somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছাত্রী পড়ানো :) :)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার টিউশানিটা গেল। কেন গেল সেটা বলতেই এসেছি। দুঃখের কাহিনী। শুনে হাসলে মাইন্ড করব।
শিশুরা মারাত্মক। অন্তত এখন বুঝতে পারছি। আগে ওদের কোলে নিতাম, চকলেট কিনে দিতাম, পকেট গরম থাকলে ক্যাটবেরি পর্যন্ত। এখন দেই না। আমি নিজেই যে এককালে শিশু ছিলাম এটা ভেবে এখন লজ্জা হয়। কেন আমি ডিরেক্ট ২০ বছরের এংরি জাওয়ান হয়ে জন্ম নিলাম না!
কেন এই শিশুবিদ্বেষ সেটাই বলি আগে।
আমার বন্ধু সোহেলের ভাতিজার, মানে বড় ভাইয়ের ছেলের সাথে আমার চরম বিরোধ। যখন পিচ্চি ছিল, ধরুন পাঁচ সাত মাসের, তখন থেকেই। একদিন কী এক কাজে সোহেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম খেয়াল নেই। পাঁচ’ছ বছর আগের কথা হবে। ওর ভাবি এসে কোলের বাচ্চাটা আমার কোলে সপে দিয়ে বললেন, “ভাতিজাকে একটু দেখ তো। আসতেছি”। কী আর করা। নিলাম কোলে। কিন্তু কুসুমে যেমন কীট আছে, বাচ্চারও তেমন নুনু আছে এবং তাদের যে আছে, সেটা তারা সময়ে অসময়ে জানান দিয়ে থাকে। সে অনায়াসে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে ফোকলা মুখে হাঁসতে লাগল। ভাবি এসে দেখে হাসেন, সোহেল আমার বন্ধু হয়েও হাসে, আর ওদের হাঁসি দেখে আমি হাঁসি।
সেই পিচ্চিই এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ছে। কিছুদিন আগে, তা একমাস হবে; বিকেলে গেলাম সোহেলদের বাড়ি। ওর আম্মা চানাচুর আর চা দিলেন। চানাচুর আমার ফেভারিট। চিবাতে চিবাতে বসে আছি। চানাচুরের লোভেই বোধহয় সোহান আমার পাশে এসে বসল(বলতে ভুলেই গেছি, সোহেলের ভাতিজার নাম সোহান)। এক খাপলা তুলে মুখেও দিল। আমি ওর গাল টিপে দিলাম। ও আমার চানাচুরে ভাগ বসিয়েছে বলেই হয়ত অবচেতন মনে ওর উপর একটা ক্ষোভ ছিল। একটু জোরেই দিয়েছিলাম টিপটা। বেচারা “উচ” করে উঠল। কিন্তু তারপর যা করল, সেটা আশা তো করা যায়ই না, একটা সাত বছরের ছেলে যে এটা করবে ভাবাও যায়না। আমি তখন চানাচুরের আশা ছেড়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। আর ও কিনা আমার পায়ের কাছে এসে আমার ‘ইয়েতে’ খামচে দিল! উহ সে কি অনুভূতি! কবি বলেছেন- “কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে- কভু পিচ্চি এসে ইয়ে খামচায়নি যারে”।
আমি মুখ বিকৃত করে, ইয়ে সামলিয়ে বললাম, “বেয়াদপ, বড়দের ওইটা ধরতে নেই। জাননা?”
ও বলল, “আপনারটা আমার চেয়ে বড়ই বটে কিন্তু ছোটদের গাল টিপতে নেই জানেন না?”
সেই থেকে আমি সোহানকে এড়িয়ে চলি। সাথে ওর সমগোত্রীয় প্রাণীদেরও।
কিন্তু আমি ওকে না চটকালেও ও ঠিকই গাঁয়ে পড়ে আমার সমস্যা বাঁধায়। সেদিন সে কোথা থেকে একটা দুধের বাটি এনে আমাকে বলল, “কনতো এটা কী?”
আমি বললাম, “কেন বাটি!”
ও কি জবাব দিল জানেন? বলল, “তোর বোনের সাথে সাঁতার কাঁটি!”
আমার অবশ্য রাগ হয়নি শুনে। কারণ আমার বোন নেই। আর খালাতো বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে সবার, এবং তাদের বাচ্চার বয়স সোহানের মতই হবে।
কিন্তু এই সোহানের কারণেই আমার টিউশানিটা গেল। সেটাই বলছি।
আমি মহিলা কলেজের পলিটিকাল সায়েন্সের এক টিচারের মেয়েকে পড়াই। পড়াতাম বলা ভাল। কারণ এখন পড়াই না। পড়াতাম সপ্তাহে চার দিন। যা পেতাম, সারাদিন বিড়ি ফুঁকেও শেষ হতো না। আমি অবশ্য টিচার হিসেবে লুল। আমি বেছে বেছে শুধু মেয়েদেরই পড়াই। সুতরাং আমার শুধু ছাত্রী আছে, ছাত্র নেই। ছাত্র একটা পড়িয়েছিলাম বটে, কিন্তু ওকে আমি ছাত্র হিসেবে মেনে নেই না এখন। নালায়েক ছাত্র একেবারে।
ছাত্রটিকে একদিন পাটিগণিতের অংক করাচ্ছিলাম। আমি লিখতে বললাম, “প্রশ্ন মতে, শিহাবের পেঞ্ছিল আছে ৩ক টি”।
ও বলল, “কি বললেন?”
আবার বললাম, “প্রশ্ন মতে, শিহাবের পেঞ্ছিল আছে ৩ক টি”
ও উচ্চারণ করতে করতে লিখছে, “প্রশ্ন মোতে, শিহাবের পেঞ্ছিল......”
“কী লিখলা?”
ও বলল, “প্রশ্ন মোতে, শিহাবের পেঞ্ছিল”
আমি ওকে শেষ করতে না দিয়েই বললাম, “প্রশ্ন মোতে না রে গাধা প্রশ্ন মতে”।
“ও আচ্ছা, প্রশ্ন মোতে”।
যারা আঁতেল, মানে সর্বদা শুদ্ধ-সংস্কৃত বাংলা ব্যবহারে করে থাকেন, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, মোতা মানে হচ্ছে প্রসাব করা।
“মোতে না মতে মতে”
এবার ও প্রশ্নে’র র-ফলাটি বেমালুম গায়েব করে দিয়ে বলল, “পস্ন মোতে”! লে হালুয়া!
আরেক দিনের কথা। ওকে গতদিন সাধারণ জ্ঞান পড়তে দিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “ইথিয়োপিয়ার রাজধানীর নাম কী?”
ও বলল, “কেপ টাউন”
আমি ওর কানে চাটি মারতে মারতে বললাম, “ওটা আদ্দিস আবাবা হবে। আদ্দিস আবাবা”
ছাত্র আমার চাটির আঘাত সামলে বলল, “হোলও হতে পারে?”
আমি চমকে উঠলাম ওর কথা শুনে, বললাম, “কী হতে পারে?”
বলল, “হলেও হতে পারে”!
সেই দিনই বাদ দিয়েছি ওকে পড়ানো। সেই থেকেই ছাত্র পড়ানো বাদ। ছাত্রীই ভাল। ওদের কখনও “হোলও হতে” পারে না! আর ওদের প্রশ্ন কখনও “মোতে না”।
প্রসঙ্গ থেকে দূরে চলে গেলাম। প্রশ্ন হল- কীভাবে আমার টিউশানিটা গেল।
আমার এই ছাত্রী সুন্দরী। আমরা যেমন ব্লগে একটু ভাল লাগলেই বলি, বিশেষ করে কবিতা আর গল্পের বেলায়, “অসাধারণ লিখেছেন। খুব সুন্দর” বলে পিঠ চাপড়াই, যদিও গল্প কিংবা কবিতাটা সাধারণ, এমনকি সেই বিষয়ে আগেও অনেকে লিখলেও; সেরকম ঢালাও সুন্দরী আমার এই ছাত্রীটি না। কুসুমের কোমলতা তার মুখে, সমুদ্রের নীল তার চোখে। এখন কেউ যদি ভাবেন আমি লিখব, “হিমালয়ের বিশালতা তার বুকে”, তবে ভুল ভাবছেন। আমি তা লিখব না। কারণ, সে মোটেই বিশাল কিংবা উদার মনের না। কিন্তু তাকে দেখে কেউ যদি রাস্তাঘাটে “তোর ঢূমক ঢুমক চাল আর চিকন চিকন গাল” কিংবা “দেখা হে তুজকো হায় মেয় তো হিল গেয়া/ লাগতা হে মেরে সিনে সে দিল নিকাল গেয়া” গেয়ে ওঠে তবে তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংএর কেজ করা খুব অন্যায় হবে। ভাবুন তাহলে কেমন সুন্দরী!
