অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। আজকে সবাইকে শোনাবো এক ভাগ্যবান রাজপুত্রের গল্প। অনেক অনেকদিন আগে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের রাজা রানীর মুখে হাসি এনে রাজপুত্রের জন্ম। জন্মের সময়ই জন্মদাত্রী রানীর বুঝে যাওয়া উচিত ছিল যে তার ছেলে সারাজীবনই তাকে জালিয়ে মারবে। নাহয় কি শুধু শুধু বাচ্চাটাকে নিয়ে পিজি হসপিটালে এক সপ্তাহ কাটানো লাগে? হসপিটালের আলো বাতাসে থাকতে থাকতে যখন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তখন রাজপুত্রকে নিয়ে রানী ঘরে ফিরলেন।
রাজ পরিবারের প্রথম সন্তান... স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে রাজপরিবারে হইচই লেগে গেলো। রাজপুত্রের মামা খালারা তাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো। কোল থেকে তাকে নামতেই দিতো না। রাজপুত্রের নানা ছিলেন এক গম্ভীর মানুষ। রাজপুত্রের ফুটফুটে মুখ দেখে সেই সদাগম্ভীর মুখেও হাসি ফুটলো। আর রাজপুত্রের দাদা ছিলেন একজন কৃষক। নিজের নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে সরল মানুষটি ফোকলা দাঁতে যে মিষ্টি হাসিটি দিতেন তা এখনও রাজপুত্রের মনে ভাসে।
রাজপুত্র বড় হতে থাকল। খুব আদরের ছেলে দেখেই হয়ত...কিন্তু স্কুলে একা সে থাকতেই পারত না। কেদেকেটে ভাসিয়ে দিত ও। তাকে নিয়ে ক্লাসে তার মা কিংবা নানুর বসে থাকা লাগতই লাগতো। কিন্তু এখনও মনে পরে, বছর শেষে রাজপুত্র প্লে গ্রপে ফার্স্ট হয়েছিলো। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলো এক প্যাকেট ক্যান্ডি। সেই ক্যান্ডি পেয়ে রাজপুত্রের খুশি দেখে কে! সেদিন সবাইকে বিলিয়ে বেরিয়েছিল ওই চকলেট। পরে আবার কড়ায় গণ্ডায় উশুল করে নিয়েছিল হয়ত


ছোট বেলার স্কুলজীবন খুব একটা ভাল কাটে নি রাজপুত্রের। টিচাররা আদর করত ঠিকই, কিন্তু শাসনও করত যেনও বড্ড বেশী। আর কিছু গার্ডিয়ানের বক বকানি, তাদের ছেলে কত বেশি বেশি করে পড়ে... শুনতে শুনতে তার কান ঝালাপালা হয়ে যেতো। ওইটুকু পিচ্চি বয়সে রাজপুত্র বুঝেছিল যে মহিলাগুলো অনেক বড় বড় চাপাবাজ, কিন্তু নিয়তির কি নিষ্ঠুর বিধান! এত সহজ কথাটি রানী বুঝতে পারল না! শুধু শুধুই রাজপুত্রকে বকা-ঝকা করতো।

