খুব করে উড়তে ইচ্ছা করে। দু'টা যুতসই পাখা থাকলেই তো হতো। বিকেলবেলায় আকাশে দল বেঁধে কবুতর উড়ছে। ছাদে এসেছি এই উড়াউড়ি দেখতেই, বেশিরভাগ কবুতরই মনে হয় সাদা। সূর্য অনেকখনি হেলে পড়েছে। চায়ের কাপের চাও শেষের পথে। এখন নামতে হবে। ছাদের কিণারায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ৯ তলার উপর থেকে ছোট ছেলেদের খেলা দেখা যাচ্ছে। বড্ড চেঁচায় ওরা, এখান থেকেও বেশ শোনা যাচ্ছে ওদের কথা।
নয় তলা থেকে যদি লাফ দিই পড়তে কতক্ষণ লাগতে পারে। সহজ হিসেব, খাতা কলম নিয়ে বসলেই করে ফেলতে পারবো। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো শাড়ি পরে লাফ দিলে কেমন হবে, সালোয়ার কামিজ এর ক্ষেত্রে কেমন হবে? আর চুল ছেড়ে লাফ দিবো নাকি একেবারে তেল দিয়ে খোপা করে? চোখ বন্ধ করে প্রতিটা চিত্র একবার মনের মধ্যে এঁকে দেখে নিলাম। সবই সুন্দর, এই আলোতে সবই সুন্দর লাগবে।
ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে বাসায় ঢুকলাম। বারান্দায় রাখা টিয়া পাখিকে খাবার দিলাম। ওদের উড়তে দিবো না, খুব কাছে রাখবো। ছেড়ে দিলে আর ফিরে আসবে না, বাকি সবার মতো উড়ে চলে যাবে। উড়তে শিখলেই, উড়তে দিলেই কেউ আর কারো খুব কাছে থাকতে চায় না।
এরপর বিছানায় ফেলে রাখা মোবাইল চেক করতে হাতে নিলাম। অনেকদিন পর প্রায় অব্যবহৃত একটা সিমে ম্যাসেজ এসেছে। হয়তো মোবাইল অপারেটরের তবু খুলে দেখলাম। ভার্সিটি শেষ হয়েছে ৫ বছর হবে, আরেকটু বেশিই হবে হয়তো – এরপরও আজকের দিন ওর মনে আছে? আমি তো কথার ছলেও ওর কাঁধে কোনদিন হাত রাখি নি, ফোন করে মিষ্টি করে কথাও বলি নি।
ছেলেটা নাকি আজো বিয়ে করে নি, আমিও করি নি। গত মাসে ছোটবোনের বিয়ে ছিল। একটুও শখ হয়নি, ওভাবে সেজে স্টেজে ওঠার।
আজকের এই দিনে আমাকে জানিয়েছিল ও আমাকে পছন্দ করে। ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু ও আর ফিরতে পারেনি। ফেরালেই কি সবাই ফিরতে পারে? ভোলা কতটা কঠিন? আমার থেকেও বেশি?
ভালো থেকো, ভালো থেকো.
সিম কার্ডটা খুলে বাহিরে ফেলে দিলাম। কিছু তো ভোলা গেলো…..
একটা কবুতর এসে বারান্দায় হুট করে বসলো, ইচ্ছে হলেই ছুঁতে পারতাম। ছুঁতে গেলেই উড়ে যাবে সেই ভয়ে শুধু তাকিয়েই থাকলাম। ওর তো সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরার কথা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৪