ব্লগার সুমন রহমানের সামহোয়্যারনামা ৪ এর বিষয়বস্তুতে ত্রিভুজ আর তার ভার্চুয়াল যুদ্ধ বিষয়ক কিছু তথ্য এসেছে। তথ্যগুলোর বাস্তবিক তেমন কোন ভিত্তি না থাকলেও সুমন রহমানসহ আরো অনেক ব্লগার এগুলো বিশ্বাস করেন। এসব ধারনা ও তথ্য প্রচারে আমি সাধারণত বাঁধা দেই না... তবুও এবার আসল সত্যটা তুলে ধরার একটা ছোট্ট প্রয়াস নিচ্ছি... কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলে নির্দ্বিধায় তুলে ধরতে পারেন।
সুমন রহমানের লেখায় যে কয়েকটি বিষয় ফুটে ওঠেছে বলে মনে হলো(ভুল বুঝলাম কিনা তাও জানাতে পারেন)-
১) এ-টিম হল সামহোয়ারের প্রথম এলিট গ্রুপ যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করে।
২) ত্রিভুজ এর একটি দল রয়েছে যারা জামাত পন্থী।
৩) এটিমের মত হীন কৌশল অবলম্বন করতে ত্রিভুজও পিছপা হয়নি।
৪) এটিমের মত ত্রিভুজেরও রয়েছে দুর্ধর্ষ এবং আত্মঘাতী নিকস্কোয়াড।
৫) এসি-টিম প্রো-প্রগ্রেভ, প্রো-লিবারেশন, সেক্যুলার এবং বিজ্ঞানমনস্ক।
৬) ঐতিহাসিক ভাবে ত্রিভুজ এন্টি-লিবারেশন, প্রো-জামাত এবং প্রো-ইসলামী নেটওয়ার্কেই সময় কাটিয়েছে।
৭) এ-টিমকে গালির উপলক্ষ তৈরি করে দেয়াতে ত্রিভুজকে বা তার নেটওয়ার্ককে তৎপর দেখা গিয়েছে।
৮) এ-টিমের ব্লগারদের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের সত্যমিথ্যা ব্লগে প্রকাশ করে দেয়ার মাধ্যমে ইমেজ ডাউনসাইজ করার কাজ করে গিয়েছে ত্রিভুজ বা তার নেটওয়ার্ক, রিলিজিয়াসলি।
৯) উইকিপিডিয়ায় কন্ট্রিবিউট করতে গিয়ে ত্রিভুজ ধরা খেয়েছে।
১০) ত্রিভুজ আক্রান্ত হয়েছে সামহোয়ারে এবং অপরাপর কম্যুনিটি ব্লগগুলোতে।
১১) এটিমের আক্রমন ত্রিভুজকে কাহিল করতে না পারলেও "অশ্রু" নামের একটি নিক এই বিষয়ে সফল।
১২) ব্লগীয় রাজাকার ও ব্লগীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এটীম অন্য কিছু করার সময় পায়নি।
এই বারোটি পয়েন্টের বিষয়ে আমার বক্তব্য (অল্প কথায়):
১) আমার দৃষ্টিতে এটিম হলো সেই গ্রুপ যারা মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলুষিত করেছে ব্লগে।
২) ত্রিভুজের কোন দল নাই। দল থাকলে ত্রিভুজের বিরুদ্ধে করা পোস্টগুলোতে প্রতিবাদের বন্যা দেখা যেতো.. সেরকম কিছু দেখা যায় না। এটিমের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই তেমনটা দেখা যায়। আর ত্রিভুজের রাজনৈতিক বা দলীয় অন্ধত্ব নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকে সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের বেশীর ভাগ সমর্থকরা দূর্নীতি দমনের বিরুদ্ধে থাকলেও ত্রিভুজ সেই দুর্নীতি দমনকে স্বাগত জানিয়েছিলো। ত্রিভুজের পুরানো পোস্ট ঘাঁটলে আওয়ামীলিগ, বিএনপি ও জামাত সহ সকল দলেরই সমালোচনা পাওয়া যাবে।
৩) এটিমের মত কোন হীন কৌশল ত্রিভুজ গ্রহন করেছে সেটা পরিষ্কার করার জন্য লেখকের প্রতি ত্রিভুজের আহবান রইলো। অন্য ব্লগাররাও এগিয়ে আসতে পারেন..
