somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসম প্রেমের গল্প বৃষ্টি সেদিনও ছিল সামান্য ১৮+

৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রায় আট ঘন্টা অবচেতন হয়ে পড়ে থাকার পর টিপু বুঝতে পারে সারা অন্ধকার যেন সূর্যের আগুন চোখ দেখে লুকিয়েছে। তারপরও মনে হচ্ছিল এইমাত্র শুয়েছিল সে। গতকালের ভ্রমনজনিত ক্লান্তি কাটিয়ে এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। গতকাল ভাবীদের এখানে আসতে তার নাভিশ্বাস উঠেছিল সত্যি কিন্তু এখন সেই সমস্ত দূর্ভোগের কারনে খারাপ লাগছে না। এখন আফসোস লাগছে ক্লান্তির কারনে অনেক কিছুই উপভোগ করা হয়নি।

ভাবীদের পুকুরপাড়ে দাড়িয়ে সকালে দাঁত ব্রাশ করছিলো টিপু। কেউ হয়ত পুকুরে মাছের খাদ্য দিয়েছিল আর অনেক মাছ ভেসেছিল সেই খাদ্য খেতে। ভাল লাগছিল বলেই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল সে। “বীথি আপু ছেলেটি কে?” হঠাৎ দপ্তরির স্কুল ছুটির ঘন্টার মতো স্পষ্ট আর খৈ ফুটা শব্দের মতো মিষ্টি প্রশ্নে টিপুর মনোযোগ ততক্ষনে তাদের উপর পড়েলো কিন্তু তারা তাদের মতো ব্যস্ত। বিধাতা মানুষ সৃষ্টির সময় যে কারও কারও প্রতি একটু বেশি যত্নশীল ছিলেন, মেয়েটিকে দেখার আগে কখনো মনে হয়নি তার। সে একটা অদৃশ্য শক্তিতে সক্রিয় হয়ে উঠে। না, মেয়েটির প্রতি এই দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়া বোকামি। মেয়েটি বয়সে অনেক বড় হবে। এই সমাজ সংসার এখনও এমন হয়নি যে এটাকে সহজভাবে নিবে। মেয়েটির দিকে তাকিয়েই একা একা ভাবে সে। অবশ্য মেয়েটির মুখের দিকে তাকালে ষোল-সতরই মনে হয়।

ভাবী একদিন মমি বলে ডাক দিয়ে বলে দ্যাখ তোদের এখানে কাকে নিয়ে এসেছি। মেয়েটি বেরিয়ে এসে এমন স্বাভাবিকভাবে তাকালো, টিপুর মনে হলো সে কখনো অবাক হয়না, হবেওনা। কোন হিংসুটে চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি না থাকাতে তাদের মাঝে আত্নীয়তার যে একটা মধুর সম্পর্ক ছিল তা ক্রমেই বিকশিত হতে লাগলো। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি দেহটাকে অর্থাৎ টিপুর নিজেকে কখনো বেটে বলে মনে হয়নি অথচ মমির সাথে পরিচিত হবার পর নিজের শ্যামলা বর্ণটাকেও অসহনীয় লাগছে। সতেরটি বসন্ত পাড়ি দেয়ার পরও চেহারা থেকে বালক বালক ছাপটা সরে যেতে অযথাই যেন বেশি সময় নিচ্ছে। মমিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে চোখের ক্ষুধা মিটে না। চোখের তৃষ্ণা অনন্ত। মমির ফর্সা আঙ্গুলে টিপুর অসুন্দর আঙ্গুলগুলো বারবার লেগে যায় কখনো কেরাম কিংবা লুডু খেলতে গিয়ে। সেই ফর্সা আঙ্গুলগুলোকে হাতের মুঠোয় চেপে ধরার প্রচন্ড ইচ্ছে হয় টিপুর। মমির চুলে তেল দিতে গিয়ে দুধের স্বরের মত মসৃন পিঠে হাতের উল্টো পাশটা বারবার স্পর্শ করত সে কিন্তু কখনোই কারও কোন ভাবলেশ ছিলনা যেন অন্য দশটা আশরাফুল মাখলুকাতের মতো তাদের মানসিকতা এত সংকীর্ণ নয়। মমি একদিন সিগারেট টানবার আগ্রহ দেখায়। তারা নৌকা নিয়ে বিলের গভীরে চলে যায়, গা ঘেষে বসে। মমির টেনে দেয়া সিগারেট টানবে বলে টিপু একটি সিগারেট ধরায় যেন মমির টেনে দেয়া সিগারেটে অমৃত থাকবে। মমি সাবলীলভাবে মদ্যপ রমনীর মত সিগারেট টানে, ধোয়া ছাড়ে। তাকে কেমন জানি রহস্যময়ী লাগে। সে টিপুর মুখে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ে। মমির গভীর দৃষ্টি, ঠোঁটে ক্ষুদ্র হাসির মর্মার্থ যেন বুঝতে পারে টিপু তাই সুযোগটা হাতছাড়া করেনা সে। খুব কাছ থেকে মমির মূখে, গলায় ধোঁয়া ছাড়ে টিপু। সহসাই দুটি নরম হাতের ধাক্কায় পানিতে ছিটকে পড়ে সে। মমির মাংসল বাহুদ্বয়কে টিপুর হাতের আঙ্গুলগুলি আকড়ে ধরে।

