আরমনি সুলতানা বিউটি। খুলনা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী। বাসা আন্দরকিল্লা,চট্টগ্রাম। খুবই নম্র,ভদ্র আর মেধাবী বিউটি কিছুটা শিশুসুলভ আচরণের কারণে সবার কাছে খুব প্রিয় ছিল। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত। কিন্তু Mental Depression এর কারণে মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। Friend Circle এর ছোট ছোট সমস্যাগুলো সহজভাবে নিতে পারতো না। মেধাবী বিউটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কখনো কোন পরীক্ষায় খারাপ করেনি, কিন্তু মেডিকেলে পরীক্ষা আসলে অনেক বেশি বিষণ্ণ ও মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে যেতো। Depression এর কারণে ভাল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারত না।এ ব্যাপারে সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়গণ অবহিত ছিলেন। Psychologically Imbalanced থাকার কারণে ছোটখাটো ব্যাপারে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তো। বিষণ্ণতা ওর ভিতরে এত বেশি কাজ করত যে কোথাও কয়েকটা বন্ধু কোন কথা বললে ও ভাবত ওকে নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। ক্লাসে মাঝে মাঝে Syncopal Attack হতো ওর। নিজে যেটা ভাল মনে করত সেটাকে বেশি প্রাধান্য দিত, সেটা যদি বিপজ্জনক হতো তারপরেও। অনেকটা Mood Disorder এর মত আচরণ করতো। এই ভাল তো এই বিষণ্ণ। বিউটি নিজে নিজে Anti-depressant খেতো এবং ইতোপূর্বে তার আত্মহত্যাচেষ্টার ইতিহাস ছিল।
গত ১৪ অক্টোবর সকালে ওয়ার্ডে( মেডিসিন ব্লক পোস্টিং) যায়নি বিউটি। বেলা ১২ টার সময় ওর রুমমেট ক্লাস থেকে ফিরে এসে দেখে রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকানো। তার সাথে সম্পর্ক ভাল না থাকার কারণে সে অন্য একজন সহপাঠীকে ফোন দিয়ে বলে যে সে যেন বিউটিকে বলে দরজা খুলতে। কিন্তু ঐ মেয়েটি ক্লাসে থাকায় সে তা ভুলে যায়। এরপর বেলা ১টার দিকে সবাই যখন হোস্টেলে ফিরে আসে তখনও দেখা যায় রুম ভিতর থেকে বন্ধ। নাম ধরে ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে প্রথমে জানালা ভাঙা হয় এবং ভিতরে বিউটিকে ঝুলন্ত অবস্হায় দেখা যায়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে দরজা ভেঙে বিউটিকে খুমেক হাসপাতালের ICU তে ভর্তি করানো হয়।তখন তার Pulse ও Respiration কিছুই Detectable ছিলনা। সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার কিছুক্ষণ পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। উল্লেখ্য যে, বিউটিকে উদ্ধার করার শুরু থেকেই পুলিশের উপস্থিতি ছিল। এরপর বিউটির পরিবারকে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানান প্রথমে তার সহপাঠীরা ও পরে কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়। এরপর পুলিশ লাশ নিয়ে হাসপাতালের মর্গে রাখে। রাত ৮টার দিকে বিউটির আপন দুই বড় ভাই আসেন এবং তাদের বোনের লাশ হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করেন।
অপমৃত্যু হওয়ার কারণে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত করতে চাইলে তার ভাইয়েরা বলেন যে তারা বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না করার জন্য লিখিত দিবেন কারণ তারা এটাকে আত্মহত্যা হিসেবেই নিয়েছিলেন এবং লাশটি চট্টগ্রাম নেবার পথে যাতে বিনষ্ট না হয়। তিনি এটাও বলেন যে যদি আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে হয় তবে তাদের বোনকে জীবিত ফেরত দিতে হবে। পরে কলেজের সকল শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীগণ ময়নাতদন্ত না করার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌছান। তখন সোনাডাঙা থানার ওসি বলেন যে ময়নাতদন্ত না করতে চাইলে জেলা কমিশনার সাহেবের অনুমতি প্রয়োজন। রাত ১২ টার দিকে অনুমতি পাওয়া গেলেও ঠিক আধা ঘন্টা পরে তা আবার নাকচ করা হয়।