৪) কিসের ভিত্তিতে এই বক্তব্য দিলেন? ত্রিভুজের দুর্ধর্ষ এবং আত্মঘাতী নিকস্কোয়াড এর কয়েকটা নিকের নাম বলার জন্য অনুরোধ রইলো।
৫) ওয়েব কমিউনিটিতে ট্রোলিং করা যদি প্রো-প্রগ্রেভ, প্রো-লিবারেশন, সেক্যুলার এবং বিজ্ঞানমনস্কতা হয় তাহলে আমার কিছু বলার নাই।
৬) ত্রিভুজ আরো অনেকের সাথেই সময় কাটিয়েছে। এটিমের আক্রমনের একটা কৌশল ছিলো ইসলাম নিয়ে লিখলেই কাউকে প্রথমে রাজাকার ঘোষণা করা তারপর আক্রমন করা। এই তথাকথিত রাজাকারদের আক্রমনের যেমন প্রতিবাদ ত্রিভুজ করেছে তেমনি স্বঘোষিত অনেক নাস্তিক ব্লগারকে আক্রমন করলেও ত্রিভুজ প্রতিবাদ করেছে। ব্লগে অসুস্থ এক চরিত্র 'মাহমুদুল হাসান রুবেল' এর 'মিথিলা নাটকের' পর যখন সবাই রুবেলের পিন্ডি চটকাতে ব্যস্ত তখন সেই স্রোতে গা না ভাসিয়ে ত্রিভুজ সবাইকে শান্ত হতেই আহবান জানিয়েছিলো। অথচ সেই রুবেল কিন্তু চরম এন্টি ত্রিভুজ গ্রুপেরই একজন একটিভ সদস্য! ট্যাগিং করার সময় এই বিষয়গুলো কেউ বিবেচনা করে নাই...
৭) ব্লগে ত্রিভুজের কোনরকম নেটওয়ার্ক নিয়ে ঘুরে না, আগেই বলেছি। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
৮) এটিমের ব্লগারদের সত্য-মিথ্যা ব্লগে প্রকাশ করার মহান(!) দায়িত্ব কখনো ত্রিভুজকে পালন করতে দেখা যায় নাই। স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা ব্লগার অমি রহমান পিয়াল নিজের যৌবনজ্বালায় তার ৪০০০ এডাল্ড পোস্ট দেয়ার বিষয়টি ব্লগে সবাইকে জানিয়েছিলো। সেই সময়ে পর্নগ্রাফির পক্ষে অবস্থান নেয়া ব্লগারের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম ছিলো না.. এ সম্পর্কিত একটি পরিসখ্যান ব্লগেই আছে। Click This Link
৯) এই বিষয়ে আমার দুটো পোস্ট ছিলো। লেখককে পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
১০) এই তথ্যটা পুরোপুরি ঠিক নয়। ব্যক্তিগত ব্লগ সাইট, ইয়াহু গ্রুপ, গুগল গ্রুপ ইত্যাদিতে ত্রিভুজ বিরোধীরা প্রচারণা চালাচ্ছে বটে কিন্তু অন্য কমিউনিটিগুলোতে তারা এসব ট্রোলিং করার সুযোগ পায়নি। উদাহরণ হিসেবে প্রথম আলো ব্লগ কমিউনিটিতে ত্রিভুজের ব্লগ দেখে আসতে পারেন লেখক।
১১) অশ্রু নিকের মালিক এরকম দাবী করলেও এর কোন বাস্তবতা নেই। কেউ নোংরামী করে নিজেকে সফল দাবী করলেই সে সফল হয়ে যায় না এটা সুমন রহমান না বুঝতে পারলে আমার করার কিছু নেই।
১২) সামহোয়্যারইনে এটিমের মূল মিশন ছিলো ব্লগের পরিবেশ নষ্ট করা.. মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করা না। ব্লগের বেশীর ভাগ তথাকথিত রাজাকারী নিকগুলোও মালিকও এরা। এই বিষয়ে গত তিন বছরে আমি একাধিক পোস্ট দেয়ার পরেও তারা এই কাজগুলো চালিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি তাদের দলেরই একজন ঘটনাগুলো ফাঁস করে দেয়। Click This Link
ত্রিভুজ এর বিষয়ে এসব ভ্রান্ত ধারনার জন্য ত্রিভুজ কখনো অন্যকে তেমন ভাবে দায়ী করে না। মূলত ত্রিভুজের বিরুদ্ধে ব্লগে এবং ব্লগের বাইরে অনেক রকম অপপ্রচার রয়েছে। ত্রিভুজের এমন অনেক বন্ধু রয়েছে যারা আগে এসব অপপ্রচারে কান দিয়ে ত্রিভুজকে খারাপ জানতো... পরে তারা ত্রিভুজের বেশ ভাল বন্ধু হিসেবেই ত্রিভুজের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। এরকম একজনের সাথে ম্যাসেঞ্জারে হওয়া আলাপের কিছু অংশ প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় তুলে ধরছি-
জনৈক বন্ধু: তোমার নামে ব্লগে আর ব্লগের বাইরের অপপ্রচারগুলো নিয়ে কিছু বলো না কেন?
