somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গ দর্শন: ভূ-স্বর্গ কাশ্মির ভ্রমন (চতুর্থ পর্ব)

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুসমার্গে আমাদের অভিযানটা তেমন সুখের হলো না। যতটুকু বুঝতে পারলাম, একমাত্র তুষারপাতের সময়টাতেই এই অঞ্চল আরো বেশি আর্কষনীয় হয়ে উঠে। চিরাচরিত কাশ্মিরের গাঢ় সবুজ রূপ, বির্স্তীন ঘাসের লন ও পাইনের সমারোহ। একেতো অফ সিজন, তার উপর সহিংসতার কারনে যুসমার্গ এখন বস্তুতঃ পর্যটক শূন্য। যার ফলে এখানকার ঘোড়াওয়ালাদের অবস্থাও ত্রাহি ত্রাহি। এখনকার দ্রষ্টব্য স্থান দুধ-গঙ্গা দেখার জন্যে হেঁটেই রওনা দিলাম ঘোড়ায় চড়ার হাজারো প্রস্তাব উপেক্ষা করে। একটু তফাতে সবার পেছনে আমি। এক বুড়ো ঘোড়াওয়ালা হাজির হলো তার ঘোড়া নিয়ে, অনুনয় করতে লাগলো তার ঘোড়াটি নেয়ার জন্যে, গত কয়েকদিন উনি কোন পর্যটকও পাননি। ভাড়া হিসেবে আমার যা খুশি তাই দিলেই চলবে। আশপাশ পর্যবেক্ষন করে দেখলাম উনিই সবচে' বৃদ্ধ সহিস। মনটা নরম হয়ে গেল, উঠে পড়লাম উনার ঘোড়াতে। এদিকে আমার দেখাদেখি আমার স্ত্রীকেও উঠিয়ে নিলো বুড়োর নাতি তার ঘোড়াতে। যেহেতু আমাদের যা খুশি তাই ভাড়া দিতে হবে তাই কিছুদুর গিয়ে নোমানদেরও তুলে দিলাম অন্য চারটি ঘোড়াতে। সাতটি ঘোড়া টগবগিয়ে চললো কথিত দুধ গঙ্গার উদ্দেশ্যে......।


মাইলটাক যাওয়ার পরই শুরু হলো আসল বিপদ। ওরে সর্বনাশ !!! পাহাড়ের খাড়া গিরিখাত ধরে নামতে শুরু করলো আমাদের ঘোড়াগুলো, আলগা পাথুরে পথ খানাখন্দে পরিপূর্ন। ঘোড়াওয়ালাদের হাজারো আশ্বাস সত্ত্বেও আতঙ্কে আমাদের আত্মারাম খাচাছাড়া। কিছুদুর নেমে ঘোড়াগুলোও অস্বসতিতে নাক দিয়ে ঘো-ঘো আওয়াজ করতে লাগলো আর সবেগে মাথা ও কান নাড়তে লাগলো। ঘোড়াওয়ালেদের জানালাম আমরা আর যাবো না। মাথায় থাক আমাদের দুধ-গঙ্গা দর্শন। কিন্তু ঘোড়াওয়ালার জানালো কোন সমস্যা নাই তাদের ঘোড়াগুলো অতি-প্রশিক্ষিত ও এ-পথে প্রতিদিন কয়েকবার যাতায়াত করে। ঘোড়াওয়ালাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা মৃদু কিত্কিত্ শব্দ শুনে ঘোড়াগুলো আবারও চলতে শুরু করলো আর আমরা সর্বশক্তিতে ঘোড়ার পিঠ-আকড়ে পড়ে থাকলাম।


