আমাদের এক বন্ধু, যখনই সে শুনবে কোন বই বিখ্যাত হয়েছে বা কোন পুরুষ্কার পেয়েছে তখনই সে সেটার উপরে ঝাপিয়ে পড়বে। যেভাবেই হোক বইটা জোগাড় করে পড়ে ফেলবে এবং সেটা নিয়ে তার জ্ঞান গর্ভ বক্তিমা শুনিয়ে দিবে আড্ডায়। সিনেমার বিষয়েও একই কাহিনী। এই একটি বাতিক ছাড়া দুনিয়ার তাবৎ সব বিষয়ে সে ছিল অমায়িক। সে থাকলে আড্ডায় চায়ের বিল, কোকের টাকা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের কোন টেনশনই করতে হতো না। বিনিময়ে শুধু তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় আমাদের সায় দিয়ে যেতে হতো। বিষয়টা মাঝে মাঝে খুব বিরক্তিকর হলেও ভাল মানুষ সেই বন্ধুটিকে কষ্ট দিতে চাইতাম না। তাই বলে মাঝে মাঝে মজাও যে করতাম না, তা কিন্তু নয়।
Gladiator একসময়ের বেশ আলোচিত ইংরেজী সিনামা ছিলো। এই ছবির বিভিন্ন রিভিউ আর আলোচনা পড়ে পড়ে বন্ধুটি সিনামা দেখার আগেই বিশেষজ্ঞের মত যখন তার বিখ্যাত বক্তিমা দিতে শুরু করলো তখন আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম এইবার তাকে একটু সাইজ করতে হবে। সুতরাং শুরু হলো আমাদের দুই নাম্বারী। ওয়েব সাইট ঘেটে ঘেটে সব পেজ বের করে সেগুলো এডিট করে আমরা প্রিন্ট নিয়ে রেডী। কবে বন্ধুটি Gladiator দেখবে এবং তার বিখ্যাত আলোচনা শুরু করবে। যথারীতি একদিন সে ছবিটি দেখে চকচকে চোখে বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে চলে এলো আড্ডায়। আমরা আগেই প্রস্তুত ছিলাম.. শুরু হলো বিটলামী। সবাই খুব সিরিয়াস ভাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সিনামা বিষয়ক বিখ্যাত ওয়েব সাইটের পেজ পড়তছি.. আর হতাশাব্যাঞ্জক ভাব করছি Gladiator এর বিষয়ে। বন্ধুটিও আগ্রহী হলো বিষয় কি জানার জন্য। তাকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হলাম যে বড় বড় চলচিত্র বিশেষজ্ঞরা এটি নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করলেও ছবি দেখার পর সবাই বেশ হতাশ হয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে রিভিউ প্রকাশের অভিযোগও নাকি তারা তুলেছেন। সর্বপরি Gladiator একটা ভূয়া ছবি। এসব শুনে বন্ধুটি আমাদের হাত থেকে প্রায় জোর করেই সকল প্রিন্ট আউট কেড়ে নিয়ে এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললো। আমরা তখন আরেক প্রস্থ চা'য়ের অর্ডার দিয়ে ছবি কেমন দেখেছে জানতে চাইলাম। বন্ধুটি খুব বিরক্ত নিয়ে Gladiator এর মত একটা ভূয়া ছবির সমালোচনা করতে শুরু করলো। এই দৃশ্যুটা ভাল লাগে নাই.. শেষের বিষয়টা ঠিক মিললো না.. মাঝখানে ঐ ডায়লাগটা কেমন বেখাপ্পা লেগেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সব ভেতরে ভেতরে হেসে অস্থির... হাসি চাপতে না পেরে প্রসংগ বদলে হাসির গল্প শুরু করলাম এবং চেপে রাখা হাসি বের করে সেযাত্র রক্ষা।
এই বন্ধুটিকে নিয়ে করা আরো অনেক রকম মজার গল্প আছে.. পরে আরেকদিন শুনানো যাবে। তবে এরকম শুধু আমাদের সেই গ্রুপেই ছিলো না। অসংখ্য দেখেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অন্তত এক ডজন বোদ্ধা(!) কে চিনি যারা কোনরকম জগাখিচুরী একটা ছবি বা বই হিট হলেও তার ভেতরে অনেক ভাল ভাল জিনিষ দেখতে পায় আবার ভাল কোন ছবি/বই কোন কারনে পাবলিক না খেলে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। এদের আসলে নিজস্ব চিন্তা চেতনা বলে কোন বস্তু থাকে না। আট দশজনে কি বলে সেটাই তাদের মতামত। যেটা বললে সবাই পাত্তা দিবে সেটাই তারা তোতা পাখির মত আউড়ে যায়।
যাই হোক, মূল প্রসংঙ্গে ফিরে আসি। কথা হচ্ছিলো হুমায়ূন আযাদকে নিয়ে। হুমায়ুন আযাদের সম্পর্কে বুঝে হোক আর না বুঝে হোক একটা মন্তব্য বেশ শুনা যায়। তা হলো, "হুমায়ুন আজাদ বোঝার মতো বুদ্ধি সবার থাকেনা..."। মজার বিষয় হচ্ছে যারা এসব মন্তব্য করে থাকেন তাদের বেশীর ভাগেরই হুমায়ুন আযাদের বই পড়েও দেখেননি। এমনকি বই পড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর একটি বিষয় ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আলোচনা করতে এসে তো একটা ভাব নিতে হবে। তাই অমুক বোদ্ধা বড় ভাই বলেছেন হুমায়ুন আযাদ বুঝার মত বুদ্ধি সবার থাকে না.. সুতরাং আমাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। আমাকেও বলতে হবে হুমায়ূন আযাদ বুঝার বুদ্ধি তোমার নাই, আমার আছে। হুমায়ুন আযাদ এক্ষেত্রে কি বলেছেন সেটা যাচাইয়ের সময় কোথায়। তার সকল কথা অমৃত সমান। হোক সেটা জন্মদাত্রী "মা" কে অপমান করে কোন বাক্য বা সমগ্র নারী জাতীকে হেয় করে করা কোন বক্তব্য। তাই, 'শুধু মাত্র বুদ্ধিমানেরাই রাজার পোষাক দেখবে', এই মূলো ঝুলিয়ে ধুর্ত খলিফা হাতিয়ে নেয় স্বর্ণমূদ্রা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:২৩