ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা কি আপনার বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে ? এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি পাঁচ জোড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তঃত একজোড়া দম্পতি নাক ডাকার সমস্যার কারণে রাত্রে বেলায় আলাদাভাবে ঘুমায়; শুধুমাত্র শান্তিতে ঘুমিয়ে রাতটা কাটানোর জন্য।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এক জরিপ চালানো হয় ১০০০ জন বিবাহিত নারী এবং পুরুষের উপর। এর ফলাফলে দেখা যায় শোবার ঘরে স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার পেছনে কতগুলো অতি পরিচিত কারণ রয়েছে-
>> ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা
>> বালিশ নিয়ে কাড়াকাড়ি
>> ঘুমের মধ্যে চলাফেরা করা অথবা কথা বলা
>> ঘুমের মধ্যে হাত অথবা পা এদিক সেদিক ছোড়াছুড়ি করা (জরিপে দেখা যায় দশ শতাংশ পুরুষ/নারীর ঘুমের মধ্যে ব্যথা পাবার অভিজ্ঞতা আছে সঙ্গী/সঙ্গিনীর ঘুমের মধ্যে হাত/পা ছোড়াছুড়ি করার কারণে)
জরিপে আরো দেখা যায় উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কারণে শতকরা সাত জন পুরুষ/নারী বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে সঙ্গি/সঙ্গিনীর সাথে রাতে ঘুমানোর সমস্যার কারণে। নাক ডাকা থেকে সৃষ্ট শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক সমস্যাগুলোকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। সেগুলো হচ্ছে- ঘুমিয়ে ওঠার পরেও ক্লান্তিবোধ করা, বদমেজাজি স্বভাব, কম কথা বলার প্রবণতা এবং সঙ্গি/সঙ্গিনীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের অবনতি। আলাদাভাবে ঘুমানোর কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্বটা বেড়ে যায় এবং অন্যান্য পারিবারিক সম্পর্কের অবনতিও পরিলক্ষিত হয়।
যেসব কারণে আমরা নাক ডাকি-
১| জন্মগত কারণে- জন্মগতভাবে কারো কারো গলার ভেতরের অংশ অন্যদের চেয়ে কিছুটা সরু থাকতে পারে যা নাক ডাকার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। এছাড়াও টনসিলের আকার বড় থাকা এবং অন্যান্য শারীরিক জন্মগত সমস্যার কারণে কেউ নাক ডাকতে পারে ঘুমের মধ্যে।
২| বয়স- বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের গলা সরু হতে শুরু করে। মাঝ বয়েসে পৌঁছবার পর থেকেই অনেকের মধ্যে নাক ডাকার উপসর্গ দেখা দেয়।
৩| পুরুষ হবার কারণে- পুরুষদের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা বেশি দেখা যায় নারীদের তুলনায়। এর কারণ কি কারো জানা আছে ? কারণটা হচ্ছে পুরুষদের গলার প্রস্থ মেয়েদের তুলনায় কম থাকে যার কারণে নাক ডাকার প্রবণতা পুরুষদের মধ্যে বেশি।
৪| এলার্জি, এজমা, ঠান্ডা লাগা, সাইনাসের সমস্যা- ঠান্ডা লাগা অথবা অন্যান্য কারণে নাক বন্ধ থাকার অভিজ্ঞতার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। যখন নাক বন্ধ থাকে তখন শ্বাস-প্রশ্বাসের যে সমস্যা হয় সেটার ব্যাপারেও নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই ঠান্ডা লাগলে অথবা উপরোক্ত কারণে কাউকে কাউকে নাক ডাকতে দেখা যেতে পারে ঘুমের মধ্যে।
নাক ডাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়-
# শরীরের ওজন কমানো অনেক সময় নাক ডাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে। যাদের ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার অভ্যাস রয়েছে অল্প থেকে মাঝামাঝি পর্যায়ের এবং যদি তাদের শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়ে থাকে তবে ডাক্তারেরা সর্বপ্রথম এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেন। শারীরিক ওজন বাড়ার সাথে সাথে আমাদের গলার পেছনের দিকের অংশে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে শুরু করে এবং এতে গলার ভেতরের প্রস্থ কমে যায়। যা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার কারণ হিসেবে কাজ করে। ওজন কমানো সম্ভব হলে এসব অতিরিক্ত চর্বি থেকে রেহাই পাওযা যাবে এবং সেই সাথে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকাও বন্ধ হবে।
# মদ্যপান, কতিপয় ঔষধপত্র এবং কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা গেলে নাক ডাকা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এলকোহল এবং কিছু কিছু ঔষধ আমাদের গলার এবং জিহ্বার মাংসপেশীগুলোকে শিথিল করে দেয় যার কারণে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একই ভাবে ঘুমের বড়ি অথবা ট্র্যাঙ্কুলাইজার গোত্রের ঔষধগুলো ঘুমের জন্য সহায়ক হলেও এগুলো ব্যবহারের কারণেও নাক ডাকার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব এসব এড়িয়ে চলাই ভাল। উচ্চ চর্বিযুক্ত দুধের তৈরি খাবার অথবা সয়া দুধে তৈরি খাবার গলার ভেতরে মিউকাস তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে যার কারণে এসব খাদ্যদ্রব্যও নাক ডাকার পেছনে ভূমিকা রাকতেই পারে।
# ধূমপানের কারণে সৃষ্ট নানান প্রকারের জটিলতার সাথে আমাদের মোটামুটি পরিচিতি আছে। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মাংসপেশীগুলো ঢিলে হয়ে পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি করে। যা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার কারণ হিসেবেও কাজ করে। তাই ধূমপান বন্ধ করা হতে পারে নাক ডাকা থেকে রেহাই পাবার একটি বড় উদ্যোগ।
# চিত হয়ে না ঘুমিয়ে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। জরিপে দেখা গেছে যে যাদের চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস আছে তাদের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা অনেক বেশি। তাই ডাক্তারেরা বলে থাকেন পুরোপুরি নাক ডাকার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে পাশ ফিরে শোবার অভ্যাস করুন।
# উপরোক্ত প্রতিকার গুলো চেষ্টা করার পরেও কারো কারো ক্ষেত্রে নাক ডাকার সমস্যা সমাধান নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৪