কিছুদুর গিয়েই দেখা মিললো দুধ-গঙ্গার। এবার বুঝতে পারলাম এর নাম রহস্যটি। চওড়া দৈর্ঘ্যের পাথুরে নদী দুধ-গঙ্গা। পানির রঙ সম্পূর্ন সাদা। এখন বর্ষা নয়, তাই বিশাল পাথরের চাঁইগুলো ডিঙিয়ে সফেদ জলরাশি কুলকুল করে বয়ে চলেছে, দু'ধারে পাইনের ঘন জঙ্গল, মাথার উপর অফুরন্ত নীল। নৈসর্গিক এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি জানিনা। সম্বিৎ ফিরে পেরাল "হ্যালো কাউবয়" সম্বোধন শুনে। ফিরে তাকিয়ে দেখি দু'জন ষাটোর্ধ বৃটিশ (পরে জেনেছি) পর্যটক হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে। পরক্ষনে বুঝতে পারলাম আমাকে রাখাল বালক ডাকার কারনটি। অনেক আগে শখের বশে আমি একটি কাউবয় হ্যাট কিনেছিলাম, যেটি পরে সুদুর হিমাচল প্রদেশ ও উত্তর বঙ্গ তথা দার্জিলিং ঘুরে এসেছি আমি। মুখের গঠনগত কারনে হ্যাটটি বেশ ভালোই মানায় আমাকে। তাছাড়া চিরাচরিত জিনস্ এর ট্রাউজার ও শীতকালীন জ্যাকেটও তার সাথে ভালোই মানিয়ে গেছে। ত্বকের রঙ পুরোপুরি পশ্চিমাদের মতো না হলেও রোদে পোড়া রাখাল-বালক হিসেবে আমাকে চালিয়ে দেওয়া যাবে।

পরিচিত হলাম বৃদ্ধ দুই পর্যটকের সাথে। জানলাম ওরা হেঁটে হেঁটেই কাশ্মির পর্যটন করছে। থাকছেন সাথে করে নিয়ে আসা টেন্ট ও স্লিপিং ব্যাগে। রান্নাবান্নাও নিজেরাই করছেন। অনেকটা চমৎকৃতই হলাম তাদের এই অফুরন্ত প্রানশক্তি ও ভ্রমণ পদ্ধতি দেখে।



দুধ গঙ্গা দেখা হলো, ছবিও তোলা হলো প্রচুর। সাথে থাকা চকলেট ও পানীয় পান করে আবারও ফিরে চললাম যুসমার্গ জিপ স্ট্যান্ডে। ইতিমধ্যে আমাদের ড্রাইভার রিয়াজ ভাই তার সাথে করে আনা খাবার দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিয়েছেন, তাই কোনরকম বিলম্ব ছাড়াই যখন রওনা দিলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে তখন বেলা দুইটা। হোটেলে পৌঁছুতে কমপক্ষে ঘন্টা দু'য়েক তো লাগবেই, তাই পথিমধ্যে কোথাও লাঞ্চ সেরে নেবো কিনা চিন্তা করছি কিন্তু কোন রেস্টুরেন্টই পছন্দ হচ্ছে না। পরে রিয়াজ ভাই পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের হোটেল ম্যানেজারকেই ফোন করলাম লাঞ্চের জন্যে। সে জানালো তিনটের পর তাদের রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। তাই ওখানে খাবার মেলার কোন চান্স নেই।
হোটেলে ঢোকার মুখে পাউরুটি ও জেলি কিনে নিলাম। ওটা দিয়েই লাঞ্চের পর্ব সমাধা করবো ভাবছি এই সময় রুমের ইন্টারকম বেজে উঠলো। অমায়িক গোলাম মোস্তফা সাহেব (হোটেল ম্যানেজার) জানালেন আমাদের লাঞ্চ তৈরী, খেতে আসুন। এই স্পেশাল সার্ভিসের কারণ জানতে চাইলে কারন হিসেবে উনি আমাদের সাথে থাকা বাচ্চারা যাতে না খেয়ে উপোস না থাকে সে জন্যেই এই বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। খেয়েদেয়ে সবাই ঘন্টাখানেক বিশ্রাম, তারপর নোমানের স্ত্রী ফারহানা ও আমার স্ত্রী টুম্পা বাচ্চাদের আমাদের জিম্মায় রেখে চলে গেলো শপিং-এ। দু'রুমের মধ্যে একরুমে বাচ্চা সবগুলোকে কার্টুন ছবি দেখতে দিয়ে আমি ও নোমান তিনতলা রুমের সুদৃশ্য খোলা বারান্দায় বসে বসে কাশ্মিরের বিখ্যাত সুপুষ্ট ও স্বাদু আপেল ভক্ষন করতে লাগলাম।



সন্ধ্যায় দু'জনে মিলে বেরুলাম শেষ বারের মতো ডাল লেইকের শোভা দর্শনে। দুরে হাউসবোটের রকমারি আলোকসজ্জা রাতের ডাল-লেকইকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম। রাতের ডিনার হিসেবে কাশ্মিরী ভেড়ার টিক্কা ও নান কিনে নিলাম।রুমে ফিরেই অজান্তেই মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেল আগামীকাল নান্দনিক সোন্দর্যের এই হোটেল ছেড়ে পহেলগাঁও চলে যাবো বলে। চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×