বাংলাদেশ ,আজব একটা দেশ ।জাতি হিসেবে ও আজব ,অত্যন্ত হুজুগে ।যাই শুনবে তাই গোগ্রাসে গলধকরন করবে ।সাত পাঁচ কিছুই ভাবার দরকার নেই ,সত্য মিথ্যার পার্থক্য করার দরকার নেই ।চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে তার পিছনে হতোদ্যাম হয়ে ছুটবে ।সব বিষয়ে বাঙালী জাতির ক্ষেত্রে এটা লক্ষ করা যায় ।কি ধর্মীয় বিষয়ে ,কি সামাজিক বিষয়ে ,কি রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ।বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে তাদের উদাসিনতা ,সত্য মিথ্যা যাচাই না করার প্রবনতা ইর্ষনীয় ! আজ বাঙালী জাতি ঈদে মিলাদুন্নাবী পালন করছে ।ঈদে মিলাদুন্নাবীর স্রোতের তোরে ভেষে যাচ্ছে সমস্ত জাতি ।তারা এটা যাচাই করে দেখছে না যে এটা কতটা ইসলাম সম্মত ,ঈদে মিলাদুন্নাবীর ব্যাপারে ইসলাম কি বলে ।রাসুল সাঃ এর পবিত্র জন্মের মাস ও তারিখ নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে ।অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে তিনি রবীউস সানীতে জন্মগ্রহন করেছেন ।অনেকে রজব মাসের কথাও বলেন ।আবার কেউ কেউ সফর মাসে তাঁর জন্ম হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ।রমজান মাসের কথাও এক বর্ননায় পাওয়া যায় ।এখন যদি সব মতভেদকে বাদ দিয়ে মেনে ও নেয়া হয় যে তিনি রবীউল আউয়ালেই জন্মগ্রহন করেছেন তবুও আরেক বিতর্ক থকে যায় তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে ।কেউ বলছেন রবীউল আউয়াল মাসের ৩ তারিখে।কেউ বলেছেন ৯ কেউ বলেছেন ১১ কেউ বলেছেন ১২ কেউ বলেছেন ১৮ কেউ বলেছেন ২২ ।তবে মিশরের এক যোর্তীবিজ্ঞানী গবষনা করে বের করেছেন ৯ রবীউল আউয়ালই হল রাসুলের সঠিক জন্মতারিখ ।কিন্তু রাসুলের মৃত্যু দিবস যে ১২ রবীউল আউয়াল এ নিয়ে ঐতিহাসিক ও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ নেই ।সেই হিসেবে এ মাস ,এ দিন মুসলমানদের জন্য ভীষন শোকের মাস ,একটি কঠিন কষ্টের দিন ।কিন্তু এখন কেউ যদি রাসুল সাঃ এর মৃত্যু দিবস ১২ই রবীউল আউয়ালে আনন্দ র্যালি বের করে ,মিছিল মিটিং করে , আনন্দ উত্সব করে তাহলে এটা রাসুলের শানে চরম বেয়দবী হবে কিনা ,তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে কিনা ? যারা আশেকে রাসুলের দাবিদার ,যারা মনে করে আজ মিছিল মিটিং করে ,রাসুলের জন্ম উদযাপন করে সব কিছু উদ্ধার করে ফেলেছে ,রাসুলের আদর্শ বাস্তবায়নের কোন দরকার নেই তাদের কাছে আজ আমার প্রশ্ন রাসুলের প্রতি এহেন ধৃষ্টতা প্রদর্শনের পরিনতি কি হবে ?শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবস ১৫ আগষ্ট এ যখন খালেদাজিয়া জন্ম দিন পালন করে তখন আওয়ামিলীগের কেমন কষ্টের অনুভূতি হয় ?