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পত্রিকা যেমন - দৈনিক মানব জমিন, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক প্রবাহ এবং BD News প্রকৃত ঘটনা না জেনে বা কোন প্রকার অবহিত না হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসপাতালের একজন নিরপরাধ শিক্ষক (রেজিস্ট্রারকে) ও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে জড়িয়ে মিথ্যা,বানোয়াট,ভিত্তিহীন,অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ করতে শুরু করে। বিউটির সাথে কোন শিক্ষক (রেজিস্ট্রারের) বা ইন্টার্নের প্রেম বা এইধরনের কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু একটি কুচক্রীমহলের মদদে অনলাইন পত্রিকাগুলো তার নামে এবং উক্ত রেজিস্ট্রারকে অপবাদ দিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট খবর প্রচার করছে যার বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও ডাক্তারগণ এবং হসপিটাল স্টাফ একমত। কোন প্রকার বিচার বিবেচনা এবং সামান্যতম প্রমাণ ছাড়াই নিউজ পোর্টালগুলো যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে তার কয়েকটি প্রমাণ নিচের লিংকগুলোতে:
Jago news 24: http://goo.gl/1YzxqX
দৈনিক আমার দেশ অনলাইনঃ Click This Link
দৈনিক মানবজমিনঃ Click This Link
রিপোর্টারদের কাছে এসব সংবাদের ভিত্তি বা প্রমাণ চাওয়া হলে তারা তা এড়িয়ে গিয়েছেন এবং যোগাযোগ বন্ধ করছেন। কতিপয় ফেসবুক পেজ এবং আইডি সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এবং ডাক্তারদের মানক্ষুণ্ণ করতে একই কাজ করে যাচ্ছে কোন প্রকার যুক্তি, সাক্ষ্য বা প্রমাণ ব্যতিরেকেই। উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত শিক্ষক ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরনের কোন অভিযোগ ছিলনা বা নাই প্রকৃতপক্ষে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার কোনই ভিত্তি নেই। বরং সকল শিক্ষার্থী ও ডাক্তারদের কাছে প্রিয় একটি মুখ তিনি। উক্ত শিক্ষকও ডাক্তারকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এবং এই মানহানির উপযুক্ত বিচারের জন্য যেকোন আইনী প্রক্রিয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সকল শিক্ষার্থীবৃন্দ তার পাশে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, যে শিক্ষককে জড়িয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে, এক বছর আগে একজন HCR এর রোগীর চিকিৎসা দেয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে উক্ত শিক্ষক চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছিলেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মনে করছে সে সময়ে তাঁদের শিক্ষকের সক্রিয় ভূমিকার বদলা নিতেই গণমাধ্যমের কতিপয় ব্যক্তি এরকম নোংরা একটা কাজ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে ঘটনার পরের দিন কোন গণমাধ্যমকর্মীকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়নি।
শুধুমাত্র গণমাধ্যমের অসাধু উদ্দেশ্যের কারণে তাঁদের প্রিয় সহপাঠীর আত্মহত্যার শোকের সাথে সাথে তাঁর পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক, কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছা থাকার পরেও বাধ্য হয়ে বিউটির ময়নাতদন্ত করতে হয়। মারা যাওার পরেও বিউটির চারিত্রিক শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়,একই ক্যাম্পাসের একজন শিক্ষককে ও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে জড়িয়ে চরম অবমাননাকর অভিযোগ করা হয়। শোকের পাশাপাশি একারণে খুলনা মেডিকেল কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক, শিক্ষক সকলের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিউটির সকল ব্যাচমেটের পক্ষ থেকে
মোঃ শহীদ হাসান, শেষ বর্ষ, খুলনা মেডিকেল কলেজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০