তখন মাত্র নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। ছাত্রজীবনের আড্ডাবাজি রক্তে পুরাপুরি বিদ্যমান। এর মধ্যে জাপানে চলে গেলাম পড়াশোনার জন্য। সাল ২০০৪। আমার ল্যাবটা ছিল আবার এমন ক্যাম্পাসে যেখানে বাংলাদেশী ছাত্র হাতে গোনা। ফলে চুটায় আড্ডা দেয়া যাকে বলে সেটা আর হয়না। জাপানি ভাষাও তেমন একটা পারি না যে ল্যাবের পোলাপানের সাথে আড্ডা দিব। তখনই সামহোয়ারইনের সাথে পরিচয়। বিশাল আড্ডাখানা। পুরা বাংগালী স্টাইল। তরকা তরকি, মারামারি সবই আছে । প্রতিদিন ল্যাবে গিয়ে আগে ব্লগে ঢুকতে হবে, তারপরে কাজ শুরু। আর যখন ব্লগ গরম থাকতো তখনতো রাত্রে বাসায় ফিরেই আবার লগইন। আমি আগেও লিখতাম না, পড়তাম বেশি। লেখার ধৈর্য্য আমার কোনকালেই ছিলনা। কিন্তু কোন টপিক বা ক্যাচাল মনে ধরলে কমেন্ট করতে ছাড়ি নাই।
তখনকার লেখকদের মধ্যে সামি মিয়াদাদের লেখা সবচেয়ে ভাল লাগত। উনার কোন লেখাই মনে হয় ছাড়ি নাই। হুমায়ুন আহমেদ স্টাইল। সিম্পল টপিকেও পাঠক ধরে রাখতে পারতেন। ছিলেন নরাধম। স্ট্রং মাইনডেড মানুষ। লেখাগুলাতে প্রচুর ইনফরমেশন থাকত। আরেকজন ছিলেন, নির্বাসিত। উনার ঢাবির উপর একটা স্মৃতিচারণ মূলক সিরিজ ছিল, অসাধারন। পিয়াল ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর উনার লেখাগুলা ছিল সোজা ভাষায় আনপ্যারালাল। অনেক হিস্টোরিকাল ইনফরমেশনই উনার লেখাগুলো থেকে পেয়েছি। উনি অবশ্য এখনো লেখেন, অন্য একটা ব্লগে। ছিল এ-টিম, শিবিরকে সাইজে রাখার জন্য। ড: আইজউদ্দিন, এস্কিমো ভাই, শরফুদ্দিন, হাসিব ভাই এরকম আরো কয়েকজন ছিলেন এটিমের মেম্বার। আরো ছিলেন মিরাজ ভাই। মুক্তিযুদ্ধ, ঢাবি নিয়ে উনার বেশ কিছু ভাল লেখা ছিল। যতদুর মনে পরে, উনার সাথে ছিল এটিমের ক্যাচাল। উনাদের ক্যাচালে ব্লগ মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত।
আস্তিক নাস্তিক ক্যাচাল তখনও ছিল। নাস্তিকের ধর্মকথার কথা মনে পরে। উনার লেখাগুলা ছিল তথ্যনির্ভর। আজেবাজে কিছু কখনো লিখেছেন বলে মনে পড়েনা। আমি নিজে আস্তিক হলেও উনার লেখাগুলা নিয়মিত পড়তাম।
আরো ছিলেন দিনমজুর, রাতমজুর, ক্যামেরাম্যান, মানুষ, উদাসী স্বপ্ন, রাগ ইমন, মদন। ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের একজন প্রফেসরও নিয়মিত লিখতেন, নাম খুব সম্ভবত ফাহমিদ স্যার। ছিলেন কৌশিক ভাই, মাহবুব মোর্শেদ ভাই, ফিউশন ফাইভ, ডটু রাসেল, রাগিব। তখনকার দিনে যাদের নিয়মিত দেখতাম, তাদের মধ্যে শয়তান ভাইকে এখনও দেখি। আসলে আজকে উনার একটা কমেন্ট পেয়ে পুরান দিনের কথা মনে পরে গেল। তাই এই লেখা। সবাই ভাল থাকবেন।