এখান থেকে পৃথিবীটা অন্য রকম মনে হয় । জীবন সম্পর্কেও চিন্তাগুলো আর বিচ্ছিন্ন থাকে না । একটি কেন্দ্রে মিলে যায় । সবকিছুর অর্থ খুব ভালোভাবে বোঝা যায় , স্পষ্ট মনে হয় সবকিছু ।
চারকোণা এই সাড়ে তিন হাত জমি , ডানে মায়ের কবর আর বামে বাবার । আর মাঝে আমি নিজের জন্য কবর খুড়ে রেখেছি । প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামায পড়ে এসে নিজের কবরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি । দিনের প্রথম রোদ যখন কবরটাকে কানায় কানায় ভরে দেয় তখন উঠে আসি । এই কবরের ভিতরটা পবিত্র বাতাসে পূর্ণ , পৃথিবীর কোন চিন্তাই মাথায় আসে না , হাহাকারের সৃষ্টি করে না । আহ , কি শান্তিতে সময়টুকু কাটে ।
কবরটাকে কাঠের ঢাকনা দিয়ে দিয়ে ঢেকে রাখি , বৃষ্টি হলে যেন ভিতরে পানি না জমে , নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় । নিজের দ্বিতীয় ঘর ।
খুব একটা বাজে স্বপ্ন দেখে আজকে ঘুম ভেঙ্গেছিল । আসলেই বাজে বলা চলে ? মৃত্যু তো চির সত্য । নিজের মৃত্যুর অবস্থা নিজে দেখতে পেরেছি । কয়জনের মানুষের এই সৌভাগ্য হয় ।
গোসল সেরে সাদা পাঞ্জাবী ,পায়জামা পড়ে কবরে শুয়ে আছি । আজকে ৬:৩৯ এ সূর্য উঠার কথা । এখনো অন্ধকার কেন ? মেঘ করেছে সম্ভবত ঠিক বুঝতে পারছি না । দূরে কোথাও কুকুর ডাকছে , আশে পাশে তো কোথাও কুকুর ডাকে নি এতো বছর ধরে এখানে আছি । আজ কেন ডাকছে ? কুকুরটা আসলো কোথা থেকে ?
গতকাল সারাদিন চড়ুইয়ের কিচির মিচির শুনেছি , শালিকের ডাক । আজ এই ভোরে কাক ডাকছে । ঠিক আমার কবরের উপরে দিয়ে কাকটা উড়ে গেলো । হুম যে কাকটা স্বপ্নে দেখেছিলাম । ফিক করে হেসে দিলাম । আমি প্রস্তুত , চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে পারি । আমার আর ভয় নেই , কাজ একটু আগিয়ে রাখলাম । মৃত্যুর আগে মধুর ভুলগুলো মনে পড়ছে , ঠিক স্মৃতিই তো দেখছি নাকি স্মৃতি প্রতারণা করছে ?
যাক ওতোসব চিন্তা করে আর লাভ নেই । কানের ভিতরে পিঁপড়া ঢুকছে , আজ আর বারণ করবো না । ওর পায়ের শব্দ খুব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি , এইতো কিছুক্ষণ পরে আর শব্দটা পাবো না ।
কাগজী লেবু গাছের একটা পাতা এসে মুখের উপরে পড়েছে । অদ্ভূত সুন্দর ঘ্রাণ নিঃশ্বাসের সাথে নিতে থাকলাম । এভাবে মৃত্যু আসলে কষ্ট কিসের আর , আমি তৈরি । এখন শুধুই অপেক্ষা । কোন শব্দ কানে না আসার অপেক্ষা , লেবু পাতার ঘ্রাণ না পাওয়ার অপেক্ষা , অপেক্ষা …………
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৭