somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় যুদ্ধের ইতিহাস, কয় জনে জানেন?

১৯ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮ এপ্রিল, ২০০১ :
বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিজয়ের দিন। ২০০১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার ৩০ বছর পর বাংলাদেশ প্রথম বহির্শত্রু দ্বার প্রত্যক্ষ আক্রমনের শিকার হয় এবং সৈন্য সংখ্যা এবং অস্ত্র অনেক কম থাকার পরও পরিপূর্ন বিজয়ী অর্জন করে। কিন্তু আমরা এতোই আত্মবিস্মৃত জাতী এই দিনটিকে মনে রাখারও প্রয়োজন মনে করিনি।

ঘটনার শুরু ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে যখন তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ.ল.ম ফজলুর রহমান জানতে পারেন যে ভারতীয় বিএসএফ নোম্যান্স ল্যান্ডের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে বাংলাদেশের এলাকা পদুয়াকে কানেক্ট করছে আর পদুয়াতে অস্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প করেছে। বিডি’আরের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিবাদ করার পরও ভারতীয় পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হলোনা এমনকি ফ্ল্যাগ মিটিং-এও রাজি হলো না। বাংলাদেশের সার্বভৌম এলাকার উপরে এই রকম আচরণে এপ্রিলের ১৫-১৬ তারিখ রাতে মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নির্দেশে চার শ’র মতো ফোর্স পদুয়াতে মুভ করে আর পদুয়ায় ভারতীয় বিএসএফ ক্যাম্প ঘেরাও করে ফেলে।

বিএসএফের ওখানে প্রায় ৭০ জনের মতো সোলজার ছিল, ছয়টা মাত্র ফায়ার করার পরেই বিএসএফ সৈন্যরা সেখানে সারেন্ডার করে। বিডি’আর পদুয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৬ তারিখে নেগসিয়েশন শুরু হলো ইন্ডিয়ার সংগে। কথা ছিল নেগোসিয়েশন চলাকালিন কোন পক্ষই সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। এই নেগসিয়েশন যখন ডাহুকীতে চলছিল- তখন ভারত বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলাদেশের অজান্তে ১৮ এপ্রিল ভোরের আলো ফোটার আগেই, ওখান থেকে প্রায় দুশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বরাইবাড়ী এলাকার বিডিআর ক্যাম্প ও ঐ এলাকাকে দখলে নেবার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিএসএফের সমন্বয়য়ে গঠিত প্রায় ৫০০ ফোর্স বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে আগ্রাসন চালায়।


৩০ বছরের মাথায় এটাই ছিল বহিঃশত্রু দ্বারা আমাদের দেশ প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। সেখানে তখন বিডি’আরের মাত্র ১১ জন সদস্য ছিল। ভারতীয় সৈন্যদের আকস্মিক গুলিতে শহীদ হন বিড’আরের ল্যান্স নায়েক মোঃ ওহিদুজ্জামান। এতে ভয়ের পরিবর্তে আগুনের মতো জ্বলে ওঠেন বিডি’আরের বাকি ১০ জওয়ান। দুইটা মাত্র সাব মেশিন গান আর অন্য সাধারণ অস্ত্র নিয়ে দুই দিক থেকে ভারতের বিশাল বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পরেন তাঁরা। প্রথম প্রতিআক্রমনেই ভারতীয় বাহিনীর ১৭/১৮টা লাশ পরে যায়। ভারতীয় হানাদার বাহিনীকে ওখানেই আটকে রাখা হয়। এরই মধ্যে মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নির্দেশে ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনা থেকে প্রায় চারশো’ ফোর্স সেখানে মুভ করে এবং দশটার দিকে ওখানে পৌঁছে যায়। ওপেন গ্রাউন্ডে ভারতীয় বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ভারতীয় বাহিনী আগেই থমকে গিয়েছিল, বিডি’আরের পূর্ণ প্রতি আক্রমণে দিশাহারা হয়ে তারা পালাতে থাকে। বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে যায় ১৮টা মৃতদেহ আর আর সাথে নিয়ে যায় আরো প্রায় ১৭৪ টি মৃতদেহ। আরো কিছু ভারতীয় সৈন্য দ্বি-বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়। বাংলাদেশ পক্ষে তিনজন শাহাদত বরণ করেন। ভারতীয় বাহিনী পূর্ণ পরাজয় মেনে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।

আমরা কেউ হয়তো স্মরণ করিনা আমাদের সেই বীরদের যারা দেশের জন্যে আল্লাহ্র নামে বুক টান করে দাঁড়িয়েছিল পাঁচগুণ বড় শত্রু বাহিনীর সামনে আর ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয়। কিন্তু ইতিহাস একদিন ঠিকই মূল্যায়ন করবে এই বীরদের: নায়েব সুবেদার আবদুল্লাহ, হাবিলদার নজরুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক ফজলুল হক, ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহি মোয়াজ্জেম হোসেন, ইদ্রিস আলী, আবদুল হামিদ, লিটন মিয়া, বদরুজ্জামান, এফএসের নায়েক জালালউদ্দিন মিয়া ও সিপাহি ইছহাকআর তাদের যোগ্য নেতা মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানকে।

সালাম তোমাদের ১৮ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×