আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে হুক্কা টেনে ধূমপান করা সিগারেটের থেকে নিরাপদ; কারণ হুক্কার কার্যপ্রণালীতে যে পানির ব্যবহার করা হয় তা নাকি তামাকের বিষাক্ততা কমিয়ে দেয়। কিন্তু আসল ব্যপারটি মোটেই তা নয়। হুক্কায় ব্যবহৃত তামাক কখনোই কম বিষাক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে হুক্কা ব্যবহারকারীরা সিগারেট ব্যবহারকারীদের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণে ধোঁয়া টেনে নিচ্ছেন ফুসফুসে।
হুক্কা - যা নারঘিলে, শিশা এবং গজা নামেও কোন কোনও দেশে পরিচিত – প্রকৃতপক্ষে একটি পানির নল। কয়েকশত বছর ধরে মধ্যেপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হুক্কা ব্যবহৃত হয়ে আসছে ধূমপানের কাজে। সাম্প্রতিককালে কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে হুক্কার জনপ্রিয়তা বাড়ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে। হুক্কাপ্রীতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক এলাকায় হুক্কা ক্যাফে গড়ে উঠছে।
একটি হুক্কার সাজসজ্জাকে নিম্নোক্ত কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ-
## একটি ভিত্তি যার কিছু অংশ পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে
## একটি বাটি যার মধ্যে তামাক থাকে তাপ প্রয়োগের ব্যবস্থাসহ
## একটি নল যা বাটি ও ভিত্তির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, এই নলটি ভিত্তির ভেতরের পানির মধ্যে ডোবানো অবস্থায় থাকে।
## দ্বিতীয় আরেকটি নল প্রথম নলের মধ্যে বসানো থাকে যা পানির মধ্যে ডোবানো অবস্থায় থাকেনা, এই নলটি হুক্কার ধোঁয়া ভেতরে টেনে নেবার কাজ করে থাকে।
অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা কাজ করে যে হুক্কার মধ্যে ব্যবহৃত পানি তামাকের সকল বিষাক্ত উপাদানকে ছেঁকে ফেলে, যা সত্যি নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে একঘন্টা ধরে কোনও হুক্কা ব্যবহারকারী যে পরিমাণ ধোঁয়া টেনে নিচ্ছেন ভেতরে তা একজন সিগারেট ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত একটিমাত্র সিগারেট থেকে ১০০ থেকে ২০০ গুণ বেশি পরিমাণে ক্ষেত্রবিশেষে। হুক্কায় ব্যবহৃত তামাকের ধোঁয়া পানির মধ্যে দিয়ে চালনা করার পরেও এর মধ্যে উচ্চ পরিমাণে বিষাক্ত উপাদানগুলো বিদ্যমান থাকে। যাদের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড, কিছু ভারী লৌহ উপাদান এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে নিকোটিন থাকে ধোঁয়াতে যা ব্যবহারকারীর নেশার উদ্রেকের জন্য দায়ী।
হুক্কা সেবনের এই নতুন প্রচলনকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মারাত্মক ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হুক্কা ব্যবহারকারীদের মধ্যে যে ভুল ধারণা আছে তার অবসান ঘটাতে হবে। কারণ হুক্কার ব্যবহার সিগারেট ব্যবহারের মতই ক্ষতিকারক এবং ক্ষেত্রবিশেষে সিগারেটের চেয়েও অনেক বেশি মাত্রায় জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম।