সোনমার্গ র্পাকিং পয়েন্ট
শ্রীনগর থেকে সোনমার্গের দূরত্ব মোটামুটি ৮০ কি: মি: , কিন্তু বিপদসঙ্কুল পাহাড়ী রাস্তা হওয়াতে এই দূরত্ব পেরুতেই প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেগেলো। গাড়ী সোনমার্গ পার্কিং পয়েন্টে পৌঁছতেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অর্থাৎ যথারীতি ঘোড়া ওয়ালাদের অত্যাচার, সাথে যুক্ত হলো আরেক সমস্যা। সোনমার্গ লোকাল ভিউ দেখতে হলে সোনমার্গের বাইরে থেকে আসা কোন গাড়ীকে যেতে দেওয়া হয় না। লক্কর-ঝক্কর মার্কা টাটাসুমোই হায়ার করতে হবে তার জন্যে। গ্লেসিয়ারের দূরত্ব কতটুকু জানতাম না তাই এবারও ধরা খেলাম । আসা যাওয়া মাত্র ৬ কি:মি: পথের জন্যে দু'হাজার রুপি গুনতে হলো। অচিন দেশ, কি আর করা।
সোনমার্গ ভ্যালিতে পৌঁছলে আবারও ঘোড়াওয়ালা !!! এ যেন ঘোড়াওয়ালাদেরই রাজ্য। মেজাজটা এমনিতেও খিচঁরে ছিলো, তাই দু'একজনকে হালকা ধমক লাগাতেই পথ ছেড়ে দিলো বটে, কিন্তু পেছন থেকে ঠিকই টিটকারি দিতে থাকলো এই বলে যে- হেঁটে গেলে জীবনেও বরফের দেখা পাবো না। কিছুক্ষণ পরের তাদের ভবিষ্যত বানীকে বিফল প্রমাণিত করে দেখা মিললো প্রত্যাশিত তুষার-ছাওয়া পর্বত চূড়ার, তবে অনেক উঁচুতে এবং সীমিত আকারের।
বরফ আবৃত তুষার-শিখর
গলিত বরফের হিমশীতল জল নেমে এসে সোনমার্গ ভ্যালিতে সৃষ্টি করেছে পাথুরে ছড়ার, কুলকুল শব্দে বইছে সে বিশুদ্ধ জলের ধারা। সবাই জুতো খুলে নেমে গেলাম তাতে, তবে কয়েক মুহুর্তের জন্যেই। কেননা জল এতোটাই ঠান্ডা যে দশ-পনের সেকেন্ডের বেশি থাকা যাচ্ছে না। খাওয়ার পানির বোতল ভরে নিলাম, সাথে থাকা বিস্কুট ও জেলি সহযোগে সবাই হাল্কা নাস্তা খেলাম, স্বস্তিও পেলাম, কারণ এখানেও অক্সিজেনের ঘাটতি আছে।
হোটেল স্নো-পয়েন্টের সামনে
সোনমার্গ ভ্যালির কাঠের সেতুর উপরে
ঝরণাজলের উপর নির্মিত দৃষ্টি-নন্দন কাঠের সেতুর উপর বসে বসে স্বর্গীয় অনুভব পাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি ছবি তুলছি, এমন সময় এলো জিরো পয়েন্ট যাওয়ার প্রস্তাব, ড্রাইভাররা যা বললো তাতে এখন গেলে শেষ বিকেলে ফেরা যাবে। কেমন যেন বিশ্বাস হতে চায়লো না, হাতের এন্ড্রইডে সার্চ দিলাম, ওরে সর্বনাশ !!! সোনমার্গ থেকে বরফাবৃত জিরো পয়েন্টের ট্রাভেল ডিসটেন্স ১৬৭৪ কি:মি: , ভয়ঙ্কর দুর্গম এই পথে যাওয়াতেই শুধুমাত্র ২১ ঘন্টা লাগবে। আর কারগিল গেলে জিরোপয়েন্টে নাইট হল্ট করে ১৮১৩ কি:মি: ! গুগলকে আবারো ধন্যবাদ জানালাম সুবিশাল এই তারনা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্যে। পরিত্রাণায় সাধুনাং......
ঝর্নাজলবাহী পাথুরে নদী তার উপর নয়নাভিরাম রিসোর্ট। এখানেও গলফ-কোর্টের মতো সবুজাভ ঘাসের লন এককথায় অনন্য। রিসোর্ট সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সারলাম কাশ্মিরি মসলা সমৃদ্ধ ঝাল মুরগী ও ফ্রাইড রাইজ সহকারে। খেয়ে অনিন্দ্য-সুন্দর সোনমার্গ-ভ্যালির লনের বিছানো বেঞ্চে বসে রোদ-পোহাচ্ছি আর ছবি তুলছি ইচ্ছে মতো।
হোটেল স্নো-পয়েন্ট
জায়গাটা আমাদের এতোই ভালো লাগলো যে একরাত ওখানে থাকার জন্যে হোটেলে গিয়ে রুমের জন্যে দরদামও করে ফেললাম। কিন্তু আমাদের সীমিত বাজেটে একই দিনে দু'দুটো হোটেল রেন্ট বেশ অতিশায্যই হয়ে যায়। তাই সোনমার্গে থাকার পরিকল্পনা বাদই দিলাম।
সোনমার্গ রিসোর্ট, পেছনে বরফগলা সিন্দ নদী
রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। আমরা চলছি, আমাদের পাশাপাশি চলছে বরফগলা সিন্দ-নদী। কিছুদূর যেতেই দেখা মিললো নদীর ওপারে ম্যাপল-গাছে ছাওয়া আরেকটি চিলড্রেন পার্কে। মাথাপিছু দশটাকা দর্শনী দিয়ে ঢুকলাম সবাই। চা খাওয়া জরুরী তাই চড়া দাম সত্বেও পার্কের সুন্দর ছাউনীতে বসে চাও খেলাম। তারপর রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। শহরে যখন ঢুকলাম তখন আকাশ প্রদীপ নিভে গেছে।