- ফেলে দিই? মমির চোখে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি রেখে বলে টিপু।

- প্লিজ আমাকে ভিজিও না। আর্তি জানায় মমি। কিন্তু তার কণ্ঠের স্বরটা যেন বলছে “আমাকে ভিজিয়ে দাও”।

পাউরুটির মত নরম বাহুতে আঙ্গুলগুলোর বেশিক্ষন ডুবে থাকার লোভে টিপুর বিলম্ব হয়  তাকে পানিতে ফেলতে। মমি যখন পানি থেকে উঠে তখন টিপুর মনে হয় যেন নৌকায় জলপরী উঠেছে। ভিজে চুপচুপে গোলাপী জামাটা যতই তার ভিজে যাওয়া সৌন্দর্যকে পৃথিবীর লোলুপ দৃষ্টির ঝড়-তুফানের হাত থেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিল ততই ফুটে উঠছিলো গোলাপ কলির মতো, থোকা থোকা আঙ্গুর আম গাছে ঝুলে থাকার মতো। সৌন্দর্যের বসন্তে মমির পুষ্ট বুক, ভারী নিতম্ব কোন কিছুই দৃষ্টি এড়ায় না। তথাপি সে নির্বিকার, সে আগুয়ান। ঊনিশটি ক্যালেন্ডারের পাতা ধরে ঝুলে থাকা এই তরুনীকে বাইরে থেকে যতই উচ্ছল ও দৃঢ় বলে মনে হয়, আসলে সে ক্লান্ত, হতাশায় নিমজ্জিত। ঝুলে থেকে থেকে তার হাত ছিড়ে যাবার যোগাড়। তাই হয়ত আত্নফাটা হাহাকারে সে আগমন কামনা করছে কোন এক দ্বিগিজয়ীর। যে এখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নামিয়ে দিবে কোন এক স্বর্গপূরীতে। গলা সমান পানিতে দাড়িয়ে থেকে টিপুর চোখে তার দৈন্যদশা সূর্যের আলোর মতোন স্পষ্ট হয়ে উঠে।

কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না টিপুর। বিছানাকে শুন্য উদ্যান মনে হচ্ছে। কখনোই এমন তীব্র একাকীত্ব সে অনুভব করেনি। মমিকে বারবার মনে পড়ছে। নানা ভাবনা মাথায় জটলা পাকাচ্ছে। মমিও কি এমন ছটফট করে? সেও কি নানা অজুহাতে তাকে স্পর্শ করে? নইলে জ্যোতিষির মত তার হাত দেখে বানিয়ে বানিয়ে এটা সেটা বলতো সে জেনেও কেন হাত ধরে থাকতে দিয়েছে? কেনইবা তার হাত উরুতে রেখে নেইলপলিশ দিয়ে দিয়েছে? সেরকম মনোবৃত্তি থাকলে তো সে অনায়াসেই পারতো। তবে কি জানাজানি হয়ে বদনাম হয়ে যাবার ভয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে?