ত্রিভুজ: বললে কী হতো?
বন্ধু: বললে সবাই সবার ভুল বুঝতে পারতো.. তারা তোমাকে খারাপ মনে করতো না।
ত্রিভুজ: নিজের বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগ না করে যারা অন্যের কথায় বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তাদের কাছে ভাল হওয়ার কোন ইচ্ছে নাই.. মূর্খদের কাছ থেকে দূরে থাকা উত্তম।
বন্ধু: তারা যে সবাই মূর্খ এমনও তো না.. ব্লগে তারা অনেক ভাল ভাল কাজ করতেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে করা কাজগুলো তার ভেতরে অন্যতম।
ত্রিভুজ: যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে অনেক ভাল ক্যাম্পেইন হচ্ছে বটে.. আমিও সেটা সমর্থন করি। কিন্তু এদের বেশীর ভাগই হলো সুবিধাবাদী চরিত্র... তাদেরকে ভাল মনে হওয়ার কারণ কী?
বন্ধু: খারাপ মনে হওয়ারই বা কারণ কী?
ত্রিভুজ: যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে যারা নাচতেছে তাদের গিয়ে বলো সকল দূর্ণীতিবাজদের বিরুদ্ধে এধরনের একটা ক্যাম্পেইন করতে পারবে কিনা.... কাউকেই পাবে না। নিজের প্রিয় দলের সমালোচনা করতে বলো.. কেউ এগিয়ে আসবে না... দেশ এদের কাছে কোন ফ্যাক্টই না..
বন্ধু: তবুও তুমি নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু লিখতে পারো। আমার মনে হয় লেখা উচিত।
ত্রিভুজ: আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে কেন? সবাই তো আমার কাজকর্ম দেখতেই পাচ্ছে... যারা নিজের বিচার বিবেচনার চাইতে অন্যের কথার উপরে বেশী ভরসা করে তাদের কাছে ভাল হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নাই। তবুও আমার বিষয়ে অপপ্রচারের জবাবে একবার পোস্ট দিয়ে সবাইকে প্রমাণ করে যেতে বলেছিলাম। সেখানে তো কেউ কিছু লিখতে পারলো না... এরপর আর বলার কী আছে?
যাই হোক, সত্যিকার অর্থেই ত্রিভুজ তার নামে বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানারকম অপপ্রচারে বিচলিত নয়। সত্যিকার বুদ্ধিমান ও প্রাজ্ঞাবানরা কখনো এসবে কান দেয় না.. যারা দেয় সেইসব মূর্খদের নিয়ে ভাবার সময় ত্রিভুজের নাই।
সবাইকে ধন্যবাদ। আর সুমন রহমান এর সামহোয়্যারনামার পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
---
আপডেটঃ কিছু বিষয় নতুন করে যুক্ত করতেই হলো। অন্ধ আর হুজুগে নাচা বাঙালীদের জন্য-
একটা ইন্টারেস্টিং স্বীকারোক্তি দেখুন-
(সূত্রঃ Click This Link মন্তব্য নং- ৭৩)
এবার একটা মজার ঘটনা বলি। এই অশ্রু নিক থেকে এমন কিছু পোস্ট দেয়া হয়েছিলো যেগুলোর প্রক্ষিতে কথিত ব্লগীয় মুক্তিযোদ্ধা শিবির ব্লগে আন্দোলন করে। এখন অমি পিয়ালের স্বীকারোক্তি থেকে পরিষ্কার হচ্ছে এই নিক সেই তথাকথিক ব্লগীয় মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরি। তাহলে নিজেদের নিক দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী পোস্ট দিয়ে নিজেরাই আবার সেটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করাটা কোন পর্যায়ের অসুস্থতা বলে মনে হয়?
এর সাথে সংশ্লিষ্ট দু'টো লিংক দেই। আগ্রহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন-
১) Click This Link
২) Click This Link
এই দু'টো পোস্টের পর স্ক্রিনশর্টগুলোকে ভূয়া দাবী করে অনেক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। অনেক পোস্টও হয়েছিলো। কিন্তু আসলেই কি ভূয়া? সু-শান্ত'র মন্তব্যটা তাই প্রমাণ করে?-
সূত্রঃ Click This Link মন্তব্য নং- ৯
(শেষ অংশটুকু আরো আপডেট হতে পারে)