গতকাল বিকালে বের হয়েছিলাম আমি দুলাভাই ও আমার এক বন্ধু এই তিনজন সহকারে। উদ্দেশ্য দুলাভাইয়ের হাতে-পায়ে ধরে একটা টাইগার (এনার্জি ডিংকস্) খাওয়ার জন্য, দুলাভাই বলল টাকা নেই। বন্ধুটি বলল আমি টাকা ধার দিচ্ছি,যাই হোক একটা দফারফা হল। এবার টাইগার খাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলাম। পথে একটি মেয়েকে দেখে বন্ধুটি বলল- দুলাভাই আপনার লোক।(মেয়েটি সম্পর্কে শ্যালিকা হয়) দুলাভাই বলল- এটা নাকি গেইছেরে (নষ্ট হয়ে গেছে)। আমি বললাম গেইছে মানে। দুলাভাই তখন বিস্তারিত বলল- মেয়েটা নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ে, এই বয়সে দুই-তিনটা বয়ফেন্ড, এমনকি বিছানায় ..................... ইত্যাদি ইত্যাদি। কথাটা বলতে ও শুনতে দুটোই খারাপ লাগে এই বয়সের মেয়েদের কি অবস্থা। (ছেলেরা কিন্তু বাদ) যাই হোক- হাটতে হাটতে বললাম- দুলাভাই শুধু মেয়েগুলোই নষ্ট হয়েছে, ছেলেগুলোর কিছুই কি হয়নি? সেই প্রচীনকাল থেকে আমরা শুধু মেয়েদের(নারী) ঘাড়ে একতরফা ভাবে দোষ চাপিয়ে আসছি, মেয়েরা(নারী) খারাপ আমি কোন দিন শুনলামনা ছেলেরা(পুরুষ) খারাপ। আমরা সব সময় পুরুষদের আড়াল করেছি ব্যপারটা কতটুকু যুক্তি সংগত তা আমার বোধগম্য নয়। নারীর দোষ চাপানোর ব্যপারটা অবশ্য একদিনে আসেনি।প্রচীনকাল থেকে নারী সম্পর্কে আমরা যে ধারণা পেয়ে আসছি এসব তারই বহিঃপ্রকাশ। খারাপ জিনিসের প্রতি মানুষের সবসময় অগ্রহ বোধহয় বেশিই থাকে! বিভিন্ন ধর্ম ও অনেক দার্শনিকদের মতে নারী.....
গ্রীক সভ্যতায় নারী সম্পর্কিত সক্রেটিসের মন্তব্য “ Woman is the greatest source of chaose and disruption in the world. She is like the Dafali Tree Which outwardly looks very beautiful, but if sparrows eat it they die without fail.'' নারী জগতে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস। সে দাফালি বৃক্ষের ন্যায় যাহা বাহ্যত খুব সুন্দর দেখায়। কিন্তু চড়ুই পাখি ইহা ভক্ষণ করিলে ইহাদের মৃত্যু অনিবার্য।
এন্ডারস্কি বলেনঃ Cure is possible for fireburns and Sanke-bite; but it is impossible to arrest woman's charms. অগ্নিতে দগ্ধ রোগী ও দর্পদংশিত ব্যক্তির আরোগ্য লাভ সম্ভব। কিন্তু নারীর জাদু প্রতিরোধ করা সম্ভব নহে।
ভারতীয় সভ্যতায় মনু’র মতে তাহাকে দিবা-রাত্র অবশ্যই কড়া শাসনে রাখা আবশ্যক। কারণ নারী জন্মগতভাবেই দুশ্চরিত্রা ও লম্পট। অতএব, তাহাকে কঠোর শাসনে না রাখিলে সে অবশ্যই বিপথগামী হইবে। মনু’র কথা কতটা যুক্তি পূর্ণ কেউ কি জন্মগতভাবে দুশ্চরিত্র হয় আর যদি হয়ই তাহলে শুধু একা নারী কেন? পুরুষ নয় কেন?