পরদিন যখন মমির মা ভাবীদের ওখানে গল্পে মত্ত। বাবা বাড়িতে নেই, ছোট ভাইও স্কুলে। মমি ঘুমিয়ে আছে। বাঁধাহীন দৃষ্টি দিয়ে মমিকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে টিপু। মমির ঠোঁটকে পিপার্সাত মনে হয়। মমির নাকে, মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সেই ঘামে টিপুর রুক্ষ ঠোঁটকে ভেজাবার ভাবনা মনে আসে কিন্তু মনে হচ্ছে লোমের স্পর্শেও সে জেগে যাবে। হঠাৎ কেউ যেন উত্যক্ত করে বলল টিপুকে এই নারী কখনো তোমার হবে না, তোমায় মনে রাখবে না, সে অন্য কারও ঘরণী হবে। অন্য কেউ তার…..। বানের পানি চলে গেলে দূর্বাঘাসের যে অবস্থা হয় টিপুর অবস্থাও সেরকম হলো। মমি কখনোই তার হবে না, তাকে মনে রাখবে না, অন্য কেউ তার…..। মন কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। টিপুর ইচ্ছে করল মমিকে জড়িয়ে ধরে তার হৃদয়ে চিরস্থায়ী অস্তিত্বের বীজ বপন করতে। সে অন্তঃত এই ভেবে তাকে মনে রাখবে। একটি নারীর যে সৌন্দর্য দেখে পুরুষ মুগ্ধ হয়, মুখে লালা আসে, সেই সৌন্দর্যের দীঘিতে এই পিচ্ছি ছেলেটা প্রথম দক্ষ ডুবুরীর মত তন্ন তন্ন করে রত্ন খুজেছে এবং খুজে পাওয়ায় সে গর্বিত। টিপু ভাবে, জড়িয়ে ধরলে সে কি করবে? হয়ত সে ঝটকা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিতে পারে, ঘৃণায় মুখে থুথু দিতে পারে। আবার এমনও হতে পারে সেও জড়িয়ে ধরতে পারে আক্রোশতায়। যার দেহে এত আহবান সে কিভাবে ফিরিয়ে দিবে? টিপুর মনে হলো তার জীবনের সমস্ত স্বার্থকতা ব্যর্থতা পাশাপাশি দাড়িয়ে। সে যাই ভাবুক তাকে স্বার্থক হতেই হবে। তবুও কেন জানি স্পর্ধার বাধ ভাঙতে চায় না। অবস্থাটা যেন ঘুমন্ত বাঘের সামনে পা টিপে টিপে চলা। বাঘের ঘুম ভাঙ্গলে রক্ষা নেই তবুও বাঘের সৌন্দর্যকে হাত বুলিয়ে দেখার ইচ্ছে। অবশেষে বুকে দুঃসাহস সঞ্চয় করে টিপু মমির ঠোঁটে আঙ্গুল স্পর্শ করে। মমির ঘুম ভাঙ্গে না। মনে হয় মমির ঠোঁটযুগল যেন আঙ্গুলগুলিকে সোহাগ করছে। তারপর টিপু নিজের ঠোঁট মমির ঠোঁটে স্থাপন করতেই সে চমকে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। টানটান বুকের পাহাড়ে পর্দা দেয়। তাকে দেখে রাগান্বিত মনে হয়। টিপু হতভম্ব। লজ্জায়, অপরাধবোধ এবং একইসাথে অনুশোচনায় চলে আসতে আসতে উপলব্ধি করে, অন্যের গাছের চুরি করা ফল খেয়ে যতই তৃপ্ত হওয়া যায় না কেন, কোন নারীকে সাধু সেজে চুরি করে স্পর্শ করে কোনই তৃপ্তি নেই বরং হিতে বিপরীত হয়। তারচেয়ে বরং স্পর্শের সময় সংকীর্ণ মানসিকতা প্রকাশ পেলেই হয়ত অনেকটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।

পরদিন বিলপাড়ের মেঠো পথে দুজন হাটছিল। উন্মাদ হাওয়া বারবার মমির পর্দা এলোমেলো করে দিচ্ছিল। মমি অসস্তি বোধ করে টানটান বুকে বারবার পর্দা দিতে। টিপু ভাবে এমন রুপবতীর হৃদয়ের ঝরণায় স্নান তো দুরের কথা সেখান থেকে সামান্য জলের ঝাপটাও সে মুখে দিতে পারবেনা। তার হতাশাগ্রস্থ মন আপনমনে বলে, মমিকে যদি না পাই তবে জীবনে পাওয়ার থাকলো কি? নীরব প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে তারা দুজনেই নীরব। টিপু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। বহু কষ্টে কথা বেরুল,