প্রকৃতির নিয়মে রাজপুত্র বহাল তবিয়তে পাস করতে করতে বড় হতে থাকল। এককালের ভাল ছাত্র হয়ে গেল মোটামোটি শেষ রো এর ছাত্র। ভাল শান্ত ছেলেটি ক্লাসের সবচেয়ে ত্যাঁদড় ছেলেতে রূপান্তরিত হল। শেষ সারিতে রাজপুত্র খুঁজে পেল ভাইয়ের মত আপন কিছু বন্ধ বান্ধব। রাজপুত্র চঞ্চল ছিল ঠিকই, কোনো কোনো সময় আবার বীরত্ব জাহির করবার চেষ্টাও করতো মনে হয়। হাসিমুখে এক দুর্নীতিগ্রস্থ টিচারকে মুখের উপর বলে বসল "আপনি জঘন্য লেভেলের একজন স্যার।" বেয়াদবির জন্য যতটুকু শাস্তি হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি... হয়ত রাজপুত্রের মুখে সত্য কথা শুনার পর লোকটির মনে কিছু হলেও লাজ লজ্জা এসেছিলো। ক্লাস ৯-এ থাকতে রাজপুত্র ফেসবুক এর ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করল। কাল্পনিক এই দুনিয়া দেখে সাধারণ দশটি ছেলের মতন সেও দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো বললেও বেশি বলা হবে না। নারীর প্রতি এক মজার কৌতূহল তার জন্মালো। মার্ক জাকারবার্গ নামক দেবতাতুল্য মানুষটির কল্যাণে কিংবা অভিশাপে, যাই হক না কেন...কিভাবে কিভাবে জানি রাজপুত্রের কিছু বান্ধবীও জুটে গেল ।

বছর পার হতে তার এস এস সি পরীক্ষা শেষ হল। ফলাফল খারাপ হয়নি, কিন্তু ভাল ফলাফলের পাশাপাশি তার জীবনে ঘটে গেল কিছু মজার ঘটনা। ছোট্ট সেই রাজপুত্র যেন আসলেই বড় হওয়া শুরু করল। জীবনে প্রথমবারের মত প্রেমে পরল রাজপুত্র! পাঠক কি চিন্তা করছেন জানি না, কিন্তু আর আট দশটি সাধারণ রূপকথার গল্পের মতন এই প্রেম কাহিনী কোনো সুখ সমাপ্তি দেখেনি, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজপুত্রকে কিশোর প্রেমের বিরহে কাতর হতে দেখা গেল। আবার অন্য এক ঘটনায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে রাজপুত্র যেন এই গল্পের একটি ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টির ব্যার্থ চেষ্টাও করল।
নতুন কলেজে ভর্তি হল রাজপুত্র। অতীত ছেড়ে এখন আমরা প্রবেশ করছি বর্তমানে। বন্ধদেরকে ছেড়ে প্রথম প্রথম অনেক একা লাগতো। কিন্তু এইখানেও তার জুটে গেল কিছু বন্ধু। তাদের সাথে হইহুল্লোর করে কলেজও পার করে ফেলছে রাজপুত্র। রাজপুত্রের নিজেরই এখন মনে হয়, বড় হয়ে গিয়েছি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আজকে রাজপুত্রকে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। কতটা বদলিয়ে গিয়েছি! ১৯ বছর ধরে রূপকথার এই রাজ্যে বাস করছি! জীবনের ১৯টি বছর পার করে ২০তম বছরে পা দিলাম আজকে। "বিশ"তম বছরটি যেন "বিষ" না হয়ে যায় সেই আশায় বুক বাঁধি।রাজপুত্রের মত রাজকীয় জীবন হয়ত কাটাই নি, কিন্তু এই ক্ষুদ্র জীবনে যা পেয়েছি বাজি লেগে বলতে পারি অধিকাংশ রাজপুত্রও এমন জীবন কাঁটাতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতো।
পুনশ্চ -১ ঃ "রাজপুত্র" থিমটি অতনু রায় নামক এক ভাইয়ার লেখা থেকে চুরি করা। ভাইয়ার চোখে লেখাটি পরবে বলে মনে হয় না, কিন্তু যদি পড়ে ফেলেন তাইলে অনুমতি না নেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
পুনশ্চ -২ ঃ লেখালেখির অভ্যাস একদমই নেই, সুতরাং কেউ যদি সমালোচনা করতে চায় তবে আশা করবো ভাষা সংযত রেখে কথা বলবে।
পুনশ্চ ৩ঃ ধন্যবাদ জানাতে চাই এক আদরের ছোট বোনকে যে কিনা কষ্ট করে বাজে লেখাটি বারবার পরেছে এবং ধৈর্যের সাথে গঠনমূলক সমালোচনা করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