There is no creature more sinful than woman. Woman is burning fire. She is the sharp edge of the razor. She is verily all these in a body. নারীর ন্যায় এত পাপ-পঙ্কিলতাময় প্রাণী আর নেই। নারী প্রজ্জ্বলিত অগ্নিস্বরূপ। সে খুরের ধারালো দিক। এই সমস্ত তাহার শরীরে সন্নিবিষ্ট। (Statues of Woman in mahabharat, page-16 - Professor Indra).
Men should not love them. নারীদিগকে ভালবাসা পুরুষের উচিত নয়।
চীনা ধর্মগ্রন্থে, নারীকে “Waters of woe” (দুঃখের প্রস্রবণ) হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর মতে “নারী হইল সকল অসৎ প্রলোভনের ফাঁদ”। ইহার বর্ণনায় বিখ্যাত ঐতিহাসিক ওয়েস্টারমার্ক বলেনঃ
Woman are, of all the snares which the tempter has spread for men, the most dangerous; in women are embodied all the powers of infatuation which blind the mind of the world.(মানুষের জন্য প্রলোভনের যতগুলি ফাঁদ বিস্তার করিয়া রাখিয়াছে, তন্মধ্যে নারীই সর্বাপেক্ষা বিপদজনক। নারীর মধ্যে সকল মোহিনী শক্তি অঙ্গীভূত হইয়া আছে যাহা সমগ্র বিশ্বের মনকে অন্ধ করিয়া দেয়।) Ibid,P.12-13: Nazhat Afza and Khuashid Ahmad.
ইহুদী ও খ্রীস্টান ধর্মমতে নারীই গোটা মানবতার দুর্দশার কারণ।বহু বিখ্যাত পাদ্রী নারীকে দরকারী আপদ বলেছেন।
উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে অজ্ঞাত বশত এলাকার এক ভদ্রলোককে বলেছিলাম কোন এক কারনে, যে মেয়েরা ৯৯.৯৯% খারাপ, শুনে ভদ্রলোকের মুখ কালো হয়ে গেল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলেছিলাম বাকী ০.০১% মেয়ের মধ্যে আপনার মেয়ে আছে।এক সময় সিদ্ধান্ত নিলাম যে বিয়ে আর করবনা।
যুক্তি খন্ডনের পালা, ফ্লোরেন্স নাইটেংগেল,মাদার টেরেসার মত অনেক মহিষসী নারী মানবতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তা আমরা ভুলে নারী সম্পর্কে মন্ত্য করতে গিয়ে অজানায় রয়ে গেছি যে কোন না কোন নারীর গর্ভে আমার জন্ম। সেই নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে তাঁরই উপর আঙ্গুল তুলছি পক্ষান্তরে নিজের গর্ভধারিনী মা সম্পর্কে কতকগুলো নোংরা কথা বলছি। ধিক কলুষিত পুরুষ শাসিত সমাজের কতিপয় পুরুষকে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর বিখ্যাত সেই উক্তি, কোন কালে এক হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্ণী নারী।
কোরআন-হাদীসের আলোকে নারী-পুরুষঃ
নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমপর্ণকারী নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈয্যশীল পুরুষ ও ধৈয্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ ও যৌন হিফাজতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক স্বরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ্রক অধীক স্বরণকারী নারী-তাহাদের সকলের জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রাখিয়াছেন। (আল-কোরআন)
“নারীই সর্বপ্রথম প্রতারিত হইয়াছিল” বাইবেলের এই যুক্তি খন্ডনে ইসলাম
“আর আমি বলিলাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী বেহেশতে বসবাস কর এবং যাহা ইচ্ছা আহার কর। তবে এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হইও না। হইলে তোমার অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে। কিন্তু শয়তান ইহা হইতে তাহাদের পদঙ্খলন ঘটাইল এবং তাহারা যেখানে ছিল, সেখান হইতে তাহাদিগকে বহিস্কার করিল”।(আল-কোরআন)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
*মাতার পদতলে সন্তানর বেহেশত।(নাসাঈ)
*নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ্কে ভয় কর।(মুসলিম)
*যে মুসলমান তাহার স্ত্রীর সহিত যত ভদ্র ও সদাশয়, তাহার ঈমান ততই পূর্ণতা লাভ করিয়াছে।(তিরমিযী)
আসুন আমরা নারী তথা নারীজাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:০৩