বিষয়টা পড়ে ভাল লাগলো তাই শেয়ার করলাম. সু্ত্র বাংলা নিউজ২৪.কম Click This Link
স্বাস্থ্য অধিকার
ডাক্তারের ফি ও প্রাসঙ্গিক কথা
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামানিক
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, যে রোগী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ৫০০ টাকা দিতে চান না, তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে উকিলের কাছে যান। আইনজীবীকে ফি দিতে গিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না।
আ ফ ম রুহুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল, ব্যক্তিগত রোগী দেখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না? উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে একটা কথা বলতে চাই। বড় বড় আইনজীবীদের সামনে তো ৫০ হাজারের আগে দাঁড়াতে পারবেন না। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ৫০০ টাকা দিতে সমস্যা হয়।
যে রোগী এই টাকা ফি দিতে চান না, তিনিই আবার উকিলের কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দরিদ্রদের জন্য সরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। যাঁর খরচ করতে অসুবিধা, তিনি সরকারি হাসপাতালে যেতে পারেন।
প্রভাবশালী, সম্পদশালীরা বাধ্য না হলে সরকারি হাসপাতালে আসে না। তারা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেন। এদেশের চিকিৎসাসেবায় তাদের আস্থা নেই। এ ছাড়া তাদের জন্য অত্যাধুনিক প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ইত্যাদি তো রয়েছেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক।
সরকারি অফিসে চলে তাদের শুধু হাজিরা, বাদবাকি প্রাইভেট প্রাকটিস, কে কত টাকা কামাতে পারে সে প্রতিযোগিতা চলছে বাণিজ্যিকভাবে। এর একমাত্র কারণ কোথাও জবাবদিহিতা নেই।
কাউকে কোথাও বদলি করলে রাজনৈতিক তদবির তো আছেই। ঘুরেফিরে বহাল তবিয়তেই থাকেন তারা। এত আরাম, অর্থ, বিত্ত, প্রভাব ডাক্তারদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। সঙ্গত কারণে অধঃস্তনরাও সুযোগ নেয়। তাদের অবহেলার কারণে দেশের বিশাল অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।কোনো রোগী তার রোগ নিরাময়ে বা কষ্ট লাঘবের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রথমেই তাকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ ফি প্রদান করতে হয়। দেশে সর্বোচ্চ আমলা একজন সচিবের মাসিক বেতন ৪০,০০০ টাকা হিসেবে দৈনিক এক হাজারের কিছু বেশী।
একই দেশে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার নিয়মিত চাকরির পর সন্ধ্যায় রোগী দেখে প্রতিদিন কমবেশি অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকা ফি আদায় করেন। এটা জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে ২০ জন রোগীর কাছ থেকে দৈনিক আদায়। অনেকে ২০ জনেরও বেশি রোগী দেখে থাকেন। বাংলাদেশে মানুষের যে আয় তাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ আয়ের পরিমান বিবেচনা করলেও জনপ্রতি রোগী থেকে ১০০ টাকার বেশি নেয়া অযৌক্তিক। চিকিৎসক তো মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নন।
অতিরিক্ত আয় যাদের জীবনের লক্ষ্য তাদের চিকিৎসা সেবা পেশায় না আসাই উচিত।
এছাড়া বাংলাদেশে দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিষ্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ নামে একটি আইন আছে। যাতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক স্থাপন ও পরিচালনায় সুষ্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত আছেন, এমন কোনো রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক অফিস চলাকালীন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এবং করলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
কিন্তু দেশের যত্রতত্র ক্লিনিক গড়ে উঠেছে এবং এর জন্য যথাযথ লাইসেন্স গ্রহণ করা হচ্ছে না। এসব ক্লিনিকে সংঘটিত অপরাধেরও বিচার হচ্ছে না। অপারেশনের ফিসসহ বিভিন্ন কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের কাছ থেকে কী পরিমাণ ফি নির্ধারণ করা হবে, তা এ আইনে উল্লেখ আছে, যা সচরাচর মানা হয় না।
যেমন আইনে সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে বহুগুণ বেশী আদায় করা হচ্ছে। এ আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের বিধান লংঘন করা হলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
রোগীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই চিকিৎসক অনেক টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন। যদি ১০ প্রকার টেস্ট করানো হয়ে থাকে, তাহলে বেশির ভাগ টেস্টের ফলাফল থাকে নরমাল (স্বাভাবিক)। অর্থাৎ টেস্টে রোগীর কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এতে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয় যে, চিকিৎসকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে কেন তারা রোগীদের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন? জবাব খুব সহজ, যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র নিয়ে টেস্ট করানোর উদ্দেশে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপস্থিত হন তখন রোগীর কাছ থেকে টেস্টের ন্যায্য চার্জের দ্বিগুণ আদায় করা হয় এবং পরামর্শ প্রদানকারী চিকিৎসকের নাম-ঠিকানা নোট করে রাখা হয়। পরে রোগীর কাছ থেকে আদায়কৃত চার্জের ৪০-৫০ শতাংশ গোপনে চিকিৎসককে দিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকও নির্দ্বিধায় সে অর্থ গ্রহণ করেন। এটা কি রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়?