- শুনলাম, আপনি বিয়েতে রাজি হননা, কেন? মমি টিপুর দিকে একবার তাকিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটানা বলতে লাগলো,

- বিয়ে একটি নারীর জীবনে খুবই কাংখিত দিন। সে দিনের আশায় মেয়েরা ছটফট করে। আমার মনে হয় সে রাতে তাদের প্রায় সবাই ধর্ষিতা হয়। কয়েকটা কথার বদৌলতে স্বামী বনে যাওয়া পুরুষটা দেনমোহর সংক্রান্ত কয়েকটা কথা বলে কিংবা না বলে ক্ষুধার্ত প্রাণীর মতো তাজা মাংস পেয়ে সারা জীবনের ক্ষুধা মেটায়। তার ভাললাগা, মন্দলাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মানসিকতায় কোন আগ্রহ নেই। সে তার স্বামী। স্ত্রীর দেহে কর্তৃতের একমাত্র অধিকারী। প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠবে তাই সে নির্মম। আসলে তারা কোন মেয়েকে বিবাহ করে না। বিবাহের উদ্দেশ্য দেহ। এসবের জন্যই এতে আমার বিতৃষ্ণা ধরে গেছে।

টিপু ততক্ষনে একটু স্বাভাবিক।

- বিয়ের আগে কথা বলে ছেলের মানসিকতা যাচাই করে নিতে পারেন না? একটু ইতস্তত করে আবার বলে সে।

- কয়েকটা মূহুর্তে একটা মানুষকে কতটুকু জানা যায়? আমাকে পাওয়ার জন্য সে চাতুরীর আশ্রয়ও নিতে পারে। বলেই টিপুর দিকে তাকায় মমি।

- সবাইতো আর একরকম না। মাটির দিকেই তাকিয়ে বলে টিপু। মমি আবারো বলতে থাকে,

- সব পুরুষই যেন ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় একই রুপ। তাদের সাথে কথা বলাটাই যেন দোষের। দু’একদিন ভালভাবে কথা বললেই পরের দিন যত্রতত্র প্রসংশা হাতে গুজে দিবে। আমার ড্রয়ারে এরকম অনেক প্রসংশাপত্র পড়ে আছে। সেগুলো পড়লে তাদের কুকুরের মত জিভটা চোখের সামনে দেখতে পাই। টিপু এবার মমির চোখের দিকে তাকিয়েই বলে,

- এটাই তো স্বাভাবিক। যদি একটি পাত্রে কতগুলো ফল সাজিয়ে রাখা হয় এবং সবার জন্য বরাদ্ধকৃত একটি ফল নিতে বলা হয় তবে সবাইতো চাইবে সবচেয়ে ভাল ফলটাকে বেছে নিতে। তেমনি সুন্দরী নারীর স্বামী হবার প্রয়াসে তারা একটু তাড়হুড়ো করে অথবা আপানার ভাষায় চাতুরীর আশ্রয় নেয়। মমি কিছুক্ষন নীরব থেকে বলে,

- আমি জানি কিন্তু আর পাঁচ সাতটা মেয়ের মত আমি নই, উন্মাদনার মধ্যে জীবনের সকল মর্ম খুজি না। আমি চাই এমন একজন স্বামী যে আমাকে নিয়ে পাখির মতো আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখবে, হাঁসের মতো পুকুরে সাঁতরাতে চাইবে। শুধু দেহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আবার কিছুক্ষণ নীরব থেকে দৃষ্টি একদিকে রেখে মমি বলল,

- দু’একজনকে যে ভাল লাগেনি তা নয়। কিন্তু মন কখনোই তাদের কামনা-বাসনার লোভকে মেনে নিতে পারে না। তাই নিজের রুপটাকে মাঝে মাঝে অভিশাপ মনে হয়। আচ্ছা বাদ দাও তো। তুমি কাল কখন চলে যাবে? টিপু কিছু বলতে পারে না। মমির দূর্দান্ত মিষ্টি মুখে বেদনা ভেসে বেড়াচ্ছে। তাকে প্রেম কাতর মনে হয় টিপুর।

