somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তে লেখা ইতিহাস - দুটো কথা

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে খাল-বিল , নদীনালা ঘেরা বাংলার সবুজ প্রান্তরে রচিত হয়েছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় "মুক্তিযুদ্ধ"। সেই মহাযজ্ঞের একটা অংক অভিনীত হয় শান্ত কপোতাক্ষ নদের দু"তীরের শ্যামল ছায়া ঘেরা গ্রামগুলোর সরল প্রান নরনারীর দ্বারা। সেদিন যে ইতিহাস তারা সৃষ্টি করেছে তা আগামী প্রজন্মের কোটি কোটি বাঙালি সন্তান তাদের রক্তের উষ্ণতায় আজীবন অনুভব করবে । যুদ্ধক্ষেত্রের সাথী কর্নেল (অবঃ) মোহাম্মদ সফিকুল্লাহ " মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টর " বইয়ে কপোতাক্ষ মুক্ত-এলাকার রক্তাক্ত যুদ্ধগুলো জীবন্ত বর্ননায় লিপিবদ্ধ করেছেন । ঘটনার নিরস ইতিহাস নয়; তিনি মুক্তিযুদ্ধকে কাব্যরসে উপস্থাপন করেছেন । এটা তার বিরল কৃতিত্ব ।

লাখে লাখে মারে অরি কাতারে কাতারে
একুন করিয়া দেখে চল্লিশ হাজার ।

একজন অংকবিদের কাছে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুল। কারন লাখে লাখে মৃত শত্রু হিসাব করে চল্লিশ হাজার হয় কি করে? কিন্তু একজন পুঁথি পাঠকের কাছে বিষয়টা উদ্ভট নয়। কেননা তার প্রিয় একজন বীরের শত্রু হননই আসল; শত্রু সংখ্যার হিসাব ধর্তব্য নয়। কনভেনশনাল যুদ্ধের সাথে গেরিলা যুদ্ধের প্রকৃতির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না । রাধা প্রেমে কৃষ্ণ পাগল; তেমনি মাতৃভূমি প্রেমে পাগল গেরিলা । তাই নিয়মিত সৈনিকদের যুদ্ধের রীতিনীতির সাথে মুক্তিপাগল গেরিলাদের যুদ্ধের গতি প্রকৃতির কোন মিল থাকে না । "মুক্তিযুদ্ধে আট নম্বর সেক্টর" বইয়ের পাতায় পাতায় তার সাক্ষ্য পাওয়া যায় ।

গেরিলা যুদ্ধ কোন ছকে বাঁধা যুদ্ধ নয় । তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গতানুগতিক ইতিহাসের ছকে বর্ননা করা যায় না । তবুও বন্ধুবর কর্নেল সফিকুল্লাহ আগে পিছে , এঁকে বেঁকে , বীরত্বে , কাপুরুষত্বে , হরিশে-বিষাদে যে বর্ননায় কপোতাক্ষ অঞ্চলের যুদ্ধগুলো উপস্থাপন করেছেন ; তা আগামী দিনের বাঙালি কিশোর কিশোরীদের মনে বীরত্বপূর্ণ স্বপ্নের আবেশ সৃষ্টি করবে ।

ইলিয়ড ওডেসি , রামায়ন -মহাভারত, মেঘনাদ বধ, বিষাদ সিন্ধুর মত মহাকাব্য রচনার পটভূমি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ । আমার ধারনা আগামী কোন মধুসূদন বা মীর মোশাররফ খুঁজে পাবে মহাকাব্য রচনার রসদ " মুক্তিযুদ্ধে আট নম্বর সেক্টর" বইয়ের মাঝে । বাঙালি জাতির আগামী মহাকাব্য রচনার রসদ প্রদানের জন্য বন্ধুকে সাধুবাদ ।

জয় বাংলা !

গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) ফজলুল হক

________________________

উপরের লেখাটি আব্বুর । উল্লেখিত বইয়ের মুখবন্ধের জন্য লেখা । মানুষের জীবনে অনেক আফসোস থেকে যায় । এটা করা হলো না । ওটা করা হলো না । সেই সব " না গাওয়া গানের" সুর হয়ত মাঝে মাঝেই কাঁদিয়ে যায় ।কিন্তু , দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব হয়ত তেমন পড়ে না ।কিন্তু কিছু অসম্পাদিত কাজ থাকে , যা করে যেতে না পারলে রীতিমত অপরাধী হতে হয় ।

আব্বু আট নম্বর সেক্টরের একজন প্রধান মুক্তিযোদ্ধা ।পাকিস্তান এয়ারফোর্স এর এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া তুখোর অফিসার এই দেশপ্রেমিক মানুষটি জানবাজি রেখে করাচী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন ।মাতৃভূমির প্রতি তার অসীম ভালোবাসা আর অতুলনীয় বিচক্ষনতার কারনেই- শুধু কন্যা হিসেবে নয় , একজন দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে তার জীবনের অর্জন গুলোকে লিপিবদ্ধ করার ।

এক এক জন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার জীবন হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক একটা দলিল । যারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী , রাজাকার ,আল বদর ,আল শামস দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন -তাঁদের যুদ্ধের ইতিহাস লিখে রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে জানানোটা তাদের আশে পাশের মানুষদের একটা অবশ্যপালনীয় কর্তব্য ।আব্বুর বয়স হয়েছে । শরীর খারাপ । ৩৬ বছরে হারিয়ে ফেলা অনেক দলিলের মত আব্বুও এক সময় হারিয়ে যাবেন। আমি শুরু করেছিলাম রেকর্ড করা । লেখার সময় পাচ্ছি না । এই কষ্টটা বুকের উপর পাথর হয়ে বসে আছে । প্রতিদিনই একবার ব্লগে ঢুকি , মনে হয় আজকে শুরু করতে পারবো ।পারি না । এত মমতার , এত ভালোবাসার , এত কান্নার , এত গৌরবের , এত আত্মত্যাগের ইতিহাস লিখতে বসে খেই হারিয়ে ফেলতে থাকি ।মনে হয় যেন , ঠিক পারছি না ।

কেউ কেউ অভিযোগ করেন , ব্লগের পিছনে আমি এত সময় নষ্ট করি কেন । আমার হেলথ কমিউনিকেশনের জন্য ব্লগিং প্রজেক্ট তো শিকায় উঠেছে । আবার কবে উদ্যোগ নিয়ে নামতে পারবো , জানি না।

আমার একটা গোপন স্বপ্নের কথা বলি আজকে ।প্রতিদিন হাবিজাবি অখাদ্য কুখাদ্য লিখে লেখার হাতটা চালু রাখি তার একটাই কারন । বুকের খুব গভীরে একটা প্রচন্ড স্বপ্ন এখনো লালন করি । খারাপ লিখতে লিখতেই হয়ত একদিন ভালো লেখা শিখে যাব ।আমি সেই দিন আব্বুর কথা লিখবো । একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা লিখবো । মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারনে মেরে ফেলা ছোট চাচা, মামা - সন্তান শোকে হারিয়ে যাওয়া দাদু , অভিভাবকহীন হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া নানুবাড়ির কথা লিখবো ।

আমি সেইদিন মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখবো । আমি সেইদিন বাংলার স্বাধীনতার কথা লিখবো ।

সেইদিনটার অপেক্ষায় আমি কোটি কোটি সেকেন্ড এই ব্লগের পিছনে নষ্ট করতে রাজি আছি । রাতের পর রাত জেগে কষ্ট করতে রাজি আছি । যদি পেয়ে যাই ,স্বরস্বতীর বর! সেই আলাদিনের চেরাগ ! কিংবা , মধুসূদনের কলম ! মহানামা লিখে পারস্য কবি ইরানীদের শিখিয়েছিলেন কি ভাবে নিজের জাতি নিয়ে গর্বিত হতে হয় , ভালোবাসতে হয় নিজের মাটি ও সংস্কৃতিকে। একদিন কোন সাধারন বাঙালি কি লিখবে না পাকিস্তান বধ করে বাংলা মাকে মুক্ত করার সেই মহান কবিতা ? আমি যদি নাও পারি ,আমার সন্তান যেন তুলে নেয় সেই মহান দায়িত্ব !

এখনো পারিনি বলে ক্ষমা চাইবো না , বাবা ।
অভিশাপ দাও যেন সেইদিন পর্যন্ত বাঁচি !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫৫
৪১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প- ৯৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×