একেবারে ঝকঝকে আকাশ, চাঁদ উঠে নি,মেঘের ঘোরাঘুরিও নেই। চাইলেই মনে হয় আজকে সব কটা তারা একপাশ থেকে গোণা শুরু করে শেষ করা যাবে। হিসেবে গোলমিলের সুযোগ নেই। লোভই লাগলো বটে আকাশটাকে দেখে, ভাপ দিয়ে চশমার কাঁচ কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করলে এমন চকচক করে। মুখ হা করতেই ঠোঁটে লেগে থাকা রক্তের ফোঁটাটা মুখের ভিতরে গেলো। লবণাক্ত স্বাদে মুখ বিকৃত হয়ে গেলো। এতক্ষণ মনেই ছিল না কারো মাথার উপরে বসে আকাশ দেখছি।
আমার ছোটবেলা থেকেই নীরবতা পছন্দ। কোথাও নীরবতা খুঁজে পাই নি, যেখানে খুঁজে পেতাম সেখানে থাকার অনুমতি পেতাম না। বড় হলাম, নিজের উপর অন্যের খবরদারি যখন কমে গেলো পছন্দের সেই জায়গায় চলে আসলাম। অনুমতি নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
দেশের মস্তবড় কবরস্থান এটি। সকাল-বিকাল-রাত সবসময় নীরব থাকে। মানুষ আসলেও কেউ জোরে কথা বলে না। কারো সাথে কারো ঝগড়া হয় না এখানে। মুফতে খাওয়া মিলে, কবর খুড়ে দিলে টাকা দেয়। রাতে থাকার জন্য জানাযা পড়ানোর জায়গাটা বেশ, মেঝে টাইলস করা।
পকেটে থাকে নিঁখুতভাবে কেটে রাখা কাঠ-পেন্সিল। রাতের বেলা অনেকক্ষণ আকাশ দেখি, বৃষ্টি হলে বৃষ্টিতে ভিজি। জ্বর-ঠান্ডা কিছুই আর এই শরীরে ধরে না। এক কোণায় নিজের জন্য একটা কবর খুড়ে রেখেছি, সময় হলেই টুপ করে ঢুকে যাবো। আমি নীরবতা অনেক বেশি পছন্দ করি। সেই আবরণ ছিড়ে কেউ প্রবেশ করলেই আমি টের পাই, যখন কেউ সেই আবরণ কাটার কথা চিন্তা করে তখনও। কিছু দুঃসাহসী মানুষ আসে কবর খুড়ে কঙ্কাল চুরি করতে, আর তাদের দেখে আমার জিভে জল এসে যায়।
আজ দুইজন এসেছিল, কবর প্রায় নিঃশব্দেই খুড়ছিল। আমি দুইটা পেন্সিল দুইজনের গলায় গেঁথে দিলাম। এরপর মুখে গাদাখানেক মাটি। মরতে বেশি সময় নিলো না। তখনই রক্ত ছিটে এসেছিল মুখে। হঠাৎ চোখ যায় আকাশে আর এদের কথা ভুলেই যাই প্রায়।
এখানে কেউ দেখতে আসবে না, কবরস্থানে রাতে ভূত আসতেও ভয় করে। একজনের চোখের ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলাম। যথেষ্ট নরম চোখ, মুহুর্তেই গলে গেলো। একটু দূরেই আমার প্রিয় দু’টি কুকুর দাঁড়িয়ে ছিল। লাশগুলো থেকে টুকরো টুকরো মাংস কেটে ওদের দিকে ছুড়ে দিলাম। অনেকদিন হলো ওরা মাংস খায় না। আজকে নিয়ে মোট কতজন হলো? শেষ কবে যেন ৩ জন এসেছিল মারতে একটু সময় বেশি লেগেছিল। ওদের মারা যাওয়ার খবর কেউ কোনদিন জানবে না। পুলিশের কাছেও কেউ বিচার দিতে যাবে না।
যেই কবর খুড়তে আসছিল তাতেই দুইজনকে একত্রে পুতে দিলাম……
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৫