- তুমিতো কাল চলে যাবে, আমাকে মনে থাকবে তো? আবারো হেসে হেসে বলে মমি।

- আমার ঠিকই মনে থাকবে, আপনারই থাকবে না। কিছুটা অভিমানের স্বরে বলে টিপু।

- বিশ্বাস কর টিপু, তোমায় কখনো ভুলবো না। খুব মিস করবো। টিপুর হাত ধরে অনেকটা অনুরোধের স্বরে আবারো বলে,

- যতক্ষন আছো, বাকী সময়টা আমরা উপভোগ করতে পারি না? রাতে এসো পুকুরের দক্ষিণ পার্শ্বের আমগাছ তলায়।

- কেন? টিপুর মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে হঠাৎ।

- ভীরু কোথাকার। ভাজা মাছটিও উল্টিয়ে দিতে হবে? বলেই লজ্জামিশ্রিত অদ্ভুদ মুখভঙ্গি করে ঠোঁটে এক টুকরা হাসি ফুটিয়ে পালিয়ে যায় মমি। স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে থেকে টিপু মমির চলে যাওয়া দেখে শুধু।

সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বন্ধ হওয়ার নমুনাও দেখা যাচ্ছে না। টিপুর অসহ্য লাগছে। ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বারবারই কানের কাছে ফিসফিস করে কে যেন বলছে “ভাজা মাছটিও উল্টিয়ে দিতে হবে?” আবার টিনের চালে বৃষ্টি পড়া শব্দের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এ নির্মমতা সহ্য হচ্ছেনা কিছুতেই। মমিও কি তার মতো তবে অসম প্রেমে জড়িয়ে গেছে? যদি গিয়েই থাকে তবে এর পরিণাম কি? তারা দুজন দুজনকে কতটুকুই বা বুঝেছে? কাল সকালেই তো চলে যেতে হবে। আর কখনো কি দেখা হবে মমির সাথে? এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে টিপু ঘুমিয়ে পড়ল।

প্রায় মাসখানেক হলো টিপু নিজের বাড়ীতে আসার পর সারাক্ষণই আনমনা, একটু গম্ভীর ধরনের। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বুক থেকে চাপা কোন পাথর সরে গেছে। কারন মমির চিঠি এসেছে। একরকম ভয়, সংকোচ এবং আনন্দ নিয়ে সে খামটা খুললো। গোছানো হাতের লিখা বেশ স্পষ্ট ও সুন্দর,

টিপু,

ভালো আছ নিশ্চয়ই। থাকাটা স্বাভাবিক কারণ মমি নামের কেউ তো এখন যখন তখন এখানে সেখানে যাওয়ার জন্যে বায়না ধরছে না। তুমি যাই বলো সত্যি বলতে ভালোই কেটেছে সময় ক’দিন। তোমার কি মনে হয়? যাই হোক, তুমি চলে যাওয়ার আগের দিন তোমার সাথে কথা বলে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। এই সত্যি উপলব্ধি করেছি যে, সমাজ সংসারে স্বাভাবিক রীতিটাকে অস্বীকার করাটা বোকামী। কোন অপছন্দ বিষয় যেটা সামাজিকভাবে স্বীকৃত, মেনে নেয়াটাই বরং শ্রেয় এবং তাই হয়তো আমি আমার মানসিকতা বদলে দিয়েছি। যে জন্য তোমাকে লিখছি, আমি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আগামী মাসের তিন তারিখ বিয়ে। বিস্তারিত সাক্ষাতে। তুমি অবশ্যই আসবে। সে পর্যন্ত ভালো থেকো।

ইতি,

মমি।


টিপুর বুক থেকে একটু আগে পাথরটা সরে যাওয়ায় তাকে যেমন উচ্ছল মনে হচ্ছিল মূহুর্তেই সে জায়গাটায় বিরাট শুন্যতা অনুভব করলো। বুকভরা হাহাকার নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো টিপু। আকাশে ঘন মেঘ জমেছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মনে হয় কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি নামবে। হঠাৎ টিপুর মনে হলো বৃষ্টি, সেদিনও ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৫৯
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×