মধ্যবিত্ত একটি ছেলে ও একটি মেয়ের ভালোবাসার সম্পর্কগুলো ক্যালেন্ডারের পাতার মত ।
প্রতিটি প্রচ্ছদই সুন্দর ।
এই সম্পর্কগুলোতে কল্পনার থেকে বাস্তবের মিশেল থাকে ।
হয়তো এজন্যই সম্পর্কটায় নির্ভরতার মাত্রা একটু বেশিই...
সম্পর্কের শুরুটা রংরঙা প্রপোজাল দিয়ে শুরু হয়না । বিকেল কোচিং এ যাওয়ার সময় মাথানিচু করে হাটা মেয়েটা ভুল করে হয়তো একদিন পিছনে তাকিয়ে ফেলে ।
রোজ পিছু করে আসা ছেলেটা থমকে যায় ।
কোন কথা হয়না, হালকা দৃষ্টিবিনিময় ।
ছেলেটা হয়তো উল্টো ঘুরে দৌড় দেয় অথবা বিহবল হয়ে এদিক ওদিক তাকায় ।
সে রাতে হয়তো মেয়েটা ঘুমোতে যাওয়ার আগে মশারি টাঙানোর একফাকে, আনমনে ছেলেটার কথা একটু ভেবেও ফেলে ।
ওদিকে ছেলে দেখা হয়ে যাওয়ার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নিজেকে বুঝ দেয় , আগামী এক সপ্তাহ আর যাবেনা সে !
একদিন পার হয়, দুইদিন পার হয়, তিনদিনের দিন একরকম অবুঝের মতই রাস্তার পিলারের আড়ালে দাড়িয়ে যায় ।
এভাবেই চলতে চলতে হয়তো একদিন ছেলেটা শততমবারের মত কেটে রাখা কসম রাখতে পথ আগলে দাড়িয়েই যায় ।
ছোট্ট করে নিজের পরিচয় দিয়ে, সারারাত রিহার্সেল দেয়া প্রেমনিবেদনের পর্বটুকু একনিঃশ্বাসে সেরে ফেলে ।
মেয়ে একটু হেসে চলে যায় ।
এভাবে একদিন কন্টাক্ট নাম্বারটাও দেয়া নেয়া
হয়ে যায় ।
নাহ্ অন্যান্য কাপলদের মত, রাতজেগে তারা কথা বলতে পারেনা সেলফোনে ।
হাতখরচার টাকাট বাচিয়ে হয়তো ৩০ টাকা ফ্ল্যাক্সি করে ছেলেটা একদিন কল্ দেয় ।
ওদিকে মেয়ে দৌড়ে চলে যায় রুমের শেষ কর্নারে অথবা বারান্দায় ।
হালকা কথা বলার একপর্যায়ে, সীমকোম্পানির বদৌলতে টুক করে কেটে যায় মাঝপথে আটকা রাখা কথার সুতোগুলো ।
অপর্যাপ্ত ব্যালেন্সের দোহাই দিয়ে হয়তো বহুবার, "ভালো থাকবা , আই লাভ য়্যু , বাই.." শোনা হয়না তাদের ।
তারা রাগ করেনা এতে ।
"call ended" লেখা ওঠা স্ক্রীনের দিকে চেয়ে, নীরবে প্রকাশ করে তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা...
মাসে একবার করে বাধ্যতামূলক ডেটিং এ যাওয়ার আওতায় তারা পরেনা ।
পহেলা বৈশাখ, অথবা বান্ধবীর বার্থডে পার্টির নামে একদিন বাসা থেকে বের হয়ে দেখা করে তারা ।
KFC,Pizza hut অথবা নামকরা রেস্টুরেন্টে তারা যায়নি কখনো ।
মার্কেটের নিচে ছোট ফুচকার দোকানেই তাদের সময়টা কেঁটে যায় ।
জন্মদিনের গীফট হিসেবে ছেলেটা রাতজেগে লেখা এক ডায়রি কবিতা, অথবা অনেক ভেবে কিছু খুজে না পেয়ে মেয়েটা একটা হাতঘড়ি উপহার দেয় ।
তাদের মধ্যে থাকেনা ব্রেকআপ নামক কোন ভীতি, অথবা বিট্রে নামক কোন অশুভ ছায়া ।
অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা থাকে তাদের সম্পর্ক ।
বিয়ে করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা কেউ তৈরি করেনা ।
বরং তারা নিজেদের সেভাবে তৈরি করায় সাহায্য করে যাতে, ভবিষ্যৎটা তাদের আওতায় থাকে ।
না থাকলেও অসুবিধা নেই ।
ফ্যামিলির দিকে চেয়ে মেয়েটা অন্য একট বিয়ে করে, সেখানে সুখি হওয়ার চেষ্টা চালায় ।
ছেলেটাও হয়তো একটা চাকরি খুজে নিয়ে
নিজ পরিবারটাকে কাঁধে তুলে নেয় ।
কেউ কাউকে দোষারোপ করেনা ।
বরং তাদের ভিতর তৈরি হয় এক প্রবল শ্রদ্ধাবোধ !
... ... ...
কখনো আহামরি কোন কিছু ভাবিনা আমি ।
তবু কোন এক জোৎস্নারাতে চাদের দিকে তাকিয়ে জেগে জেগে এদের কথা ভাবি, বিনম্রভাবে রেস্পেক্ট করি তাদের ।
কে জানে, হয়তো এদের জন্যই আজোও ভালোবাসা শব্দটা কলুষতায় সম্পূর্ণ ডুব দেয়না ।
কর্পোরেট রিলেশনগুলো যখন সস্তায় দেহগুলোকে ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত, তখন রাত শেষে কাঁথাটা মুড়ি দিতে দিতে এদের কথাই ভাবি...স্বপ্ন দেখি একটি মধ্যবিত্ত ভালোবাসার