somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গ দর্শন: ভূ-স্বর্গ কাশ্মির ভ্রমন (তৃতীয় পর্ব)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাশ্মির মানেই তো বরফরাজ্য, এতো বছর শুধুমাত্র তুষার-আবৃত কাশ্মিরের বিভিন্ন ছবি দেখে দেখে এমন ধারণা জন্মে গিয়েছিল আমাদের সবার। কিন্তু বরফ কই, তুষারপাত কই, আমাদের তো মাথা খারাপ অবস্থা। আজ তাই আমরা সোনমার্গ যাবো। যতটুকু জেনে নিয়েছি তাতে এই ভর-গ্রীষ্মে শুধুমাত্র সোনমার্গের গ্লেসিয়ারগুলোই বরফে আবৃত থাকে। আমাদের ড্রাইভার রিয়াজভাই ঠিক সময়মতোই আমাদের তুলে নিলো আমাদের হোটেল থেকে। ডাল লেইক, নাগিন লেইক হয়ে গাড়ী ঘুরে সোজা ঢুকে গেলো বিস্তৃর্ন ধানক্ষেত সমৃদ্ধ কাশ্মিরের গাঁ এলাকায়। সোনালী পট-ভূমিকায় ধূসর পাথরের গা ও সবুজ এসবেসট্রসে ছাওয়া ঘর, পাইনে ঘেরা গ্রাম গুলোকে দেখতে অনেকটা অয়েল পেইন্টিং এর মতো।


সোনমার্গ র্পাকিং পয়েন্ট

শ্রীনগর থেকে সোনমার্গের দূরত্ব মোটামুটি ৮০ কি: মি: , কিন্তু বিপদসঙ্কুল পাহাড়ী রাস্তা হওয়াতে এই দূরত্ব পেরুতেই প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেগেলো। গাড়ী সোনমার্গ পার্কিং পয়েন্টে পৌঁছতেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অর্থাৎ যথারীতি ঘোড়া ওয়ালাদের অত্যাচার, সাথে যুক্ত হলো আরেক সমস্যা। সোনমার্গ লোকাল ভিউ দেখতে হলে সোনমার্গের বাইরে থেকে আসা কোন গাড়ীকে যেতে দেওয়া হয় না। লক্কর-ঝক্কর মার্কা টাটাসুমোই হায়ার করতে হবে তার জন্যে। গ্লেসিয়ারের দূরত্ব কতটুকু জানতাম না তাই এবারও ধরা খেলাম । আসা যাওয়া মাত্র ৬ কি:মি: পথের জন্যে দু'হাজার রুপি গুনতে হলো। অচিন দেশ, কি আর করা।

সোনমার্গ ভ্যালিতে পৌঁছলে আবারও ঘোড়াওয়ালা !!! এ যেন ঘোড়াওয়ালাদেরই রাজ্য। মেজাজটা এমনিতেও খিচঁরে ছিলো, তাই দু'একজনকে হালকা ধমক লাগাতেই পথ ছেড়ে দিলো বটে, কিন্তু পেছন থেকে ঠিকই টিটকারি দিতে থাকলো এই বলে যে- হেঁটে গেলে জীবনেও বরফের দেখা পাবো না। কিছুক্ষণ পরের তাদের ভবিষ্যত বানীকে বিফল প্রমাণিত করে দেখা মিললো প্রত্যাশিত তুষার-ছাওয়া পর্বত চূড়ার, তবে অনেক উঁচুতে এবং সীমিত আকারের।


বরফ আবৃত তুষার-শিখর

গলিত বরফের হিমশীতল জল নেমে এসে সোনমার্গ ভ্যালিতে সৃষ্টি করেছে পাথুরে ছড়ার, কুলকুল শব্দে বইছে সে বিশুদ্ধ জলের ধারা। সবাই জুতো খুলে নেমে গেলাম তাতে, তবে কয়েক মুহুর্তের জন্যেই। কেননা জল এতোটাই ঠান্ডা যে দশ-পনের সেকেন্ডের বেশি থাকা যাচ্ছে না। খাওয়ার পানির বোতল ভরে নিলাম, সাথে থাকা বিস্কুট ও জেলি সহযোগে সবাই হাল্কা নাস্তা খেলাম, স্বস্তিও পেলাম, কারণ এখানেও অক্সিজেনের ঘাটতি আছে।


হোটেল স্নো-পয়েন্টের সামনে


সোনমার্গ ভ্যালির কাঠের সেতুর উপরে

ঝরণাজলের উপর নির্মিত দৃষ্টি-নন্দন কাঠের সেতুর উপর বসে বসে স্বর্গীয় অনুভব পাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি ছবি তুলছি, এমন সময় এলো জিরো পয়েন্ট যাওয়ার প্রস্তাব, ড্রাইভাররা যা বললো তাতে এখন গেলে শেষ বিকেলে ফেরা যাবে। কেমন যেন বিশ্বাস হতে চায়লো না, হাতের এন্ড্রইডে সার্চ দিলাম, ওরে সর্বনাশ !!! সোনমার্গ থেকে বরফাবৃত জিরো পয়েন্টের ট্রাভেল ডিসটেন্স ১৬৭৪ কি:মি: , ভয়ঙ্কর দুর্গম এই পথে যাওয়াতেই শুধুমাত্র ২১ ঘন্টা লাগবে। আর কারগিল গেলে জিরোপয়েন্টে নাইট হল্ট করে ১৮১৩ কি:মি: ! গুগলকে আবারো ধন্যবাদ জানালাম সুবিশাল এই তারনা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্যে। পরিত্রাণায় সাধুনাং......

ঝর্নাজলবাহী পাথুরে নদী তার উপর নয়নাভিরাম রিসোর্ট। এখানেও গলফ-কোর্টের মতো সবুজাভ ঘাসের লন এককথায় অনন্য। রিসোর্ট সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সারলাম কাশ্মিরি মসলা সমৃদ্ধ ঝাল মুরগী ও ফ্রাইড রাইজ সহকারে। খেয়ে অনিন্দ্য-সুন্দর সোনমার্গ-ভ্যালির লনের বিছানো বেঞ্চে বসে রোদ-পোহাচ্ছি আর ছবি তুলছি ইচ্ছে মতো।


হোটেল স্নো-পয়েন্ট

জায়গাটা আমাদের এতোই ভালো লাগলো যে একরাত ওখানে থাকার জন্যে হোটেলে গিয়ে রুমের জন্যে দরদামও করে ফেললাম। কিন্তু আমাদের সীমিত বাজেটে একই দিনে দু'দুটো হোটেল রেন্ট বেশ অতিশায্যই হয়ে যায়। তাই সোনমার্গে থাকার পরিকল্পনা বাদই দিলাম।


সোনমার্গ রিসোর্ট, পেছনে বরফগলা সিন্দ নদী

রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। আমরা চলছি, আমাদের পাশাপাশি চলছে বরফগলা সিন্দ-নদী। কিছুদূর যেতেই দেখা মিললো নদীর ওপারে ম্যাপল-গাছে ছাওয়া আরেকটি চিলড্রেন পার্কে। মাথাপিছু দশটাকা দর্শনী দিয়ে ঢুকলাম সবাই। চা খাওয়া জরুরী তাই চড়া দাম সত্বেও পার্কের সুন্দর ছাউনীতে বসে চাও খেলাম। তারপর রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। শহরে যখন ঢুকলাম তখন আকাশ প্রদীপ নিভে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×