বিষয়টা নিয়ে ব্লগে আসার পর থেকে অনেক ঝগড়াঝাটি দেখেছি। লেখা হয়ে ওঠেনি। আমি টাইপ করতে পারলেও লেখার শারিরিক অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। পাঠক হিসেবে দেখেছি সামহোয়ারইনের খোলা প্লাটফর্মের সুযোগ পেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী,সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় জঙ্গীবাদে উস্কানী দেওয়া থ্রেডের ছড়াছড়ি। ১৯৭৫ সালের আগস্ট-নভেম্বর পরবর্তী সামরিক সরকার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে সামরিক ফরমান দিয়ে জামায়াত-মুসলীম লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনে। পরে সেই ফরমানকে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। লক্ষ করার ব্যাপার হচ্ছে শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি প্রদান করা ফরমানটিও ৫ম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটা সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বাতিল করে। ১৯৭৬ সালের যে রাজনৈতিক দল বিধির আওতায় জামায়াত-মুসলীম লীগ হালাল হয়েছিল সেটা বাতিল করার কোন উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেয় নি। এর আগে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বদরুল হায়দার চৌধুরী, নরপিশাচ গোলাম আজমের কাছে দোয়া নিতে গিয়েছিলেন। আর তারো আগে শেখ মুজিবর রহমান যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সরাসরি অভিযোগ নেই তাদের সাধারণক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন। প্রচলিত আছে শেখ মুজিব তখন প্রোসোভিয়েত পরিচয় ঘুচাতে সৌদী আরবের নেকনজরে পড়তে চাচ্ছিলেন। ওআইসিতে যোগদান, মাদ্রাসা বোর্ড গঠণ করে মৌলবাদী উৎপাদন কারখানা স্থাপন, গণহত্যার আরেক নায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জামাই আদর এগুলি সবই তার অংশ। জামায়াতের হাতে নিহতদের তালিকা তৈরী করে দিয়েছিলো সি.আই.এ.। সুতরাং বুদ্ধিজীবি হত্যার বিচার না করতে বা প্রলম্বিত করতে শেখ মুজিবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল। তবে এতো কিছুর পরেও শীর্ষ রাজাকারদের নাগরিকত্ব বাতিল, জামাত-মুসলীম লীগের রাজনীতি রহিতকরণের মতো বিষয়গুলি বহাল ছিল। এই দিক থেকে দেখতে গেলে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির মাঠে পুনরামন্ত্রণ জানিয়েছেন ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের হর্তাকর্তাগণ। ২১ বছর পরের আওয়ামী লীগ সরকার এই আমন্ত্রণকে প্রলম্বিত করেছেন।
এগুলি সবই রাজনৈতিক চালবাজীর রকমফের। এইসব চালবাজীতে আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলটির জোতদার-মহাজন চরিত্র প্রকাশ পায়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী নামক সংগঠিত খুনি চক্রের কার্যক্রম হালাল হয় না। জামায়াত জন্মলগ্ন থেকে গণহত্যার ট্রেনিং প্রাপ্ত। তাঁদের মধ্যে জোশ তৈরী করা হয়েছে নিরুপদ্রব হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য। তাঁরা সুনির্দিষ্ট মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ সারাদেশে। সেদিন তীরন্দাজের একটি পোস্টে দেখলাম সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে তাঁরা বড় ধরণের হত্যাযজ্ঞ চালানোর ফন্দি আঁটছেন যার নেতৃত্বে পাকিস্থানের জামায়াতে ইসলামী। হিসাব খুব সহজ। এক সাথে আফগানিস্থান থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বড় একটা কিলিং হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোমা মেরে সেনাবাহিনি পাঠিয়ে পুরো এলাকা দখল নিয়ে বলবে তোমাদের উদ্ধার করলাম। তারপর যেই সমস্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা-বুদ্ধিজীবিরা আজকে সচেতনভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সংগঠিত হবার, সমর্থক বেইজ তৈরী করার সুযোগ করে দিচ্ছেন তাঁদের নিয়ে সর্ববিদ্যাবিশারদ সরকার গঠণ করে জিওপলিটিক্সের দখলদারী পাকাপোক্ত করবেন।
জামায়াতে ইসলামী নামক সুনির্দিষ্ট দলটিকে মাঠে ময়দানে প্রতিরোধ খুবই জরুরি। সেই প্রতিরোধ কিছুদিন পরপরই জনগণের মধ্য থেকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কিভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চালবাজী বাঁচিয়ে জামায়াতকে আক্ষরিক অর্থে খতম করা যায় তাঁর রাস্তা বের করার ক্ষেত্রে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে নেটজগতের মুক্ত প্লাটফর্মগুলিতে, যেখানে সহজে নিবন্ধন করা যায় সেই জায়গাগুলিকে জামায়াতমনস্কতা মুক্ত রাখতে প্রথমে সেখানে জামায়াত সমর্থকদের চিহ্নিত করা এবং যে কোন মূল্যে সেখান থেকে তাদের বিতাড়ন করা। জামায়াত নিজে সাইট তৈরী করে সেখানে পীঠ চুলকাচুলকি সমিতি করলে সেটা সংগ্রাম পত্রিকার মতোই অতি নিম্ন মাত্রার প্রচারযন্ত্রের কাজ করবে। তাতে চিহ্নিতকরণ অনেক সহজ হয়।
গত দশ-বারো বছরে নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে তাতে নেট জগত খুব জরুরি মিডিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রচারণা,প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে নেটের চাইতে ভালো কোন যোগাযোগ মাধ্যম এই মুহুর্তে নেই। যুদ্ধের সময় যে কারণে ব্রীজ-কালভার্ট ধ্বংশ করা হয় সেই একই কারণে এখন যে কোন সচেতন মানুষের কর্তব্য নেটজগত থেকে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ উপড়ে ফেলতে সহায়তা করা। বিশেষ করে যারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চৈতন্যগত সংগ্রাম চালাতে চান তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই মওদুদী-সাইয়েদ কুতুবের অনুসারিদের প্রতিরোধ করা। মওদুদী-কুতুবের অনুসারিদের খতমের অর্থ সাম্রাজ্যবাদের খুব কার্যকর অঙ্গহানি।
যেসব চিন্তাশীল ব্যক্তিরা হালে "ইতিহাসে পরাজিত পক্ষের ভাষ্য শুনতে হবে"র ফেয়ার প্লে ফ্যান্টাসী থেকে (অথবা অর্থের বিনিময়ে, তবে বেশীরভাগই এই তালিকায় পড়বেন না।) জামায়াতকে পাবলিক ফোরামে মুখ খোলার পথ করে দিচ্ছেন তাঁরা কার্যত সাম্রাজ্যবাদকে সহায়তাই করছেন। এটা তাদের কাছে মনে হচ্ছে না কারণ বিতাড়ন শব্দটার মধ্যে ফ্যাসীবাদের গন্ধ আছে। কিন্তু আক্রমণকারীকে ভজন শুনিয়ে প্রতিরোধ করার ইতিহাস তো আমি পড়িনি। কেউ পড়েছেন বলে শুনিনি। সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তির কর্তব্য পালনই একমাত্র রাস্তা। আক্রান্ত ব্যক্তির কর্তব্য শত্রুকে পরাজিত করা। সেই যুদ্ধে ফেয়ার প্লে বলে কিছু নেই।