somewhere in... blog

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

আমাদের যাত্রা দেখা ও সমসাময়িক কয়েকটা ঘটনা!

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিঃ হানিফ সংকেতের অনুষ্ঠান কিংবা মাওলানা আজহারী সাহেবের অনুষ্ঠানের ঘটনা গুলো খুব সাধারন এবং নিয়মিত ব্যাপার, উনারা বড় মাপের বলে আলোচনা হচ্ছে এই আর কি! আমি করি, এই সব নিয়ে সিরিয়াস হবার কোন কারন নেই, এই সব মানুষ্য চরিত্রের ব্যবস্থা, অনেক পুরানো! এই সব অনুষ্ঠানের এমন দশা হয় যখন আগ্রহী শ্রোতা দর্শককে এমন ল্যাটকা বা গণ বসার ব্যবস্থা করা হয়, কিছু পর পর বাঁশ দিয়ে বেড়া না দেয়া হলে এমন হতে বাধ্য!

যাই হোক, এবার নিজের জীবনের একটা ঘটনা বলি! সাল ১৯৮৫, তখন কমলাপুরে অনেক বড় বড় খোলা মাঠ ছিলো, এই মাঠ গুলোতে শীতে সার্কাস, যাত্রা, পুতুল নাচ, মেলা ইত্যাদি হত। আমরা স্কুলের পাড়ার কয়েকজন বন্ধু মিলে সিধান্ত নিলাম, যাত্রা কি বিষয় তা দেখবো, সারা রাতের অনুষ্ঠান যাত্রা। শুনেছি অনেক মজা, নাটকের মত হয় এবং মাঝে মাঝে চলে বেশ উদাম নৃত্য, তখন এই নৃত্যে কেহ মাইন্ড করত না! একদিন আমরা ৫ বন্ধু প্রবেশ করলাম রাত ১১টার দিকে, টিকেট কয়েক পদের ছিলো, সর্ব নিম্ম ছিলো ১০টাকা, আমরা ভাবলাম ১০টাকার টিকেটে মাদুরে মাঠিতে বসেই যাত্রা দেখবো, পরে টাকা বাছলে সকালের নাস্তা করে বাসায় ফেরা যাবে।

যাত্রা শুরু হল, ঘন্টাখানেক বেশ ফাঁকা, আমরাও চাঁটাইতে বসে মোটামুটি ষ্টেজের কাছাকাছি গল্পগুজব করে দেখছিলাম, আমাদের জুতা স্যান্ডেল চাঁটাইইয়ের নীচে রাখলাম। কতক্ষন পর পর মাইকে ঘোষণা আসছিলো, এবার আসছেন, প্রিন্সেস লাকী, প্রিন্সেস লাকী! প্রিন্সেস জিরো জিরো সেভেন লাকী! সেই সময়ে মনে হয় যাত্রা নৃত্যে তিনি বিশাল কারিতকর্মা ছিলেন! কিন্তু ধীরে ধীরে রাত ১২টা নাগাত এই ১০টাকার সিটে অনেক মানুষ এসে গেল এবং দেখলাম আরো আসছে। এভাবে চলছে, মাঝে মাঝে যাত্রার ফাঁকে কয়েকটা নৃত্য হয়ে গেল, শীতের রাত কিন্তু মানুষের চাপে পুরা প্যান্ডেল গরম!

এভাবে আরো মানুষ প্রবেশ করলো, বার বার সেই একই ঘোষণা, এবার আসছেন, প্রিন্সেস জিরো জিরো সেভেন লাকী! কিন্তু যাত্রা চলে, হালকা পাতলা নাচ চলে কিন্তু প্রিন্সেস আর আসে না! এদিকে রাত মনে হয় তিনটে, তখনো সেই প্রিন্সেসের দেখা নেই। আয়োজকেরা কিন্তু থেমে নেই, বার বার ১৫/২০ মিনিট পরেই বলেন আবারো সেই কথা! এদিকে আমাদের ১০টাকার দর্শকেরা আর সইতে পারছিলেন না, শুরু হল পিছন থেকে ঠেলা আর ঠেলা, এখন আমরা সামনের পাব্লিকেরা কই যাবো। আমাদের মধ্যে থেকেও শুরু হল পিছনে ঠেলা, কিন্তু পিছনের স্রোতের মত মানুষকে কি সামাল দেয়া যায়, বের হবার কোন উপায় নেই। এদিকে যাত্রাদলের আয়োজকেরা বার বার বলেই যাচ্ছেন, থামেন থামেন ঠামেন, তিনি আসছেন! কিন্তু কে শুনে কার কথা! আমরা অনেকে সেই দিন অনেকের পদপদলিত হয়ে পড়ছিলাম, বন্ধুদের কে কোথায় জানি না, আমিও প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টায় ছিলাম, ঢাকা স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা দেখা ও দর্শকের মারামারি দেখা পাব্লিক বলে জুতা হারিয়ে কোনমতে বের হয়ে আসছিলাম। তবে যাত্রা আর চলে নাই, বন্ধ হয়েছিল।

