গারাহাম অ্যালিসনের প্রবন্ধটি "থুসিডাইডস ট্র্যাপ" ধারণা কি সেটা একটু বুঝার চেষ্টা করি। থুসিডাইডস ট্র্যাপ একটি পুরানো গ্রীক ধারণা, যা বোঝায় যে যখন একটি উদীয়মান শক্তি একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তির স্থান নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। অ্যালিসন এই ধারণা প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভবিষ্যত যুদ্ধের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করেছেন। ইতিহাসে এই ধরনের ১৬টি উদাহরণের মধ্যে ১২টি যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। প্রবন্ধটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে এই ট্র্যাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিশাল প্রচেষ্টা এবং কৌশলগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
অ্যালিসনের বিশ্লেষণ বলছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পরিবর্তন না করে, তবে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে। তবে, যুদ্ধ অনিবার্য নয়; ইতিহাসের সফল উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে এটি এড়ানো সম্ভব।
তাহলে এরকম অনিবার্য যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্ব নেতারা অবশ্যই কাজ করছে, এটা আমরা অনেকেই ধরে নিতে পারি।
তাহলে চলুন দেখি, এরকমই আরেকজন আমেরিকান, নূরিয়েল রুবিনি, হাডসন বে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এলপি-এর সিনিয়র উপদেষ্টা এবং নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টার্ন স্কুল অফ বিজনেসের ইকোনমিক্সের এমেরিটাস অধ্যাপক এর মতামত। তিনি তার দুইটি আর্টিকেলে চীন ও আমেরিকার মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন। আর্টিকেল দুইটি হল "Cold War 2.0 destroys globalisation" এবং "Nouriel Roubini argues that what started as a trade war between the US & China is quickly escalating into a death match for global economic, technological, and military dominance"। তার অন্যান্য লেখাতেও এই বিষয়ে প্রচুর আলোচনা রয়েছে।
নূরিয়েল রুবিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা একটি নতুন শীতল যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, এবং সামরিক প্রভাবের জন্য একটি মৃত্যু খেলায় পরিণত হচ্ছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি বিশ্বায়নের বিপর্যয় ঘটাতে পারে এবং বিশ্বকে দুটি পৃথক অর্থনৈতিক ব্লকে বিভক্ত করতে পারে।।
রুবিনি বলেন, যদি এই সম্পর্ক সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শীতল যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা একটি গরম যুদ্ধ বা একাধিক প্রক্সি যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এই শতাব্দীতে থুসিডাইডস ট্র্যাপ কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকেই নয়, বরং পুরো বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং সরাসরি যুদ্ধ হতে পারে ইস্ট-এশিয়ার দেশগুলি। ইষ্ট-এশিয়ার দেশ গুলো কোন গুলো?
ইস্ট এশিয়ার দেশগুলি হল:
১. চীন
২. জাপান
৩. দক্ষিণ কোরিয়া
৪. উত্তর কোরিয়া
৫. তাইওয়ান
৬. মঙ্গোলিয়া
৭. হংকং (বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল)
৮.ম্যাকাও (বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল)
এই দেশগুলোর মধ্যে কোন কোন দেশের সাথে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? এ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আমেরিকার এক সেনাবাহিনীর ফোর-স্টার জেনারেল মাইক মিনিহানের একটি মেমো ফাঁস হয়েছিল যা দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ২০২৩ সালে প্রকাশ করে।
মিনিহানের মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২৫ সালে চীনের তাইওয়ান আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও এর পূর্বাভাসের সময়সীমা ২০২২ থেকে ২০৪৯ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আগে, অ্যাডমিরাল ফিলিপ ডেভিডসন ২০২১ সালে বলেছিলেন যে ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের হুমকি প্রকাশ পাবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি, যুদ্ধবাজির অভিযোগ, এবং বাস্তব ঝুঁকির প্রতি মানুষের উদাসীনতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, ইস্ট-এশিয়ার দেশগুলো যদি যুদ্ধের মধ্যে জড়ায়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, এবং মালদ্বীপ কিভাবে Cold War 2.0-এ জড়িয়ে যেতে পারে?