সরকার চিকিৎসকদের পরামর্শ দিলে বা সতর্ক করলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি পীড়িতাবস্থায় তাঁর আশ্রয়ের সর্বশেষ স্থল হিসেবে একজন চিকিৎসকের কাছে যান এই আশায় যে, তাঁর চিকিৎসক প্রাণনাশী রোগের আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্ভব সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁকে সারিয়ে তুলবেন এবং বাঁচিয়ে রাখবেন।
রোগী চিকিৎসকের ওপরে চূড়ান্ত আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেন, যা সর্বতোভাবেই নির্ভেজাল। একজন চিকিৎসককে রোগীর এই আস্থাকে গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা সেবাদানে ব্রতী হতে হবে।
রোগীর জীবন রক্ষার ও সেবাদানে চিকিৎসকের পবিত্র দায়িত্ব এবং এ দায়িত্বের পবিত্রতা রক্ষার দায়দায়িত্ব কেবল চিকিৎসককেই পালন করতে হবে কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে, অবহেলার মাধ্যমে নয়।
এছাড়া ডাক্তারদের চেম্বারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভিজিট নেবার পরও রোগীদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন অনেক রোগী। কিছু কিছু ব্যস্ত ডাক্তারগণ রোগীর সমস্যার কথা ভাল করে শোনার সময়ও পায়না।ইদানীং পট কোম্পানি বলে কিছু ভূঁইফোড় কোম্পানি বেরিয়েছে।
যারা ডাক্তারদের সাথে মাসোহারা চুক্তি করে মানহীন ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ট্যাবলেট লিখে থাকেন। এক পটের দাম দেড়শ থেকে তিনশত টাকা পর্যন্ত! এই মানহীন বেনামি কোম্পানির ঔষধ লিখে ডাক্তারগণ কিছু কামিয়ে নিলেও ভুক্তভোগি রোগী নিরবে প্রতারিত হয়। উচ্চ শিক্ষিত এই সব মানুষদের কাছে সমাজ যা কখনোই প্রত্যাশা করে না।
এছাড়াও নামী কোম্পানি গুলিও নানান অসাধু প্রতিযোগিতা করছে। তারা মেডিসিনের দাম বাড়াচ্ছে অযৌক্তিক হারে। সরকার নির্বিকার কেননা এইসব বড় কোম্পানিগুলিই রাজনৈতিক দলের ডোনার! এছাড়াও প্রতি বছর বাজেটে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে বরাদ্দ সরকার রাখে, তার অর্ধেকও জনগণের কল্যাণে ব্যায় হয় না।
সরকারী হাসপাতালের বেতন ভুক্ত ডাক্তারগণ নিয়মিত অফিসে আসেন না। আর সরকারী ঔষুধও ঠিক মত বন্টন করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী হাসপাতাল গুলির নানা অনিয়ম ও নাজুক অবস্থা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকা আর স্যাটেলাইট চ্যানেলে নিউজ হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন উন্নতি চোখে পড়েনি।
তবে এত কিছুর পরও সমাজে সব ডাক্তারই অর্থের পেছনে ছুটছে এটা বলা অন্যায়। অনেক ভাল মনের ডাক্তার রয়েছে যারা দুস্থদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। আবার অনেক ভালো চিকিৱসাকেন্দ্রও আছে যারা প্রকৃতই সেবা প্রদান করে থাকে। টাকা নয় তারা মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করেন। যারা রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে থাকেন।
আশা করছি প্রিয় ডাক্তাররা তাদের মহৎ হৃদয় নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন যে একজন রোগী যখন আপনাদের কাছে যায় তখন আপনাদের ওপরই ভরসা করে, এই অবস্থায় অসহায় মানুষ গুলোর প্রতি দয়া করে সদয় হোন।
চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাই, দেশে চিকিৎসাসেবার নামে যা চলছে তা কি চলতে দেয়া যায়?