সুন্দরী হলে যা হয় আরকি- অহংকারী! অন্তত সবাই অহংকারীই বলে। আমার যদিও কোন দিন মনে হয়নি। বরং আমার মনে হয়ছে, ও খুব নরম মেয়ে (শরীর ও মন উভয়ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)।
সুতরাং ওকে পড়াতে আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অসুবিধা ওর বাবা মায়ের। আগেই বলেছি, ওর বাবা পলিটিকাল সায়েন্সের লেকচারার, তাও আবার মহিলা কলেজের। মহা জাদরেল লোক। ওরা সবসময় চোখে চোখে রাখে আমাকে। এমনকি বলেছে, ছাত্রীর সাথে ছাত্রীর ভাইকেও পড়াতে হবে! ছাত্রীর ভাই সিকিউরিটি গার্ড আরকি। তবে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে বালিকার ভাই বড়ই নাবালক। বালক কেবলি বানান করে বাংলা পড়তে শিখছে। সে আর কী হিন্দি চুল ছিঁড়বে?
কিন্তু ইগোতে বড় লাগল! এতো বড় অপমান! আমাকে অবিশ্বাস! কিন্তু বালিকার মানে আমার ছাত্রীর কোমল গাল আর সুন্দর চোখের কথা ভেবে সে অপমান বেমালুম হজম করে ফেললাম। আর তাছাড়া আমি কী ধর্ম নাকি যে কেউ সামান্য ট্যাঁরা কথা বললেই, অনুভূতিতে আঘাত লাগবে আর আমি তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার মুণ্ডুপাত করব? তাছাড়া মানির মান পাহাড় সমান থিয়োরিতে আমি বিশ্বাসী। সুতরাং আমি লুঙির গিট বেঁধে আই মিন সিনা টান করে পড়াতে লাগলাম।
কিন্তু পড়াতে গিয়ে দেখি, বালিকা ‘আখিয়োছে গোলি মারে”। “প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”- নিউটনের এই সুত্র আমি নাইন টেনে পড়েছি। সুতরাং আমিও গুলি মারতে লাগলাম। গানটার কথা মনে পড়ে যায় আমার। “তোর চোখে ভীষণ ধার/ তোর ঠোঁটেই রিভালবার/ তোর হাতে আজ আজ খাব গুলি।”
কিন্তু তার ছোটভাই প্রতিদিন কাবাবমে হাড্ডি হয়। আমি যখন বালিকার গুলি সামলাতে ব্যস্ত তখন সে বলে, “স প’য়ে রেফ কী হয়, ভাইয়া”
“আমি বলি সর্প”।
সুতরাং বালকের উপর আমি যতপরনাই নাখোশ!
সেদিন আমি বালিকাকে দ্বিপদী উপপাদ্য বোঝাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার সেই গুনধর ছাত্র পড়ছিল, “ফ তে ফল। ফ আর ল ফল। ব তে বাটি। ব’য় আকারে বা ট হিসিকারে টি, বাটি”
আমার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল, “তোর বোনের সাথে সাঁতার কাঁটি”!
বলেই জিহ্বা কামড়ালাম। বালিকা দেখি হাঁসি হাঁসি মুখে তাকিয়ে আছে। আর রক্তচুক্ষুতে তাকিয়ে আছে বালিকার মা!
তখুনি অবশ্য গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়নি। পড়ানো শেষ হলে, আধমাসের বেতন ধরিয়ে দিয়ে বলেছে, “বাবা, তুমি এখন ভাগো”!
সোহানের কাছে সেই “সাঁতার কাঁটির” ব্যাপারটা না শুনলে নিশ্চয়ই একদিন বালিকার সাথে সাঁতার কাঁটার সুযোগ পেতাম। বদকিসমত হলে যা হয়!
উপরের লেখাটি তারাপদ রায়ের “শিশু” নামের রম্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১২
৬৭টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×