তাহলে ১২ই রবীউল আউলে রাসুলের ওফাতের কারনে ব্যথিত হয়ে তার আদর্শকে জীবনে বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞার পরিবর্তে যারা তাঁর মৃত্যু দিবসে সুখের গন্ধ খোজেঁ ,জসনে জুলুশ ,আনন্দ র্যালি বের করে তারা কি আদৌ আশেকে রাসুলের যোগ্য ,নাকি রাসুল ও ইসলামের দুশমন তা আজ ভেবে দেখার বিষয় ।দ্বিতীয়তঃ এসমস্ত কর্মকান্ড ইসলাম সমর্থন করে কিনা ,এসব রাসুলের যামানায় হয়েছে কিনা ,ছাহাবাদের যমানায় অথবা তাবেঈন ,তাবে তাবেঈনদের যমানায় হয়েছে কিনা । যদি এসব তারা করে থাকেন তাহলে আমাদের করতে কোন বাধা নেই ।কিন্তু তারা এধরনের কাজকারবার করেছেন ,জসনে জুলুশ করেছেন এমন কোন প্রমান কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয় ।সাহাবায়েকেরাম ,তাবেঈন ,তাবে তাবেঈন নিশ্চয় বর্তমান যমানার আশেকে রাসুল দাবিদার ,জসনে জুলুশ পালনকারীদের থেকে রাসুল সাঃ কে কম ভালবাসতেননা ।যেহেতু তারা করেননি সুতরাং এর দারা প্রমানিত হয় এসব কর্মকান্ড ধর্মে নতুন আবিস্কৃত ,বিদয়াত ।এসব কর্মকান্ডের হোতাদের জন্য ভয়াবহ আজাব অপেক্ষা করছে । তৃতীয়তঃ জন্মদিন পালন ।যদি ধরেও নেয়া যায় যে ১২ রবীউল আউয়াল রাসুল সাঃ এর জন্মদিন ।তাই বলে জন্মদিন পালন করা কি ইসলাম সমর্থন করে ?এটা কি হারাম নয় ?আর এই হারাম কাজ যদি হয় রাসুলের শানে যিনি সমস্ত হারাম কে ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন ।তাহলে এটা রাসুলের সাথে কেমন বেয়াদবী হবে তা আপনারা ভেবে দেখেন ।পরিশেষে বলতে চাই সাধারন ধর্মপ্রান মুসলমানদের ধর্মীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটি মহল এটাকে খুবই নেকির কাজ বলে প্রচারনা চালিয়ে সমাজে বিদআতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে ।কোরআন বা হাদিসে যার ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না ।বিশেষ করে হাদিসে যে যুগকে খাইরুল কুরুন বা সর্বোত্তম যুগ বলা হয়েছে সেই তিন যুগে এর কোন অস্তিত্বই ছিলনা ।বরং বহু পরে ৬০৪ হিজরীতে আবিস্কৃত হয়েছে ।বাদশাহ আবু সাঈদ মুযাফফর ও আবুল খাত্তাব ইয়াহইয়া এর উদ্ভাবক ছিলেন ।সকল ঐতিহাসিক একে ফাসিক ও মিথ্যাশ্রয়ী বলে উল্লেখ করেছেন ।মোদ্দাকথা মুসলমানদের উচিত এসব ভিত্তিহীন কাজ পরিহার করে ছহীহ হাদিহ দ্বারা যতটুকু প্রমানিত হয় ততটুকু আমল করা , এটাই দ্বীন । কাজেই রবীউল আউয়াল মাসেই শুধু নয় ,বরং সারা বছর নবী আদর্শকে তার সীরাত কে জীবনের প্রতিটা পরতে পরতে বাস্তবায়ন করতে হবে ।এর নামই আসল নবীপ্রেম ।নতুবা সারা বছর নামায পড়লাম না, রোযা রাখলাম না ,নবী আদর্শের লেশমাত্রও জীবনে বাস্তবায়ন করলামনা ।আর ১২ই রবীউল আউয়াল এলেই বিরাট বড় এক মিছিল বের করে জসনে জুলুশ করে নবীর ভক্ত সেজে গেলাম ,এর চেয়ে আহমকী আর কি হতে পারে ।কবীর ভাষায় -রবীউল আউয়াল এলে তোমার গুনগাই ,রবীউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই ।