অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। ঈদের আগে আগে কিছু ফ্রী টাইম আছে, ভাবলাম কিছু লিখি। কিন্তু কি নিয়ে লিখব বুঝতে পারছিলাম না। ২ মিনিট চিন্তা করে একটা সাব্জেট পেলাম। “আমার টিউশন সমাচার।“
ভারসিটি ভর্তি হয়ে মাথায় ঝোক চাপে টিউশনি করব। টাকা পয়সা দরকার, আব্বা আম্মার কাছে কারন দেখিয়ে টাকা চাইতে ভাল লাগত না। বিগত দিনগুলোতে টিচারগুলো আমাকে পীড়া দিয়েছে এবার আমিও টিচার হয়ে বাচ্চাগুলারে পীড়া দিব এই মোটামুটি টার্গেট।
টার্গেট মোটামুটি সহজেই ফিল আপ হল। বাসার পাশে এক কাজিনকে পড়াতে হবে, ক্লাস ৭। ২ দিন পর আরেকটা অফার, আব্বার বন্ধুর ছেলে। ক্লাস ১; মাথা নস্ট কি পাচ্ছি এগুলো । ইন্টার পড়ানোর ইচ্ছা আর পড়াচ্ছি গেদা বাচ্চা। যদিও টাকার অঙ্কটা ক্লাস তুলনায় জোস। ৩০০০+৩০০০= ৬০০০ টাকা। এই ৬০০০ টাকাই আমার লাইফের প্রথম ইনকাম। কিন্তু পড়িয়ে মজা পাচ্ছি না। ক্লাস ১ এর বাচ্চাকে অ আ A B C D শিখাতে শিখাতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম।
তারপর ক্লাস ১ এর বাচ্চাটা মেন্টাল। পড়ানোর সময় এদিক অদিক তাকিয়ে কি যেন খুজত। জিজ্ঞেস করলে বলত কি জানি উড়ে যায় বারবার। কথা শুনে আমি হতবাক। কি আর করব ও যেদিকে তাকিয়ে থাকত সেদিকে আমিও তাকিয়ে থাকতাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম।
কারন দেখিয়ে ছেড়ে দিলাম ২টাই। ২টা ইন্টার পেলাম। ২ টাই অবশ্য ছেলে। এখনও কন্টিনিউ করছি। সামনে পরীক্ষা। প্রিপারেশনও মোটামোটি পরিপূর্ণ। যাই হোক এর পরপর অনেক অফার আসতে লাগল। আমিও ফান্দে পরে আর অয়েল খেতে খেতে নিতে থাকলাম। আমার টিউশন ৫টা করে চলতে লাগল স্টিল নাউ।
কিছু ব্যতিক্রম ছাত্র-ছাত্রী পেয়েছি। অনেক মজার ঘটনাও আছে। তিক্ত অভিজ্ঞতা কমই আছে। কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করতে মনে চাচ্ছে।
আমার এক ছাত্রী যেদিন প্রথম গেলাম। টপিক বুঝানোর পর বললাম একবার রিভিউ করতে। সে বই উলটো করে সাবলীল ভাষায় রিডিং পড়তে লাগল :-< :-< , দেখে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। আমার অবাক হওয়া দেখে সে নিজে থেকেই বলল স্যার আমি উলটো করে পড়তেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এটা আমার হবি।
আমার আরেক ছাত্রী গে-লুসাক এর গ্যাস আয়তন সুত্র পড়ানোর পর হঠাত বলে বসল। স্যার, গে লুসাক এটা কোন নাম হল? একদম বিশ্রী! আমার তো বুঝতে বাকি থাকল না যে সে গে আর লুসাক এর সাক-টাকে মিন করছে। তারপরও না বুঝার ভান করে বললাম কেন ভালই তো। আমার তো ভালই লাগে। তোমার খারাপ লাগল কেন? সে দেখলাম মিটিমিটি হাসে। আমি বললাম তুমি কি নামের আগে গে এটাকে মিন করছ? তার ফর্সামুখ লাল হয়ে গেল :!> কিচ্ছু বলল না। একটু পর বলে স্যার আপনি বুঝলেন কিভাবে? আমি বললাম, তোমার সময়টা আমাকেও পার করে আসতে হয়েছে কিনা!
এবার আসি ছাত্রের কথায়। ফেসবুকে তার প্রফাইলে শিশা খাবার ছবি দেখে আমার মাথায় তো বাজ । আমার সামনে ভেজা-বেড়াল আর বাইরে......... আমি জিজ্ঞেস করলাম এগুলা ফেসবুকে শেয়ার করার কারন কি? ফ্যামিলির কেউ দেখে ফেললে প্রবলেম হবে না? সে বলল, আরে ভাইয়া শিশা তো খারাপ কিছু না। আম্মু জানে আমি মাঝেমাঝে যাই। ( ছেলে যে আন্টিকেও উলটো বুঝিয়েছে তা বুঝতে বাকি থাকল না) ;সে আমাকে শিশা লঞ্জের নানা ইনফো দিলাম। তার অনুপ্রেরনায় একদিন গিয়েছিলামও শিশা লঞ্জে।
পড়ানোর ফাকে ফাকে অনেক ঘটনাই প্রতিদিন ঘটে। সব মনে থাকে না। আজ লিখতে বসে তাতক্ষণিক কিছু মনে পড়ল। টিউশন করিয়ে আর আগের মত মজা পাচ্ছি না। হয়ত বেশীদিন করাও হবে না। তবে সৃতিগুলো মনে থাকবে। কতটুকু শিখাতে পেরেছি তা আমার স্টুডেন্টরাই ভাল বলতে পারবে তবে আমি শিখেছি অনেক কিছু আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এটা বলতেই হবে।
************সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।*************
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২০