একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দুইজনের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন।
“রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ।”
জয়বাংলা।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পর পর পৃথক এ দুটি আদেশ দেন
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার এক মিনিটের ব্যবধানে দুই রিভিউ আবেদনের রায় ঘোষণা করে। দুই ক্ষেত্রেই প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, “ডিসমিসড”।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সে সময়কার আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২০১৩ সালের ১ অক্টোবর একাত্তরে মহানমুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেণ।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সাকা চৌধূরী আপিল করলে গত ২৯ জুলাই সুপ্রীম বিভাগের আপিল বিভাগও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ৩০ সেপ্টেম্বর।আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়
সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আবেদন করে।
এরপর সালাউদ্দিন কাদের রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যাতে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আরজি জানানো হয়।
এরা হলেন- পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুন্নেসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মিয়া মোহাম্মদ সুমরো।
২০ অক্টোবর এসব আবেদন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে, আদালত রিভিউসহ এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
২ নভেম্বর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদেরের আবেদন খারিজ করে ১৭ নভেম্বর রিভিউ শুনানির দিন ঠিক করে দেয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
এর মধ্যে চার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।
এ বছর ২৯ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আটটিতে দণ্ডাদেশ বহাল রাখে, একটিতে সাকা চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়।
* ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল রাখা হয়।
* ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকলেও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের সাজার ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
* ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয় চূড়ান্ত রায়ে।
কুখ্যাত এই দুই রাজাকারের শুনানিতেই আসামিপক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। এবং রাষ্ট্রপক্ষে যুক্ত উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “দণ্ড কার্যকরে এখন আর কোনো আইনি বাধা নেই। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্তে সাজা কার্যকর করবে। অবশ্য ক্ষমা প্রার্থণা করলে আলাদা বিষয়।”
সূত্র:
রিভিউ খারিজ, সাকা-মুজাহিদকে যেতে হবে ফাঁসিকাষ্ঠে
রায় পুনর্বিবেচনার পৃথক আবেদন খারিজ সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ বহাল