ইদানিং মন খুব খারাপ থাকে। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। আমার মাথাটা জাগতিক সব ভাবনা আর যন্ত্রনায় ভরে আছে। কিচ্ছু ভাল লাগে না আর। পড়া শুনার চাপ, কাজের চাপ, নিজের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের চাপ……..। আমার চারপাশে আমি সর্ষে ফুল দেখছি। দুশ্চিন্তা আর বহুবিধ চাপ আমার জীবন বিষিয়ে তুলেছে। ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যাই। হারিয়ে যাই অনেক দূরে কোথাও। যেখানে কেউ আমাকে চিনবে না, জানবে না। অবিরাম প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে না। যেখানে আমি কিছুটা শান্তি পাবো, নিজেকে কিছুটা সময় দিতে পারবো। সেখানে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে................।
খুব মনে পরে ছোট বেলার কথা। যখন খুব ছোট ছিলাম তখনকার কথা। এখন নিজের কাছেই অবাক লাগে আমার। কত ছোট ছিলাম আমি ঐ সময়! কতটা অবাস্তব আর বোকা ছিলাম আমি। খুব চিন্তা করতাম বড় হয়ে কি হবো তা নিয়ে। দৈনিক কতশত পরিকল্পনা করতাম। কত স্বপ্ন দেখতাম। আমার স্বপ্নগুলো ছিল সবাইকে নিয়ে। চাইতাম আমার স্বপ্নগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। সব সাদা কালোকে আমার স্বপ্নের রঙ্গে রাঙিয়ে দিতে চাইতাম। বোধহয় আমি ভুলই চাইতাম। যাদের নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনি তারাই কেটে দিচ্ছে সেই জাল। শেষ করে দিচ্ছে সব কিছু। যতই বড় হচ্ছি ততই আমার স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমার থেকে শক্তিমান কেউ এসে আমার রঙিন রাজ্য সাদাকালো করে দিচ্ছে অবিরাম। আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখছি। এই নষ্ট সমাজ ব্যবস্থা আমাকে প্রতিবাদ করতে দিচ্ছেনা। বাধা দিতে দিচ্ছেনা। নিজের বানানো স্বপ্নগুলো একে একে গুরো গুরো হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। ধূলিকণার মতো হারিয়ে যাচ্ছে আকাশে বাতাসে। আমার প্রতিটা রক্ত কণা প্রতিবাদে ফেটে পরতে চাচ্ছে কিন্তু অদৃশ্য কোনো দেয়ালে বারবার বাধা প্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসছে অসহায়ের মতো। হায় কতই না অসহায় আমি!!!
এই বদ্ধ ইট কংক্রিটের নগরীতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। চার দেয়ালের ভিতর আবদ্ধ থাকতে থাকতে আমার সোনালী স্বপ্ন গুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে। ধূসর হয়ে যাচ্ছে রঙিন চিন্তা গুলো। এক সময়কার হাসিখুশি আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি এই নোংরা শহরের নোংরা বাস্তবতার খেলায়। ছিন্নমূল মানুষের মত আমি শুধুই স্থান পরিবর্তন করছি। স্থির হতে পারছিনা কোথাও। শান্তিতে একটু নিশ্বাস নিতে পারছিনা। একসময় অপূর্ব লাগা এই বসুন্ধরাকে আজ আমার বড় স্বার্থপর মনে হচ্ছে। নিষ্প্রাণ আর ধূসর মনে হচ্ছে…………।
আমার এখন চলে যাতে ইচ্ছা করে গহীন অরণ্যের মাঝে। ইচ্ছে করে ঐ উত্তাল নীল সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ জলরাশির মাঝে বিলীন হয়ে যেতে। পাহাড়ি কোনো ঝরনায় পা ডুবিয়ে চুপটি করে বসে থাকতে খুব ইচ্ছে করে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঐ দূর আকাশে, শত শত পাখির মাঝে। শিশির সিক্ত সকালে পুবাকাশে সোনালী সূর্যোদয় দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি পারিনা………। কোথা থেকে যেন অদৃশ্য একটা শিকল দিয়ে আমাকে বেধে ফেলা হয়েছে…………………।
অনেক দিন হলো এই দুচোখে বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু বর্ষিত হয়না। অব্যক্ত যন্ত্রণা গুলো জমাট বেধে পাথর হয়ে গেছে। ওগুলো থেকে আর কখনো বোধহয় অশ্রুপাত হবেনা। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে – আমি আর একটা সুযোগ চাই। মাত্র একটা সুযোগ চাই সব ভুল গুলোকে ঠিক করবার জন্য। সব অপবিত্রতাকে পবিত্র করার জন্য। নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। শুন্য থেকে সবকিছু শুরু করবার জন্য। অথবা এই ধরণীতে ফেলে যাওয়া আমার পদচিহ্ন গুলো মুছে ফেলার জন্য………………।
এখন খুব ইচ্ছে করে সবার অগোচরে কোথাও হারিয়ে যেতে। প্রিয় স্মৃতিগুলো সাথে নিয়ে এমন কোথাও হারিয়ে যেতে যেখানে থাকবে না কোনো হতাশা আর ব্যর্থতা। কখনো ফিরে আসতে হবেনা এই ধরনীতে। সাথে থাকবে কেবলই মধুর কিছু স্মৃতি আর ফেলে যাওয়া জীবনের আনন্দময় অনুভূতিগুলো………………………।
( অনুভূতিগুলো ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তবুও অবিরাম চেষ্টা থাকে। লেখাটা সিরিয়াসলি নেয়া উচিত হবেনা। কিছু দুঃখ নাহয় আমারই থাক আর সুখ গুলো ছড়িয়ে পরুক পৃথিবীময়। ভাল থাকবেন সবাই। )
কপিরাইট: বৃষ্টিবালক ( http://bristibalok.co.cc )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:২৫