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো (যেমন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান) Cold War 2.0 এর সাথে প্রভাবিত হতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এসব দেশগুলো এই দুই দেশে সাথে প্রতক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যেমন বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এবং সামরিক ক্ষেত্রে জড়িত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে রীতিমত হিমশম খাচ্ছে। তার উদহারণ কিন্তু পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, এবং মালদ্বীপ আর সবশেষ যুক্ত হল আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ। এই দেশগুলোতে কিন্তু তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ব্যাপক অবনতি ঘটে্ছে।
এখন কথা হচ্ছে ভারত, ভারত কিন্তু তার সকল মিত্রদের এক এক করে হারাচ্ছে, যেটা ভারতে অভন্ত্যরীন রাজনীতেও প্রভাব ফেলছে। সামনে Cold War 2.0 যদি Hot War 2.0 তে পরিণত হয়, তাহলে ভারত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তার চারপাশে থেকে ভারত-বিদ্বেষী দেশগুলি পরিবেষ্টিত।
বাংলাদেশও যদি এরকম বাংলাদেশ-বিদ্বেষী দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতো, তাহলে বাংলাদেশ ভারতের মতই চিন্তা করত। নিজের প্রভাব ছোট ছোট দেশ গুলোতে রাখার জন্য।
বাংলাদেশ Hot War 2.0 সময় কৌশলগত পয়েন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। না ভারত চাবে, না আমেরিকা চাবে এটা এক পক্ষের দিকে চলে যাক। এখন একটা ষড়যন্ত্র তথ্য বলছি আবারো বলছি "ষড়যন্ত্র তথ্য (Conspiracy theory)"।
বাংলাদেশকে একটি সম্পূর্ণ ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা এবং ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা । যদিও বাংলাদেশে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। তাহলে কি করা যেতে পারে, ইসলামিক দলকে ক্ষমতায় আনার একটা ছোট্ট প্রয়াস করা যেতে পারে। তাহলে ভারতে জন্য আবার আধিপত্য বিস্তার করা সহজ হবে। এখন, কোন ইসলামিক দলকে আনলে বর্হিবিশ্বে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ হবে? এটি হবে বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামি।
নিচের পয়েন্টগুলো বিবেচনা করুন, কীভাবে ধীরে ধীরে এই পরিকল্পনা এগিয়ে যাচ্ছে:
১. ৫ই আগস্টের পর জাতির উদ্দেশে সেনাবাহিনীর প্রথম ভাষণে কোন দলের নাম সর্বপ্রথম উচ্চারণ করা হয়েছিল? জামাত-শিবির।
২. মন্দির পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাদের বেশি প্রচার করা হয়েছে? মাদ্রাসার ছাত্রদের আদলে জামাত-শিবির।
৩. কোন দলের নিষেধাজ্ঞা আদালতে না গিয়ে তোলা হচ্ছে? জামাত-শিবির।
৪. কোন দলের মধ্যে স্বৈরশাসক খুনিদের সহযোগীরা যোগদান করছে? জামাত-শিবির।
৫. পাবলিক সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য ক্যামেরার সামনে বলছে, বন্যার ত্রাণ দেওয়া ছবি না তুলতে কে বলছে? জামাত-শিবির।
আরও অনেক পয়েন্ট আছে, যা আপনারা আমার থেকে ভালোই জানেন। জামাতের ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিত্ব অনেক, তবে তারা তৃণমূলে বিএনপি বা #BAL সমতুল্য নয়।যেহেতু বিএনপিকে টক্কর দেওয়ার জন্য #BAL দিয়ে দল ভারি করবে, এ এতে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। আফটারঅল, ১৯৯৬ সালে তো তারা #BALরেই সহযোগী ছিল।
জামাত যদি একবার তৃণমূল পর্যায়ে এবং বাংলাদেশে প্রতিটি আসনে নির্বাচনের প্রার্থী দিতে পারে, কিভাবে ধরুন, আওয়ামীরা দাড়ি রেখে জামাতের হুযুর হয়ে প্রাথী হলো এবং পরে ভোট সুষ্ঠ হওয়ার সম্ভবনা অনেক ক্ষীণ করে দিল। তখন জামাতের ৯৯% সম্ভাবনা থাকবে ক্ষমতায় আসার।
এখন যে ষড়যন্ত্র তথ্য বললাম, যদি সত্য হয় এবং সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে জঙ্গি কার্ড খেলা শুরু হবে। হিন্দুদের উপর আক্রমণ শুরু হবে। আর ভারতের জন্য তখন হস্তক্ষেপ করা সহজ হবে। ভারত নিজেকে রাশিয়া মনে করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা দখলের চেষ্টা করবে। আর এর সাথে সাথে বাংলাদেশও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। এদিক থেকে ফাকিস্তান প্রেম দেখাবে বাংলাদেশের প্রতি যে তারা অনেক আপন বাংলাদেশের, যেট ভারত ৭১ এ করেছিল , ফাকিস্তানিরাও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। আর অন্যদিকে চীন-তাইওয়ান যদি সংঘাতে লিপ্ত হয়, তাহলে পুরো এশিয়া Hot War 2.0-এ রূপান্তরিত হবে।
আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে এবং মুনাফা অর্জন করবে সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়েও। যেহেতু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য ৮ বছরের সময়সীমা ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ৩ বছর ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত, তাই আমেরিকার পরবর্তী লক্ষ্য অস্ত্র বিক্রির জন্য অবশ্যই এশিয়া হবে।
এই ধরনের ষড়যন্ত্র তথ্য যাতে সত্য না হয়। আমি এই দোআ সবসময়ই করি।
লিংক-
https://www.hks.harvard.edu/sites/default/files/centers/mrcbg/files/Allison, 2015.09.24 The Atlantic - Thucydides Trap.pdf
https://www.theguardian.com/world/2023/feb/02/us-general-gut-feeling-war-china-sparks-alarm-predictions
https://www.macrobusiness.com.au/2019/05/roubini-end-nigh-cold-war-2-0-destroys-globalisation/https://www.interest.co.nz/business/99917/what-started-trade-war-between-united-states-and-china-quickly-escalating-death-match
https://www.project-syndicate.org/commentary/us-china-preventing-dangerous-collision-by-nouriel-roubini-2023-08
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৪৮