আমি এখন ঢাকার পথে ।দেশে এসেছিলাম ঈদ করতে ।অনেক দিন পর । দশবারো দিন থাকা হল ।এই দশ বারো দিনের একেকটা দিনকে আমি তুলনা করতে চাই শৈশবের একেকটা দিনের সাথে ।স্বপ্নময় কয়েকটা দিন কাটালাম ।আহ !জীবনের প্রতিটা দিন যদি এমন হত ।কত উচ্ছল আনন্দ ।প্রতি সন্ধায় বাড়ির উঠোনে মাদুর বিছিয়ে চলত জম্পেশ আড্ডা ।চলত স্বৃতির রোমন্হন ।মন চলে যেত শৈশবে ।সন্ধে হলেই দাদুর কাছে গন্প শোনার বায়না ধরা ।দাদুর হিরামন তোতাপাখি ,মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা ।এখনতো দাদু নেই ,তবে তার স্বৃতির ভাস্বর হয়ে দাড়িয়ে আছে পুরোনো সেই বাড়িটি ,যেখানে কেটেছে আমার শৈশবের কত কত দিন ।মনে পড়ে , গংগাবাড়ির ধারে যে চর পড়ত ,কাজলদের সাথে চলে যেতাম গোসল করতে ।বিকেলে ছুটে যেতাম নদীর ধারে ।বসতাম নদীর কিনার ঘেঁষে ।দেখতাম নদীর ভাঙাগড়ার খেলা ।নদীর ছলাত ছলাত ঢেউতোলা শব্দ কিযে ভাল লাগত ।এবার অনেক দিন পর নদীর কিনার ঘেঁষে হেটেছি ,অনেক দিন পর ।আমি একা ছিলাম না ।আমার সাথে আকাশ ছিল ।মেঘেরাও ছিল দলবেধে ।শেষ বিকেলে পাখিরাও সেদিন নীড়ে ফেরেনি ।অনেকদিন পর দেখেছি কাশফুলের বাতাসের সাথে কথাবলা ।প্রজাপতির আলতো করে ছুঁয়ে যাওয়া ।ওদের ছিল দির্ঘদিনের না দেখার বিরহ ।কিন্তু আমার পাশান রিদয় ওদের বিরহ অনুভব করতে পারেনি ।তাই ওদের আবারো ছেড়ে এসেছে দির্ঘ বিরহের বেড়াজালে ।আজ জেতে জেতে এসব কথা ভাবছি ।আর চরম অস্বস্হিবোধ করছি এই ভেবে যে ,কাল থেকেই আমাকে ঢুকে পরতে হবে যান্ত্রিক জীবনে ।ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে কংক্রিটের জংগলে ।আবার সেই থমকে যাওয়া জীবন ।দির্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোন উপায় নেই ।তবে এই ভেবে নিজেকে সান্তনা দেই ,কত মানুষই তো রুটি রুযির আশায় সাতসমুদ্র তের নদী পারি দিয়ে বিদেশ বিভুইয়ে যায় ।আমি নাহয় ঢাকা পর্যন্তই এলাম ।এই ব্যস্ত জীবনেও ওই আটদশদিনের স্বৃতিটুকুই হয়তো ক্ষনে ক্ষনে শান্তির পরশ বুলিয়ে যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৫৩