জীবনে আসলে কোন কিছু নিয়েই বেশি সিরিয়াস হতে নেই। কারন সিরিয়াস ব্যপারটা আমাদের জীবনে আপেক্ষিক।
যেমন:
*আমরা যখন এস এস সি পরীক্ষা দেই তখন এত সিরিয়াস থাকি যে মনে হয় -
" ইয়া আল্লাহ! জীবনে আর কিছুই চাই না। শুধু একটা জি পি এ 5 দাও। যা অন্যায় করসি সব মাফ কইর্যা দাও। এখন থেকে পাচ ওয়াক্ত পড়ুম।"
* এবার কলেজে উঠার পর এস এস সির এত হম্বিতম্বি সব শেষ।এইচ এস সি তে এসে মনে হয় " আরে ধুর্ররররর। এস এস সি আর এমন কি! এইডা তো পুলসিরাত। ইয়া আল্লাহ, যেম্নেই হোক জি পি এ 5 পাইতেই হবে। নাহলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নাই নাই।"
* এবার এডমিশনের সময়। এডমিশনের সময় মনে হয়- " কি পইড়্যা আইছি? শুধু গদ বাধা। এক্কেরে কিছুই ছিল না। আল্লাহ তুমি এই মহাসাগর থেকে উদ্ধার কর। যে কোন পাবলিক ভার্সিটি তে চান্স পাইতেই হবে। এছাড়া আমি আর জীবনে কিছুই চাই না। নাইলে এই জীবন রাখা বৃথা।"
* যে যার মত পাবলিক বা প্রাইভেটে টিকার পর এরপর হয়ে যায় দুই ক্যাটাগরির মানুষ।
-১ম ক্যাটাগরি:
জীবনের মোড়ে রঙিন স্বপ্ন দেখা শুরু। গার্লফ্রেন্ড / বয়ফ্রেন্ড চাই (এক বা একাধিক).....হোক তা প্রেম করার জন্য অথবা বিছানায় নেবার জন্য। তখন মনে হয় -
' তমুকেরে আমার GF/BF হিসেবে পাইতেই হবে। নাইলে এই জীবন যৌবন সব বৃথা। দুনিয়া একদিকে হেতি একদিকে। চাই চাই নাহলে বাচিবো না। '
-২য় ক্যাটাগরি:
পড়া ছাড়া কিছুই বুঝে না।
পড়াই জীবন
পড়াই মরন
পড়াই রেপুটেশন।
যদি একটুও reputation কম পড়ে যায় তাইলে ইজ্জৎ লইয়া টানাটানি। এসময় মনে হয়-
" যেভাবেই হোক মাস্টার্স, পি এইচ ডি করাই লাগবে। পারতেই হবে। নাহলে মইর্যা যামু।"
* এরপর আস্তে আস্তে সময় আসে চাকুরি জীবনে প্রবেশের। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলেমেয়ের উপর মা বাবার এতটাই এক্সপেকটেশন যে সেই এক্সপেকটেশন এর বলি দান হয়ে হন্য হয়ে ছুটি আমরা। ফ্যামিলির হাল ধরার কথা যখন খুচাইতে থাকে তখন মনে হয়- " যেভাবেই হোক একটা না একটা চাকরী করতেই হবে। নাহলে মান সম্মান সব যাবে। বন্ধু আত্মীয় এদের কাছে মুখ দেখাই কি করে। মরা ছাড়া গতি থাকবে না।'
*তারপরে আসে চাকরিতে পদোন্নতির চিন্তা। যেভাবেই হোক পদোন্নতি করতেই হবে। নাহলে রেপুটেশন শেষ হয়ে যাবে।মরা ছাড়া গতি নাই।
* এরপর সময় আসে বিয়ে থা করার। এইটার আবার দুই ক্যাটাগরি:
-প্রথম ক্যাটাগরি:
এদের মনে হয় একটা জুতের মতো বউ/ স্বামী না হইলে এই জীবনটা বৃথা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক কার কি ডিমান্ড আশা করি তা আর নতুন করে বলা লাগবে না। এর আগেও বলেছি সবাই জানেন। তখন মনে হয় কি আর হবে এই জীবন রেখে! তারপর শুরু হয় গরু খোঁজার মতো জীবন সঙ্গী খোজা।
-২য় ক্যাটাগরি:
যাদের রিলেশন তাদের আবার তাদের পার্টনার কে ঘষামাজা করে নিজের যোগ্য করে তুলার আপ্রাণ প্রয়াস। যেই মানুষটারে ভালোবেসেছিল (?) তারে এই কয় বছরে ঘইষা, মেজে, পুরাই বদলায়ে তারপরে বিবাহ (অধিকাংশ ক্ষেত্রে)।
* জীবন সঙ্গী কেউ না কেউ তো হইল। কয়েক বছরের ভিতরে বাচ্চাকাচ্চাও হইল। এরপর সেগুলার উপর স্টীম রোলার চালানোর প্রস্তুতি নেই আমরা। কারন বাচ্চা রেজাল্ট ভালো না করলে রেপুটেশন থাকবে না। তখন মরে যাইয়াও শ্রেয় মনে হয়। পারলে বাচ্চারেও মাইরা ফেললে ভালো.....
----------
তাহলে কি বুঝা যায়! যেই কথা গুলা লিখা হয়েছে সেগুলা অধিকাংশ মানুষের একটা জীবন Summary.. এছাড়াও অনেক ঘটনাই এরমাঝে ঘটে। কিন্তু এই জীবনে এক আপেক্ষিক বিষয় "সিরিয়াসনেস" নিয়া আমরা কতবার মরি! কখনো কি একবারো সিরিয়াস ভাবে নিজের মতো করে বাচার চেষ্টা করি? কখন আমাদের আফসোস হবে তা জানেন! যখন বৃদ্ধ বয়স আসবে। সেই বৃদ্ধ কালে কোন এক সময় আনমনে নিজেরই মনে হবে "নিজেকেই আর জানা হইল না ঠিকমতো। নিজের মতো করে বাচা হলো না। একটা ভালো মানুষ হওয়া গেল না।" এই আফসোস নিয়েই দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নিতে হয়। খুব কম মানুষই পারে এই সিস্টেমের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসে।
অনেকেই আমার এই বিশ্লেষণ এ আমার সাথে একমত না হতেই পারেন। সেটা যার যার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ। তবে
"নিজের মতো করে বাচা!"
"নিজের জন্য বাচা"
নিজেকে জানার মধ্যে কতবড় মুক্তি, কত আনন্দ তার কোন সীমা নেই। অধিকাংশই তা জানে না। মরতে মরতে একসময় মরার সময় ঘনিয়ে আসে। আমি নিজেও জানি না সেই আনন্দ আসলে কতটা বিশালতায় নিয়ে যায়। তবে আচ করতে পারি মাঝে মাঝে। কিন্তু এটাও জানি হয়তো সিস্টেম আমাকেও ছাড়বে না। তারপরেও একটা কথা থাকে যে "ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।"
ভাবতে থাকুন-
ভাবতে শিখুন-
ভাবুন
নিজেকে জানুন-
পারলে বাঁচুন......।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:৪৪