অনেকদিন ধরে টেবিলে রান্না করা পাতিল উঠে যেত, আজকাল আবার বাটি দেখা যাচ্ছে! আপা শেখ হাসিনার পলায়নের আগে মুলত পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব কিছু ঝিমিয়ে পড়েছিল। যেখানেই যেতাম, রাস্তাঘাটে যাকেই দেখতাম, কেমন যেন সবাই মন মরা, কেহ যেন সুখে ছিলো না, প্রায় সবার মনের মধ্যে কি একটা যেন কাজ করত, কেহ অতিরিক্ত কাজ করতেই চাইত না, হাসতেও মনে হয় বাঁধা পেত। শেখ হাসিনার পলায়নে কোথায় যেন সাধারন মানুষের মনে একটা আনন্দ এসেছে, এটা আমি আমার দেখার চোখে দেখেছি!
আজকাল বাজার কেমন চলছে! আমি নিজে সব সময়ে বাজার করি, সব্জির কেজি এখন ৫০ থেকে ৬০টাকার মধ্যে। গতকাল আমি বেশ কয়েক পদের সবজি কিনেছি, অনেকদিন পরে মনে হল হাত ভারী করে বাসায় ফিরেছি। প্রায় ৪০০টাকার সবজি এক হাতে বাসায় নিতে খবর হয়েছে বেশ, অন্তত ১ সপ্তাহ চলে যাবে। যে কোন শাক আটি ১৫ থেকে ২০টাকার মধ্যে দেখলাম, লাল শাকের তিন আটি ৩০টাকায় দিতে চাইলো, অনেক সবজি কেনার পরে প্রিয়তমা স্ত্রীর কথার ভয়ে আর শাক কিনি নাই! মাছের দামে দেখলাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০টাকা কম আগের তুলনায়! যে চিংড়ি আগে ১১০০টাকায় তা দেখলাম ৯০০টাকা, তেলাপিয়া, রুই, পাঙ্গাসে ২০/৩০টাকা কমেছে কেজিতে। জিয়ল মাছের কাছে যাই নাই, ফলে বলতে পারবো না, তবে মশলাপাতিতে তেমন কমে নাই। পেঁয়াজ ইন্ডিয়ান ১০০, দেশি ১১০ থেকে ১১৫টাকার বিক্রি হচ্ছে, আদা রসুন গুড়া মরিচ হলুদ জিরা ও গরম মশলাতে দাম কমে নাই।
নিত্য পরিবারের ব্যবহার্য তেল, সাবান, স্যাম্পু, ওয়াশিং পাউডার ইত্যাদি কমে নাই। সব চেয়ে যা ভাল লেগেছে ফার্মের মুরগী কেজি ১৬০টাকা করে কিনলাম, ফার্মের মুরগী মধ্যবিত্তের একটা জরুরী পণ্য, সাধারন রান্না বা চিকেন ফ্রাই বা চায়নিজ কোন রান্নায় এর কদর বেশ, কত খাবি খা! বাজার ঠিক থাকলে মধ্যবিত্তের অনেক কষ্ট লাগব হয়ে যায়! কাঁচা মরিচ দেখলাম ২৮০টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ সংরক্ষণে আপা শেখ হাসিনার বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারলে ভাল হত! তিনি যা বলেছিলেন, যতদুর মনে করতে পারি, তিনি রেসিপি/টিপস দিয়েছিলেন, সিজনে কাঁচা মরিচ কিনে সিদ্ধ করে ডীপ ফ্রীজে রেখে দিতে, পরে বে-সিজনে তা বের করে তরকারীতে দিতে! উনার এমন নানান রান্নার টিপস এখন আমাদের আর কে দিবে? ভেবে কুল পাই না!
অফিসে আসতে যেতে আজকাল তেমন বেগ বা যানজট পাচ্ছি না, রাস্তা প্রায় দেখি ফাঁকা! রাস্তাঘাটের দামী গাড়ি গুলো গেল কই, বিএমডাব্লিও, নিশান, পাজারো, হ্যামার, প্রাডো গাড়ি আমাদের মালিবাগ মৌছাকে আজকাল তেমন দেখছি না। ছাত্রদের গাড়ি চেকিং এদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে! হা হা হা। শেখ হাসিনা সরকার প্রায় ১৬ বছর ধরে ধনীদের পক্ষেই কাজ করে গিয়েছে, গরীব ও সাধারন মানুষকে তিনি চোখে রাখেন নাই, ফলাফল পেয়ে গেছেন! আমি প্রায় এখন চিন্তা করি তিনি দিল্লীতে আজকাল ঘুমান কি করে? উনার কি ঘুম আসে এখন! আমি সাধারন ভুলে দুই টাকা হারালে প্রায় চোখের পাতা এক করতে পারি না, অথচ তিনি নিজের ভুলে, নিজের কর্মে এত বড় সিংহাসন হারালেন! ওহ, চিন্তা করলেই মাথা ঠনঠন করে!
যাই হোক, যা নিয়ে লিখতে বসেছি, যে ছবি দেখাতে বসেছি, তাই নিয়ে আলোচনা করি, আমাদের মত লোকেদের কাজ করেই এই জীবন পাড়ি দিতে হবে। সকালে উঠো, নাস্তা খাও , অফিসে যাও, কাজ করো, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরো, টিভি দেখো, প্রিয়তমা স্ত্রীর কঠিন মুখ দেখো, আবার খাও, ঘুমিয়ে যাও! এই তো আমাদের জীবন সাইকেল, দুই চাকার! (ক্রমশ)
সবাই ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৫