেশের অবস্থা কি হতে চলেছে চিন্তা করলে মাঝে মাঝে বড় অর্থহীন মনে হতে পারে এই লড়াই । হয়ত কেউ বলবে , "কি লাভ লড়ে যখন হারার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি !" আমার ভেতরের জাহান্নাম জেগে ওঠে । ***চোত! দেশপ্রেম কি ব্যবসা যে লাভের হিসাব করবো ?
আমার বাপ যখন যুদ্ধে গিয়েছিলো , একবারও কি ভাবতে পেরেছিলো যে কখনো ফিরে আসতে পারবে কি না ? নাকি যাদের রেখে গেলো তারা ভালো থাকবে , এই বিশ্বাসে উৎসর্গকৃত ছিলো চেনা পৃথিবী , একমাত্র প্রান !
সামনে খুব খারাপ সময় । জানি না কি হবে । এখনো বিয়ে করিনি । কখনো করবো কি না তাও জানি না ।তবে যদি আমার স্বপ্নের মত কোন বালিকা জন্ম নেয় বাংলায় , যদি সেই পৃথিবী তখনও থাকে নষ্টদের অধিকারে , যদি তখনও বাংলার মুক্তির লড়াই শেষ না হয়ে থাকে , তবে ওকে তোমরা বলে দিও ,
"গুলিটা মায়ের বুকে লেগেছিলো , পিঠে নয়"
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:২৭