লেখক: সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
20 Oct 2013 12:18:44 AM Sundayh
স্বাস্থ্য অধিকার
ডাক্তারের ফি ও প্রাসঙ্গিক কথা
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামানিক
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, যে রোগী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ৫০০ টাকা দিতে চান না, তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে উকিলের কাছে যান। আইনজীবীকে ফি দিতে গিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না।
আ ফ ম রুহুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল, ব্যক্তিগত রোগী দেখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না? উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে একটা কথা বলতে চাই। বড় বড় আইনজীবীদের সামনে তো ৫০ হাজারের আগে দাঁড়াতে পারবেন না। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ৫০০ টাকা দিতে সমস্যা হয়।
যে রোগী এই টাকা ফি দিতে চান না, তিনিই আবার উকিলের কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দরিদ্রদের জন্য সরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। যাঁর খরচ করতে অসুবিধা, তিনি সরকারি হাসপাতালে যেতে পারেন।
প্রভাবশালী, সম্পদশালীরা বাধ্য না হলে সরকারি হাসপাতালে আসে না। তারা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেন। এদেশের চিকিৎসাসেবায় তাদের আস্থা নেই। এ ছাড়া তাদের জন্য অত্যাধুনিক প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ইত্যাদি তো রয়েছেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক।
সরকারি অফিসে চলে তাদের শুধু হাজিরা, বাদবাকি প্রাইভেট প্রাকটিস, কে কত টাকা কামাতে পারে সে প্রতিযোগিতা চলছে বাণিজ্যিকভাবে। এর একমাত্র কারণ কোথাও জবাবদিহিতা নেই।
কাউকে কোথাও বদলি করলে রাজনৈতিক তদবির তো আছেই। ঘুরেফিরে বহাল তবিয়তেই থাকেন তারা। এত আরাম, অর্থ, বিত্ত, প্রভাব ডাক্তারদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। সঙ্গত কারণে অধঃস্তনরাও সুযোগ নেয়। তাদের অবহেলার কারণে দেশের বিশাল অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।কোনো রোগী তার রোগ নিরাময়ে বা কষ্ট লাঘবের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রথমেই তাকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ ফি প্রদান করতে হয়। দেশে সর্বোচ্চ আমলা একজন সচিবের মাসিক বেতন ৪০,০০০ টাকা হিসেবে দৈনিক এক হাজারের কিছু বেশী।
একই দেশে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার নিয়মিত চাকরির পর সন্ধ্যায় রোগী দেখে প্রতিদিন কমবেশি অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকা ফি আদায় করেন। এটা জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে ২০ জন রোগীর কাছ থেকে দৈনিক আদায়। অনেকে ২০ জনেরও বেশি রোগী দেখে থাকেন। বাংলাদেশে মানুষের যে আয় তাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ আয়ের পরিমান বিবেচনা করলেও জনপ্রতি রোগী থেকে ১০০ টাকার বেশি নেয়া অযৌক্তিক। চিকিৎসক তো মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নন।
অতিরিক্ত আয় যাদের জীবনের লক্ষ্য তাদের চিকিৎসা সেবা পেশায় না আসাই উচিত।
এছাড়া বাংলাদেশে দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিষ্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ নামে একটি আইন আছে। যাতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক স্থাপন ও পরিচালনায় সুষ্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত আছেন, এমন কোনো রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক অফিস চলাকালীন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এবং করলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
কিন্তু দেশের যত্রতত্র ক্লিনিক গড়ে উঠেছে এবং এর জন্য যথাযথ লাইসেন্স গ্রহণ করা হচ্ছে না। এসব ক্লিনিকে সংঘটিত অপরাধেরও বিচার হচ্ছে না। অপারেশনের ফিসসহ বিভিন্ন কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের কাছ থেকে কী পরিমাণ ফি নির্ধারণ করা হবে, তা এ আইনে উল্লেখ আছে, যা সচরাচর মানা হয় না।
যেমন আইনে সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে বহুগুণ বেশী আদায় করা হচ্ছে। এ আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের বিধান লংঘন করা হলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
রোগীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই চিকিৎসক অনেক টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন। যদি ১০ প্রকার টেস্ট করানো হয়ে থাকে, তাহলে বেশির ভাগ টেস্টের ফলাফল থাকে নরমাল (স্বাভাবিক)। অর্থাৎ টেস্টে রোগীর কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এতে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয় যে, চিকিৎসকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে কেন তারা রোগীদের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন? জবাব খুব সহজ, যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র নিয়ে টেস্ট করানোর উদ্দেশে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপস্থিত হন তখন রোগীর কাছ থেকে টেস্টের ন্যায্য চার্জের দ্বিগুণ আদায় করা হয় এবং পরামর্শ প্রদানকারী চিকিৎসকের নাম-ঠিকানা নোট করে রাখা হয়। পরে রোগীর কাছ থেকে আদায়কৃত চার্জের ৪০-৫০ শতাংশ গোপনে চিকিৎসককে দিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকও নির্দ্বিধায় সে অর্থ গ্রহণ করেন। এটা কি রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়?