পরে কমলাপুরের বাবুর হোটেলে ভোরে আমাদের সব বন্ধু উপস্থিত হয়েছিলাম, কারোই জুতা স্যান্ডেল ছিল না, সবার কাপড়ে ধুলো ময়লা! বন্ধু নিয়াজ, বন্ধু মুন্না হাসছিলো, ওরা বলছিলো, 'আর যাবি যাত্রা দেখতে, আগে কইছিলাম, যাইস না, যাত্রা দেখে ফাত্রারা'!

আজও এই ঘটনা মনে পড়লে আমরা বন্ধুরা হাসি, বন্ধু নিয়াজ এখনো বলে, প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলাম সেইদিন, এটাই বড় বিষয়। তবে এখন সেই রাত রিয়েলাইজ করি। আয়োজকেরা সেদিন বসার জায়গার তুলনায় বেশী সিটের টিকেট বিক্রি করেছিল, ব্যবস্থাপনা দূর্বল ছিলো। তারা বার বার সেই নৃত্য প্রিন্সেসের কথা বলে বেশী টিকেট বিক্রি করে কিন্তু সেই প্রিন্সেসকে স্টেজে আনে নাই, মানুষ অপেক্ষা করতে রাজি ছিলো না! বা ইত্যাদি।

যাই হোক, ঠাকুরগাঁও ইত্যাদির অনুষ্ঠান কিংবা মাওলানা সাহেবের ওয়াজের অনুষ্ঠান আমার কাছে একই সুতায় গাঁথা বলে মনে হচ্ছে, আমাদের সেই যাত্রা দেখা রাতের মত! এতে নানান কুট কৌশল খোঁজার কিছু দেখি না! এমন হতেই পারে, দেশে জায়গার তুলনায় মানুষ সেই পুরানো আমল থেকেই বেশী!

তবে, এর পরে আমি আর কখনো এমন ভীড়ের কোন অনুষ্ঠানে যাই না, আমার সেই রাতের কথা মনে পড়ে, কেয়ামতের রাত ছিলো! সেই যাত্রা দেখার রাতে মানুষের পায়ের নিচে পড়ে বিধাতার কাছে আমার একটা কথা/প্রমিজ এখনো বার বার মনে পড়ে, 'আল্লাহ, তুমি যদি এই যাত্রা থেকে বাঁচিয়ে ফেরাও তবে আর কোনদিন যাত্রা দেখতে আসব না'! :D

নয়াপল্টন থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৫০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতে ওয়াকফ বিল: মুসলিম সম্পদের উপর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের নতুন অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৩৭

ভারতে ওয়াকফ বিল: মুসলিম সম্পদের উপর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের নতুন অধ্যায়

ছবিঃ এআই ব্যবহার করে তৈরিকৃত।

ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এবার যুক্ত হলো একটি নতুন উপকরণ—ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ি চালু

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চালু হয়েছে বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ি। গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আজ সোমবার চালু হয়েছে চারটি গাড়ি। প্রতিদিন সকাল আটটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের নেতৃত্ব কী কাঁঠালপাতা খাচ্ছে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



ভারতের এই কাঁঠালপাতা খেকো নেতৃত্ব তাদের দেশের ভিতর মুসলিম নির্যাতন, ওয়াকফ বিল অথবা অন্যকোন অপকর্মের কথা বললেই বলে এটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয় অথচ এরা প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের অভ্যান্তরীন বিষয় নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাঠ প্রতিক্রিয়া: দেবলোকের যৌনজীবন - অতুল সুর

লিখেছেন নীল আকাশ, ১৪ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৯



হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতা কিন্তু স্বর্গের অপ্সরদের সংখ্যা ৬০ কোটি। ৩৩ কোটি দেবতা ৬০ কোটি অপ্সরাদের সাথে কি করতেন, সেটাই এই বইতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ‌

লেখক বইয়ের শুরুতেই গ্রীক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রদল - শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান ত্রাস

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৪ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৬

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর কেবল ছাত্রলীগের রাজনীতি নিশিদ্ধ না করে দরকার ছিল শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি নিশিদ্ধ করা। ইন্টারিম সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কুফল ভোগ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ক্যম্পাসে ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×