সরকার চিকিৎসকদের পরামর্শ দিলে বা সতর্ক করলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি পীড়িতাবস্থায় তাঁর আশ্রয়ের সর্বশেষ স্থল হিসেবে একজন চিকিৎসকের কাছে যান এই আশায় যে, তাঁর চিকিৎসক প্রাণনাশী রোগের আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্ভব সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁকে সারিয়ে তুলবেন এবং বাঁচিয়ে রাখবেন।
রোগী চিকিৎসকের ওপরে চূড়ান্ত আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেন, যা সর্বতোভাবেই নির্ভেজাল। একজন চিকিৎসককে রোগীর এই আস্থাকে গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা সেবাদানে ব্রতী হতে হবে।
রোগীর জীবন রক্ষার ও সেবাদানে চিকিৎসকের পবিত্র দায়িত্ব এবং এ দায়িত্বের পবিত্রতা রক্ষার দায়দায়িত্ব কেবল চিকিৎসককেই পালন করতে হবে কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে, অবহেলার মাধ্যমে নয়।
এছাড়া ডাক্তারদের চেম্বারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভিজিট নেবার পরও রোগীদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন অনেক রোগী। কিছু কিছু ব্যস্ত ডাক্তারগণ রোগীর সমস্যার কথা ভাল করে শোনার সময়ও পায়না।ইদানীং পট কোম্পানি বলে কিছু ভূঁইফোড় কোম্পানি বেরিয়েছে।
যারা ডাক্তারদের সাথে মাসোহারা চুক্তি করে মানহীন ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ট্যাবলেট লিখে থাকেন। এক পটের দাম দেড়শ থেকে তিনশত টাকা পর্যন্ত! এই মানহীন বেনামি কোম্পানির ঔষধ লিখে ডাক্তারগণ কিছু কামিয়ে নিলেও ভুক্তভোগি রোগী নিরবে প্রতারিত হয়। উচ্চ শিক্ষিত এই সব মানুষদের কাছে সমাজ যা কখনোই প্রত্যাশা করে না।
এছাড়াও নামী কোম্পানি গুলিও নানান অসাধু প্রতিযোগিতা করছে। তারা মেডিসিনের দাম বাড়াচ্ছে অযৌক্তিক হারে। সরকার নির্বিকার কেননা এইসব বড় কোম্পানিগুলিই রাজনৈতিক দলের ডোনার! এছাড়াও প্রতি বছর বাজেটে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে বরাদ্দ সরকার রাখে, তার অর্ধেকও জনগণের কল্যাণে ব্যায় হয় না।
সরকারী হাসপাতালের বেতন ভুক্ত ডাক্তারগণ নিয়মিত অফিসে আসেন না। আর সরকারী ঔষুধও ঠিক মত বন্টন করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী হাসপাতাল গুলির নানা অনিয়ম ও নাজুক অবস্থা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকা আর স্যাটেলাইট চ্যানেলে নিউজ হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন উন্নতি চোখে পড়েনি।
তবে এত কিছুর পরও সমাজে সব ডাক্তারই অর্থের পেছনে ছুটছে এটা বলা অন্যায়। অনেক ভাল মনের ডাক্তার রয়েছে যারা দুস্থদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। আবার অনেক ভালো চিকিৱসাকেন্দ্রও আছে যারা প্রকৃতই সেবা প্রদান করে থাকে। টাকা নয় তারা মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করেন। যারা রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে থাকেন।
আশা করছি প্রিয় ডাক্তাররা তাদের মহৎ হৃদয় নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন যে একজন রোগী যখন আপনাদের কাছে যায় তখন আপনাদের ওপরই ভরসা করে, এই অবস্থায় অসহায় মানুষ গুলোর প্রতি দয়া করে সদয় হোন।
চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাই, দেশে চিকিৎসাসেবার নামে যা চলছে তা কি চলতে দেয়া যায়?
লেখক: সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
20 Oct 2013 12:18:44 AM Sunday